আমি এটা দেখে ছাড়ব : প্রধানমন্ত্রী আশুলিয়ার শ্রমিক অসন্তোষ মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ
আনিসুর রহমান তপন : গামেন্ট শ্রমিকদের উসকানিদাতাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যারা পেছন থেকে এই সেক্টরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকের অনিয়মিত আলোচনা চলার সময়ে এই নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার একাধিক সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মন্ত্রী জানান, বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সপ্তাহখানেক ধরে আশুলিয়ার বিভিন্ন গার্মেন্ট শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছে। এ সূত্র ধরে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু গর্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করেন মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে। প্রধানমন্ত্রী তখন তিরস্কারের সুরে প্রতিমন্ত্রীকে বলেন, তা হলে তুমিই শ্রমিকদের উসকানি দিচ্ছ। আমাকে বুঝতে হবে তুমি উসকানিদাতা কী না। এখন মনে হচ্ছে তুমি অথবা তোমার মন্ত্রণালয় থেকে কেউ উসকানি দিচ্ছে। অথবা বাইরের কেউ উসকানি দিচ্ছে। যেই হোক উসকানিদাতাদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনার পেছনে যারাই আছে তাদের কাউকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। শ্রমিক আন্দোলনের নামে এমন বিশৃঙ্খলা এমনি এমনি হচ্ছে নাকিÑ প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এটা দেখে ছাড়ব।
দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি শ্রম ও কর্মস্থান প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। এসময় প্রতিমন্ত্রী তাদের বলেন, শ্রমিকরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। গার্মেন্ট কারখানার উৎপাদন কমছে। এখন এসব শ্রমিককে কাজে ফিরিয়ে নিতে মহার্ঘ্য ভাতা বা বোনাস জাতীয় কিছু একটা দেওয়ার ঘোষণা দেন।
বিষয়টি মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচিত হলে তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন? মাত্র তিন বছর আগে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। ২০১০ সালে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি মাত্র ১৬০০ টাকা ছিল। আমি সেটা বাড়িয়ে তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছি। এরপর ২০১৩ সালে আবার শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। সেসময় তিন হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করে দিয়েছি পাঁচ হাজার তিনশ টাকা। আর শ্রমিকদের যখন বেতন বাড়ানো হয়েছে তখন সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো হয়নি। শ্রমিকদের দুই দফা বেতন বাড়ানোর পর সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ওয়েজ বোর্ড ঘোষণার অন্তত পাঁচ বছরের মধ্যে বেতন বাড়ানোর কোনো সুযোগ থাকে না। তবে এক বছরের মধ্যে হলে রিভিউ করার একটা সুযোগ থাকে। কবে তাদের বেতন বাড়ানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের পর দুই দফা বেতন বাড়ানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে সপ্তাহখানেক ধরে আশুলিয়ার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করছে। তারা কারখানায় হাজিরা দিয়েই বাইরে এসে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে। সম্পাদনা : হসিবুল ফারুক চৌধুরী