রূপালি ব্যাংক এমডি মোহাম্মদ আতাউর রহমান প্রধান খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা হচ্ছে
শারমিন আজাদ: বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ, খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরাসহ রূপালি ব্যাংকের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান প্রধান। গতকাল এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রূপালি ব্যাংকের এমডি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
প্রশ্ন: রূপালি ব্যাংকের মূলধন এখন কত? এটা কি সন্তোষজনক অবস্থায় আছে? উত্তর: বর্তমানে রূপালি ব্যাংকের মূলধন প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা। থাকা দরকার ১৭শ’ ১০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে মূলধন ঘাটতি রয়েছে ৭০০ কোটি টাকার মতো। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে হবে। প্রশ্ন: বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের পরিস্থিতি কি? বড় উদ্যোক্তা কি পাওয়া যাচ্ছে? উত্তর: সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে করা এমওইউ অনুযায়ী কম। সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ ঋণই বেসরকারি খাতে দিচ্ছে রূপালি ব্যাংক। এ বছর আড়াই হাজার কোটি টাকা বেসরকারি খাতে ঋণ দিয়েছে সরকারি এ ব্যাংকটি। তবে বড় বড় ঋণগ্রহীতাদের সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। ছোট ছোট ঋণপ্রবাহই বেড়েছে। আগে ঢাকাকেন্দ্রিক ঋণ প্রবাহই ছিল ৮০ শতাংশ। তবে এবার সে ধারাবাহিকতা ভেঙে গ্রাম পর্যায়ে ছোট ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে এসএমই, কৃষি ঋণই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্যও ঋণ দেওয়ার উদ্যোগে বেশি নজর দিয়েছে ব্যাংক। কৃষি ঋণের ক্ষেত্রেও টার্গেট পূরণ করেও ভালো উদ্যোক্তা পেলে ঋণ দিচ্ছি।
প্রশ্ন: খেলাপী ঋণের পরিমাণ কি? এ ঋণ উদ্ধারে কি কি উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংক? তা কেন আদায় করা যাচ্ছে না?
উত্তর: খেলাপী ঋণে বিগত কয়েক বছরের চেয়ে প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে এ বছরের সেপ্টেম্বরে। ব্যাংকের ৫০৭টি শাখা অটোমেশনে চলে আসায় খেলাপী ঋণের চিত্র পরিষ্কার হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর সেপ্টেম্বরে এসে বেশ বেড়েছে খেলাপী ঋণ। তবে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে খেলাপী ঋণ কমেছে ২-৩ শতাংশ। খেলাপী ঋণ আদায়ে মাঠ পর্যায়ে টিম গঠন করেছে ব্যাংক। ঋণ খেলাপীদের সঙ্গে দেখা করে ঋণ আদায়ে তাগাদা দিচ্ছে এ টিম। টাকা আদায়ে মামলাও করা হয়েছে অনেক ঋণ খেলাপীর বিরুদ্ধে। তারপরও অনেকের কাছ থেকে আদায় করা যাচ্ছে না সত্য। এর পেছনে প্রকৃত কারণ রয়েছে। অনেকে দীর্ঘদিনের খেলাপী, তাদের কারও ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো ব্যবসায়ীর আবার ব্যবসা চলছে কিন্তু সেভাবে রিটার্ন আসছে না, যার কারণে তারা খেলাপীই থেকে যাচ্ছেন।
প্রশ্ন: ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। তারা কীভাবে কাজ করছে? কোনো অসঙ্গতি কি ধরা পড়েছে তাদের কাছে?
উত্তর: বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে দুজন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে, পর্যবেক্ষকরা পরিচালনা পর্ষদে বসছেন। তারা দেখছেন পর্ষদের কোনো রকম ভুল-ভ্রান্তি আছে কিনা। বোর্ডে যেসব বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে তাতে কোনো অসঙ্গতি খুঁজে পেলে নির্দেশনা দিচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা। এতে ব্যাংক সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।
প্রশ্ন: ব্যাংকের আমানত পরিস্থিতি কী?
উত্তর: গতবারের চেয়ে আমানত ৪ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। সার্ভিস ভালো হওয়ায় আমানতের সুদ কম হলেও বেড়েছে আমানত। গতবার আমানত ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ বছর হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকা।
প্রশ্ন: রেমিট্যান্স পরিস্থিতি কী?
উত্তর: রূপালি ব্যাংকের দেশের বাইরে কোনো রেমিট্যান্স হাউস নেই। তারপরও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স গতবারের চেয়ে বেড়েছে। তবে তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। মধ্যপ্রাচ্য থেকেই এখন বেশিরভাগ রেমিট্যান্স আসে। ইউকে, ইউএসএ ও অস্ট্রেলিয়া থেকে রেমিট্যান্স আসে না বললেই চলে। তাই মধ্যপ্রাচ্যে তেলে দাম কমলে সেখানকার শ্রমিকদের মজুরিও কমে যায়। গতবছর তেলের দাম পড়তির দিকে থাকার কারণেই কম এসেছে রেমিট্যান্স। এছাড়া পাউন্ডের মূল্যও কমেছে, এটাও রেমিট্যান্স কম আসার কারণে। এছাড়া এখনো অনেক জায়গা আছে যেখানে তেমনভাবে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছায়নি। মালয়েশিয়া, মালদ্বীপের মতো জায়গাগুলোতে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন: ব্যাংকের আর্থিক শৃঙ্খলা কি বজায় আছে? তা কীভাবে ঠিক রাখছে ব্যাংক?
উত্তর: আগের তুলনায় নিয়ন্ত্রকরা অনেক কঠোর হয়েছে। বোর্ডের জবাবদিহিতা বেড়েছে। যার ফলে জোরদার হয়েছে ব্যাংকের আর্থিক শৃঙ্খলা। এর মধ্যেও দুয়েকটি অঘটন ঘটেছে, তা যাতে না হয় সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন: ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি ও অসাধুপায়ে অর্থ আত্মসাৎ প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
উত্তর: দুর্নীতি প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশন। দুর্নীতি উন্নয়নের জন্য বড় থ্রেট। আর এটা থেকে মুক্তির জন্য মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে। সরকার বেতন-ভাতা বাড়িয়েছে, যাতে দুর্নীতি না হয়। আশা করা যায়, সচেতনতা বাড়লে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের হার কমে আসবে।
প্রশ্ন: রূপালি ব্যাংকের ব্যাংকিং সেবা নিয়ে কিছু বলুন। অনলাইন ব্যাংকিংয়ে কতটা এগিয়েছে রূপালি ব্যাংক?
উত্তর: বিগত জুনে ৫৬১টি শাখার মধ্যে ৩০০টি শাখা পুরোপুরি অটোমেটেড হয়েছে। মার্চের মধ্যে বাকিগুলো অটোমেটেড হবে, আশা করা যায়। আগামী জুন মাসে সবগুলো শাখা অনলাইনে যাবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়েও এগিয়ে গেছে ব্যাংকের সার্ভিস। এছাড়া ১ কোটি মায়েদের অ্যাকাউন্টে প্রাথমিক বৃত্তির ১২শ’ কোটি টাকা পৌঁছে দেওয়ার কাজও চলছে। এ মাসেই প্রধানমন্ত্রী এ সার্ভিসটি উদ্বোধন করবেন।