দীপ্ত টিভির লাইসেন্স বাতিল দাবি টিভি শিল্পী কলাকুশলীদের
এস.ইসলাম জয়: টেলিভিশন শিল্পীদের সংগঠন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনাল অর্গানাইজেশন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সুলতান সুলেমান বন্ধের দাবি জানিয়েছে। অন্যথায় সরকারের কাছে অবিলম্বে চ্যানেলটির লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানানো হবে । গতকাল সোমবার রাজধানী তেজগাঁওয়ে দীপ্ত টিভির সামনে সুলতান সুলেমানসহ বিদেশি ডাবিংকৃত সিরিয়াল বন্ধের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন টিভি শিল্পী-কলাকুশলীদের সম্মিলিত প্লাটফর্ম ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনাল অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)।
এই সংগঠনটির আন্দোলনের মুখে এরই মধ্যে বিদেশি সিরিয়াল প্রচার বন্ধ করেছে দেশের বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল। কিন্তু এখনো চারটি চ্যানেলে দেখানো হচ্ছে বিদেশি সিরিয়াল। ডাবিংকৃত বিদেশি সিরিয়াল প্রচারের প্রতিবাদে এই চার চ্যানেলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেছে টিভি শিল্পী-কলাকুশলীরা। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ১৯ ডিসেম্বর দীপ্ত টেলিভিশনের সামনে অবস্থান নেন টিভি শিল্পীরা। এরপর ২০ ডিসেম্বর একুশে টিভির সামনে অবস্থান, ২৮ ডিসেম্বর এসএ টিভির সামনে অবস্থান ও ২৯ ডিসেম্বর মাছরাঙা টিভির সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে তারা।
সংগঠনটির আহ্বায়ক মামুনুর রশিদ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচারে তুরস্ক অসন্তোষ প্রকাশ করে। অথচ সেই দেশের সিরিয়াল আমাদের দেশে প্রচার হচ্ছে। এটি বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি, তুরস্কের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক থাকা উচিৎ নয়। সকল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ দেশীয় সংস্কৃতি বাঁচাতে এই আন্দোলনে সমর্থন যোগাবে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দীপ্ত টিভিতে বিদেশি সিরিয়াল প্রচার বন্ধ না হলে কেবল মালিকদের অনুরোধ করবো তারা যেন দীপ্ত টিভির প্রচার বন্ধ করে দেয়। দেশীয় সংস্কৃতির সুরক্ষার জন্যই আমরা আন্দোলনে নেমেছি। আমরা অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের বলতে এসেছি অবিলম্বে বিদেশি সিরিয়াল প্রচার বন্ধ করুন নয়তো আরও কঠোর আন্দোলনে যাব। আশা করি দীপ্ত টিভির শুভবুদ্ধির উদয় হবে। বাংলাদেশের সংস্কৃতি ধ্বংস করছে এমন কোনো সিরিয়াল এদেশের টিভি চ্যানেলে প্রচার করা যাবে না।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমাদের স্বপ্ন ছিলো স্বাধীন দেশে আমাদের সংস্কৃতি, ভাষা সুরক্ষিত থাকবে। টিভি চ্যানেল মানুষের সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় ভূমিকা রাখবে। কিন্তু এখন আমরা দেখছি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ভিনদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের সংস্কৃতিকে বিপন্ন করা হচ্ছে। নিজেদের সংস্কৃতি ধ্বংস করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে কোনো অনুষ্ঠান যেন প্রচার করতে না পারে তার জন্য আইন প্রণয়ন করা হোক। যতটুকু জেনেছি বিদেশি শিল্পী-নির্মাতা-কলাকুশলীদের এখানে টুরিস্ট ভিসায় এনে কাজ করানো হচ্ছে। অথচ আমাদের রুনা লায়লা একবার ভারতে টুরিস্ট ভিসায় গিয়ে একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন। পরে তাকে হোটেলে এসে পুলিশ গ্রেফতার করেছিলো। পরে ট্যাক্স দিয়ে তাকে আসতে হয়েছে। রুনা লায়লার মতো শিল্পীকেও ভারতে ট্যাক্স দিয়ে অনুষ্ঠান করতে হয়েছে। অথচ ভারতের শিল্পীরা টুরিস্ট ভিসায় এসে দিনের পর দিন আমাদের দেশে অনুষ্ঠান করছেন। ভারতে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল দেখানো হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে ভারতের অনেকগুলো চ্যানেল দেখানো হয়। এই অসমতা বন্ধ করা হোক। সমতার ভিত্তিতে সাংস্কৃতিক বিনিময় হোক।
এফটিপিও’র সদস্য সচিব গাজী রাকায়েত বলেন, যে চ্যানেল বিজয় দিবসে বাংলাদেশি সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এমন অনুষ্ঠান প্রচার করে সেই চ্যানেলের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া উচিৎ। এরা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের চ্যানেল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের উচিৎ দীপ্ত টিভি বন্ধ করে দেওয়া। আজকে দেশের গুণী ব্যক্তিত্বরা এই চ্যানেলটির সামনে দাঁড়িয়েছে। দীপ্ত টিভির উচিৎ ছিলো আজকে এখানে এসে আমাদের এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করা। তারা সেটা করেনি। এরা বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী, এরা নব্য রাজাকার। এদের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে।
অবস্থান কর্মসুচিতে বক্তব্য রাখেন, প্রবীণ অভিনেতা আমিরুল হক চৌধুরী, কে এস ফিরোজ,মাসুম রেজা,এস এ হক অলিক,নাদের চৌধুরী, মাহফুজ আহমেদ, চয়নিকা চৌধুরী,জাকিয়া বারী মম,নওশিন,তুষ্টি,আনজাম মাসুদ প্রমুখ।