রাষ্ট্রপতির সংলাপে জাপার ৫ দফা প্রস্তাব নির্বাচন কমিশন গঠনে এ সংসদেই আইন চায় জাপা
দেলওয়ার হোসাইন: চলমান দশম জাতীয় সংসদেই নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আইন প্রণয়নসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির সংলাপে তুলে ধরেছে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। নতুন ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের দ্বিতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গভবনের দরবার হলে সোয়া এক ঘণ্টার এই আলোচনায় জাতীয় পার্টির ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।
আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপ্রধান জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান এবং নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আমন্ত্রণে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনে একটা রূপরেখা বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আশা করছেন। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেবে নতুন ইসি। ওই কমিশনের অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। ওই কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে সংলাপে জাতীয় পার্টির প থেকে পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ। প্রস্তাবগুলো হলো- ১. নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখা। ২. সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন নিয়োগসংক্রান্ত একটি আইনি কাঠামো প্রণয়ন। ৩. নির্বাচন কমিশনের জন্য আলাদা সচিবালয় গঠন। ৪. বর্তমান সংসদেই আইন পাস করা। ৫. নির্বাচন কমিশনারদের ন্যূনতম ও সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারণ, নিরপেতা, ব্যক্তিগত একাগ্রতা ও সততা, অন্য অফিসে নিয়োগে বিধি-নিষেধ, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়জ্ঞান, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় না থাকা নিশ্চিত করা।
মঙ্গলবার বিকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মনোরম পরিবেশে খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এবং জাপার চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বিপীয় যে আলোচনা হয়েছে, তাতে আমরা আশাবাদী যে দেশে চলমান রাজনীতি ও জাতীয় নির্বাচনে অবশ্যই এর প্রভাব ফেলবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে আস্থাহীনতা ও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তা মুছে ফেলার পথ উন্মোচিত হবে। রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আশা করি, সবার সঙ্গে আলোচনার পর রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে পারবেন। এর মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
ব্রিফিংয়ে জাতীয় পার্টির প থেকে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া লিখিত প্রস্তাবের কপি সাংবাদিকদের দেওয়া হয়। তাতে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের উল্লেখ করে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করতে হলে তার নিজস্ব বাজেট থাকতে হবে এবং কমিশনের অর্থ ব্যয়-সংক্রান্ত নিজস্ব মতা থাকতে হবে। কমিশনের সচিবালয় সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীন থাকতে হবে। অর্থাৎ কমিশনের সব লোকবল কমিশনই নিয়োগ করবে। এ ছাড়া বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করে ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদে আসন বণ্টনের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় পার্টি। রাষ্ট্রপতির কাছে আপনাদের চাওয়া কতটা পূর্ণ হবে বলে আশা করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জাপার কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, আমরা আশাবাদী। মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেছেন, তিনি সংলাপ শুরু করেছেন। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে তার বিবেচনামতো ব্যবস্থা নেবেন এবং দরকার হলে আমাদের সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসবেন। সার্চ কমিটির জন্য জাপা রাষ্ট্রপতিকে কোনো নাম দিয়েছে কি না, জানতে চাইলে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, তারা কোনো নাম দেননি। তবে রাষ্ট্রপতি চাইলে দেবেন।