ন্যূনতম ১৫ হাজার টাকা বেতন ও ১৬ দফা দাবি আশুলিয়ায় আবারও শ্রমিক অসন্তোষ বিক্ষোভ
অর্ধশতাধিক পোশাক কারখানায় কর্মবিরতি
আমিনুল ইসলাম, আশুলিয়া: আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে জামগড়া, বাইপাইল ও নরসিংহপুর এলাকার প্রায় অর্ধ শতাধিক পোশাক কারখানার প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক যথারীতি কারখানায় প্রবেশ করে হাজিরা দিয়ে এক যোগে বেড়িয়ে আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের ঘোষবাগ, নরসিংহপুর, বেরণ সরকার মার্কেট, ছয়তলা, জামগড়া, ইউনিক ও বাইপাইল এলাকাজুড়ে শ্রমিকদের অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। কারখানাগুলোর সামনে সড়ক অবরোধ করে পরিবহন চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে। এসময় দায়িত্বরত পুলিশের সাথে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে শ্রমিকরা জানায়, তারা কাজ না করে বাড়ি ফিরার পথে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে।
শ্রমিক অসন্তোষকে কেন্দ্র করে রোববার বিকালে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু, নৌপরিহনমন্ত্রী শাজাহান খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা-১৯ আসনের এমপি ডা. এনামুর রহমান এনামসহ শ্রমিক সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারা আশুলিয়া অঞ্চলের শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে বাইপাইল এলাহী কমিউনিটি সেন্টারে আলোচনা সভা ও সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিসহ নানা সুযোগ-সুবিধার আশ^াস দেওয়া হলে শ্রমিক নেতারা সোমবার কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলেন। শ্রমিক নেতাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে সোমবার সকালে বেতন বৃদ্ধির দাবি জামগড়া, নরসিংহপুর ও বাইপাইল এলাকায় নতুন করে ছড়িয়ে পড়ে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পুনরায় প্রায় অর্ধশতাধিক কারখানার শ্রমিকরা তাদের ন্যূনতম বেতন ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণসহ ১৬ দফা দাবিতে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রেখে বিক্ষোভে ফেটে পরে। দাবিগুলো হলো- ন্যূনতম মজুরি ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন করা, শ্রম আইনের ২৭ এর ৩(ক), ১৩(১) ধারা বাতিল করা, কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি করা, দৈনিক লাঞ্চ ভাতা বৃদ্ধি করা, যাতায়াত ভাতা বৃদ্ধি, শুক্রবারের কাজের জন্যে দ্বিগুণ ওভার টাইমের বিল দিতে হবে, যখন তখন শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা, কর্মক্ষেত্রে মৃত হলে আজীবন আয়ের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, রানা প্লাজা, তাজরীন ফ্যাশন, ট্রাম্পাকো, কালার ম্যাক্স বিডি লিমিটেডসহ সকল দুর্ঘটনার জন্যে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা, শিল্প অঞ্চলে সরকারি হাসপাতাল, স্কুল ও কলেজ নির্মাণ করা, মহিলা শ্রমিকদের মাতৃকালীন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের আবাস ও পরিবহন সুবিধা ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা।
এদিকে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন স্টার্লিং ক্রিয়েশন, স্টার্লিং স্টাইলসহ সেড ফ্যাশন, উইন্ডি গ্রুপ, জেবিএস, ডিজাইনার জিন্স, বান্দু ডিজাইন, সেতারা এ্যাপারেলস, দি রোজ ড্রেসেস, এএম ডিজাইন, মেডলার, শারমিন গ্রুপ, গ্রীনলাইফ, সেডফ্যাশন, ডেকো ডিজাইন,পারএক্সেল, এনভয় গ্রুপ, পলমল গ্রুপ, ডংলিয়ান, ফ্যাশন এইড, ফারইয়ার, ফ্যাশন ক্রাফ্ট, এনারেল, বার্ডস্ গ্রুপ, উসাইন এন্ড ডিজাইন, ফাউনটেন, নাভা নিট ওয়্যারসহ অর্ধশতাধিক কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকে। ঘটানায় কারখানাগুলো ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশুলিয়ার আরও ৫০টি কারখানার শ্রমিকরা কারখানার অভ্যন্তরে কাজ বন্ধ করে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন বলে শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা জানায়।
গতকাল বেলা সোয়া ১২টায় আশুলিয়া প্রেসকাবে আশুলিয়া গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের মধ্যে সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক সারোয়ার হোসেন বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি বলেন, শ্রমিকদের দ্রুত কাজে যোগদানের আহ্বান জানান। যদি শ্রমিকদের কাজে যোগদানের ব্যাপারে যদি কোনো ইন্ধনকারী থাকে সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আটক করে প্রয়োজনীয় শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান। এরপরও কোনো কারখানার শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ রাখে তাহলে সে কারখানার শ্রমিকদের জন্যে নো ওয়ার্ক নো পে সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া শ্রমিকদের কাজে যোগদানের জন্যে খোলা জিপে মাইকিং করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শ্রমিক সংগঠন গুলো হলো- বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগ, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন।
ঘটনায় ঢাকা-১৯ আসনের সাংসদ আশুলিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানাগুলো ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিদর্শন করে শ্রমিক ও মালিক পক্ষকে শান্ত রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে তিনি জানান। কোনো প্রকার ভাঙচুরসহ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম