উৎসব, উত্তাপ ও শঙ্কায় প্রার্থীসহ ভোটাররা
নুরুল আজিজ চৌধুরী ও হাবিবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে যেমন রয়েছে উৎসব। তেমনি রয়েছে উত্তাপ। এক অজানা আতঙ্ক, শঙ্কা আর ভয়ে আছেন মেয়র, কাউন্সিলর এমনকি ভোটাররা। নির্বাচনি আমেজের পাশাপাশি কোথাও কোথাও গুমোট পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে দৃঢ় প্রত্যয়। প্রচারণার শেষ দিনে বড় দুই দলের প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন। নির্বাচনকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিপক্ষে দলের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান ভেতরে ভেতরে ঘুণ কাটায় শঙ্কিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এসবকে উবে দিয়ে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
অপরদিকে, বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনের বিপক্ষে নীরবে কাজ করছেন স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। সাখাওয়াত এ অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, দল তার সঙ্গে আছে। সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচন এখন সরগরম। হার-জিতের লড়াইয়ে দুই প্রার্থী ও দলের নেতাকর্মীরা এখন ঘাম ঝড়াচ্ছেন। সর্বশেষ ভোটের লড়াইয়ে ব্যক্তি আইভীর জয় হবে মনে করছেন ভোটাররা।
মঙ্গলবার নারায়গঞ্জ সিটি নির্বাচনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় প্রার্থীরা ব্যস্ত। সকাল ১১টার দিকে ২নং রেলগেট এলাকার বিএনপির কার্যালয় থেকে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগে বের হন। এ সময় তিনি ১৭ ও ১৮নং ওয়ার্ডের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে নানা প্রতিশ্রুতি দেন। অপরদিকে বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ১৬নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। দুপ্রার্থীর সমর্থকরা বলেন, রাত ১২টা পর্যন্ত সময় আছে। তাই যতটুকু পারা যায়, নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
এদিকে, নির্বাচনকে ঘিরে বড় দুদলের প্রার্থী, কাউন্সিলর প্রার্থী ও ভোটারদের মাঝে নানা ধরনের ভয় ও শঙ্কা কাজ করছে। যদিও ইতোমধ্যে ২৫ প্লাটুন বিজিবি রয়েছে নির্বাচনি এলাকায়। ভোটারদের ধারণা কোনো অপশক্তি নির্বাচনকে বানচাল করতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। নির্বাচনের দিন কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা চলতে পারে বলে এমন খবর চাউর রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাস্ত করতেই এমন কিছু করা হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থক ও ভোটাররা।
গোয়েন্দা সংস্থা ও আওয়ামী লীগের অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়, আইভীর ইমেজ ক্ষুণœ করতে একটি মহল নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। গত কয়েকদিনে ওই মহলটি শহরের বিভিন্ন এলাকায় গোপন বৈঠকও করেছে। বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্যও নির্দেশ রয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, নির্বাচনের দিন ওই মহলের অনুসারীরা নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে ঘুরলেও কাজ করবে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে।
সরেজমিনে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যদিও নির্বাচন প্রতীকের। কিন্তু এখানে কাজ করবে ব্যক্তি ইমেজের। নারায়ণগঞ্জে দুদলের ভোটাররা ছাড়াও রয়েছে আরও ৪ শ্রেণির ভোটার। এদের ভোটেই জয়-পরাজয়ের হিসাব হবে। এবারের নির্বাচনে ৭০ হাজার রয়েছে নতুন ভোটার। রয়েছে নারী ভোটার, হিন্দু ভোটার ও জাতীয় পার্টির ভোটার। নতুন ভোটারদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, আইভীর পাল্লা সবচেয়ে বেশি ভারী। আর নারী ভোটাররা আইভীর নামের উপরই পাগল। অপরদিকে সংখ্যালঘু প্রায় ৮০ ভাগ ভোট পড়বে আইভীর পক্ষে।
কথা হয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ব্যবসায়িক সুবিধার কারণেই তারা আইভীর পক্ষে কৌশলে কাজ করছে। তারা চান আইভী উঠে আসুক। এতে ব্যবসায়ীরা অন্তত সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি থেকে রক্ষা পাবে। সবমিলিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হলে আইভী প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করবে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।