ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত শাবি বন্ধ, উপচার্য অবরুদ্ধ
আশরাফ চৌধুরী রাজু, সিলেট : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা এবং ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩টি আবাসিক ছাত্র হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এনভায়রনমেন্টাল ও সিভিল সায়েন্সের অধ্যাপক জহির বিন আলমকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে শাবির সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল-সেøাগানও নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং সব পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যকে তার কার্যালয়ে দুপুর থেকে অবরুদ্ধ করে রাখেন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ রাত ৯টায়ও তিনি অবরুদ্ধ ছিলেন।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ছাত্রলীগের তিনটি পক্ষ এক হয়ে আরেকটি পক্ষকে ধাওয়া করে ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ সময় উভয় পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। ককটেল ও গুলির শব্দ শোনা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সূত্রগুলো জানায়, সহ-সভাপতি অঞ্জন রায়, আবু সাঈদ আকন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজের অনুসারীরা এক হয়ে সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানের পক্ষকে ধাওয়া করলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ পরান হলে সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী ছাত্রদের কক্ষ ভাঙচুর করে।
শাহ পরান হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহেদুল হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের পক্ষগুলোর মধ্যে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে গভীর রাতে ছেলেদের তিনটি আবাসিক হলে তল্লাশি চালায় পুলিশ। শাহ পরাণ, বঙ্গবন্ধু ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলে তল্লাশি চালিয়ে গুলি, ধারালো অস্ত্র, লোহার রড, ইয়াবা বড়ি, মদ ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিত এড়াতে ছাত্রদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
গতকাল সকাল ১০টা নাগাদ ছাত্রদের হল তিনটি ফাঁকা হয়ে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভা বসে। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে শতাধিক ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে এলাকার লোকজনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের তর্ক-বিতর্ক বাঁধে। সৃষ্টি হয় উত্তেজনা। বেলা পৌনে ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে আসেন। ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখার দাবিতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ওই ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মুন্সি নাসের ইবনে আফজাল বলেন, যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জালালাবাদ থানার ওসি আকতার হোসেন বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নজরে রেখেছে। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা হচ্ছে।
সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ‘অস্বচ্ছতার’ বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন দমনের জন্য উপাচার্য আমিনুল হক ভুঁইয়া পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছেন। আন্দোলনকারী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মুখপাত্র সারওয়ার তুষার বলেন, উপাচার্য আমাদের অন্দোলন দমিয়ে রাখার জন্য পরিকল্পিতভাবে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে বন্ধ করে দিয়েছেন।
সারওয়ার বলেন, গত ২৬ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিনসহ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইশরাত ইমতিয়াজ হৃদয়কে আটক করে জালালাবাদ থানার পুলিশ। আটক হওয়ার পর পুলিশ জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে মামলা করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো মামলা করেনি। প্রশাসন জালিয়াত চক্রের মূল হোতাদের আড়াল করার প্রতিবাদে গত ৪ ডিসেম্বর থেকে আমরা আন্দোলন করে আসছি। এ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণ করে। তিনি বলেন, আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে অন্যদিকে প্রবাহিত করতে উপাচার্য ক্যাম্পাসে দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছেন। ক্যাম্পাস সচল করার ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, ১৫ ডিসেম্বর প্রশাসনের ‘অস্বচ্ছতা’ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের প্রতিবাদে বিজয় দিবসের কর্মসূচি বর্জনের ঘোষণা দেয় ক্যাম্পাসের সব সাংস্কৃতিক সংগঠন। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী