নাসিক নির্বাচনের ব্যালট পেপার পৌঁছেছে, মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫ হাজার ৬০০ সদস্য, আইভীকে জাতীয় পার্টির সমর্থন বিজিবি মোতায়েন, বহিরাগতদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ, শক্ত অবস্থানে ইসি
হাসান আরিফ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনে গতকাল থেকে বিজিবি নামানো হয়েছে। ইতোমধ্যেই ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনি সামগ্রী নারায়ণগঞ্জে পৌঁছেছে। এদিকে নির্বাচন উপলক্ষে আজ মধ্যরাতের মধ্যে বহিরাগতদের সিটি এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের ৯০ ঘণ্টা আগে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সমর্থন দিল জাতীয় পার্টি। আজই শেষ প্রচারণা করবেন প্রার্থীরা।
সিটি এলাকার ২৭টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮১টি টিম কাজ শুরু করেছে। প্রতি ওয়ার্ডে তিনটি টিমের সদস্য সংখ্যা হচ্ছে ৩৬ জন। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩৭টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নজরদারি রাখার উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন।
মেজর মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ সিটি এলাকায় মোতায়েন করা বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় রাখতে ২৭টি ওয়ার্ডে ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছে। গতকাল দুপুরেই বিজি প্রেস থেকে সিটি নির্বাচনের ব্যালট পেপার পৌঁছেছে। একই সঙ্গে নির্বাচন সংক্রান্ত অন্যান্য সামগ্রীও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে চলে এসেছে।
সিটি নির্বাচনে ১৩৭টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে বিশেষ নজর রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামানো হয়েছে ২২ প্লাটুন বিজিবিসহ ৮টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। বিজিবি নির্বাচনের পরের দিন ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত শহরে অবস্থান করবে।
বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বরাবরই নির্বাচনে সেনাবাহিনী চেয়ে আসছেন। আর সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হলে তবে আপত্তি নেই বলেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেছেন, সুষ্ঠুভাবে ভোটের আয়োজনে পুরো নগরী নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫ হাজার ৬০০ সদস্য মাঠে থাকবে। ১৩৭টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বলে গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে। নগরীর ১৭৪টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৪ জন করে সদস্য থাকবেন। তবে ১৩৭টি ভোটকেন্দ্রে বিশেষ নজর রাখা হবে। রিটার্নিং অফিসার আরও বলেন, প্রতি কেন্দ্রে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য থাকবে। আজ থেকে র্যাবের ২৭টি মোবাইল টিম মাঠে কাজ করছে। প্রতিটি দলে রয়েছে ১২ জন করে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পুলিশের তিনটি করে মোট ৮১টি টিম টহলে থাকবে। প্রতিটি টিমের সদস্য সংখ্যা হবে ১২ জন।
নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, যেকোনো অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নিতে বলা হয়েছে। তিনি জানান, ভোটের আগে ৩২ ঘণ্টা সব ধরনের মিছিল, জনসভাসহ প্রচার নিষিদ্ধ থাকবে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বহিরাগতদের সিটি এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা জারি করেছেন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ১৯ তারিখ রাত ১২টার মধ্যে নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে বহিরাগতদের এলাকা ছাড়তে হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসন গতকাল থেকে পরবর্তী সাত দিনের জন্য (১৯ থেকে ২৫ ডিসেম্বর) বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
আসাদুজ্জামান আরও জানান, আজ দিবাগত রাত ১২টা থেকে (ভোট শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে) ২৪ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত (ভোটের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা) সব ধরনের জনসভা, মিছিল, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া আজ রাত ১২টা থেকে আগামী ২২ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল এবং ২১ ডিসেম্বর (বুধবার) রাত ১২টা থেকে ট্যাক্সি, মাইক্রোবাস, বাস, টেম্পো, কার, পিক-আপ, জিপ, ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তবে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত যানবাহন ও জরুরি কাজে যান চলাচলের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সাল চিশতি, মীর আবদুর সবুর আসুদ, হাজি সাইফউদ্দিন আহমেদ মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম নুরু, আলমগীর শিকদার লোটন, যুগ্ম মহাসচিব সফিকুল ইসলাম সফিক, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জসিমউদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেছেন, আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনে সবাই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শক্ত অবস্থান দেখবে। অভিজ্ঞতার ভা-ার উজাড় করে একটা সুন্দর নির্বাচন করবেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের নিজ কার্যালয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ যদি কোনো গোলমাল করার চেষ্টা করে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সবাই দেখবে নির্বাচনটায় আমরা শক্ত অবস্থান নিয়েছি।
নির্বাচন কমিশনার জানান, মানুষের মনে শঙ্কা আসতেই পারে। তবে কমিশন সার্বিকভাবে ভালো নির্বাচনের জন্য যত ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার সব ব্যবস্থাই নেবে। গতবারও অনেক শঙ্কা করা হয়েছিল, কিন্তু আদৌ সে রকম কিছু ঘটেনি। এবারও আলাদা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সবার জন্যে নির্বিঘœ পরিবেশ নিশ্চিত করছি আমরা।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ২২ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। ২৭টি ওয়ার্ডে ১৭৪টি কেন্দ্র, ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩০৪টি। মেয়র পদের ৬ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৫৬ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের ৩৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম