বিজিবি দিবসে প্রধানমন্ত্রী বিএসএফের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে সীমান্তে অপরাধ কমেছে
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং বিজিবির কঠোর অবস্থান ও সফল কর্মকা-ে সীমান্তে অপরাধ কমে এসেছে। তিনি বলেন, বিজিবি এখন পরিশীলিত,একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সীমান্তরী বাহিনীর মর্যাদা লাভ করবে।
গতকাল মঙ্গলবার পিলখানায় বিজিবি দিবস ২০১৬ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবির কঠোর অবস্থানের কারণে চোরাচালান, মাদক পাচার, নারী-শিশু পাচার এবং সীমান্ত অপরাধ অনেক কমে গেছে। তিনি বলেন, সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশী নিহতের ঘটনা উদ্বেগজনক। তবে বিজিবি-বিএসএফ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ফলে সীমান্তে হত্যা কমেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবি সদস্যদের বিশ্বস্ততা পরীতি ও প্রশ্নাতীত। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিজিবি এখন একটি গতিশীল ও আধুনিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও- পোড়াও ও পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসীদের নৈরাজ্য সৃষ্টির অপতৎপরতা প্রতিহত করতে যে দতা দেখিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
পিলখানায় সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকা-কে জাতির কলংকিত অধ্যায় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে সময় সরকার গঠনের পরপরই বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকা-ের মতো ন্যক্কারজনক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহের চক্রান্তকারীদের সব অপতৎপরতা ধৈর্য ও সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করে এ বাহিনীতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ল্েয যেসব দূরদর্শী পদপে গ্রহণ করেছিলাম তা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ৪৭৯ কিলোমিটার অরতি সীমান্ত এলাকায় নতুন ৪টি ব্যাটালিয়ন ও ৫৫টি বিওপি নির্মাণের মাধ্যমে ৩৭০ কিলোমিটার সীমানা ইতিমধ্যে নজরদারিতে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবির গোয়েন্দা সংস্থাকে শক্তিশালী করে বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো স্থাপন করা হয়েছে। ৪টি নতুন সেক্টর ও ৪টি রিজিওনাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো স্থাপন করা হয়েছে। নতুন অনুমোদিত ১৫টি ব্যাটালিয়ন স্থাপনের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে এ যাবৎ ২৪ হাজার ২৩৪ জন জনবল নিয়োগ করা হয়েছে।
বিজিবিতে নারী সদস্য নিয়োগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবিতে ৮৮তম ব্যাচে প্রথমবারের মতো ৯৭ জন নারী সৈনিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা সফলভাবে তাদের মৌলিক প্রশিণ শেষে ইউনিটে যোগদান করেছে। বিজিবি হাসপাতাল, ঢাকার তত্ত্বাবধানে ৫০ জন নারী সৈনিককে মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট প্রশিণ প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বছর ৮৯তম ব্যাচে আরও ৯৩ জন নারী সৈনিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজিবি সদস্যদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাহিনী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তৎকালীন ইপিআর-এর বেতারকর্মীরা এই পিলখানা থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সমগ্র দেশে প্রচার করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২২১ বছরের ঐতিহ্যবাহী সীমান্তরী বাহিনীর প্রায় ১২ হাজার বাঙালি সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এ বাহিনীর ২ জন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এবং শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফসহ ৮ জন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৭ জন বীরপ্রতীক মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মহিমান্বিত করেছেন।
সকাল ৯টায় পিলখানায় বিজিবি সদও দফতরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। বিজিবি সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী খোলা জিপে প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং কুচকাওয়াজে বিজিবি সদস্যদের সালাম গ্রহণ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী চিত্তাকর্ষক ‘ট্রিক ড্রিল’ এবং ‘ডগ স্কোয়াড ডিসপ্লে’ উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বীরত্ব ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ৬৭ জন বিজিবি সদস্যকে পদক পরিয়ে দেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, তিনবাহিনী প্রধানগণ, বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু