আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ, বিজিবি মোতায়েন সড়কে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ
আমিনুল ইসলাম, আশুলিয়া: শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারী ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন (বিজিএমইএ)-এর ঘোষিত ৫৫টি পোশাক কারখানা গতকাল বুধবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। কারখানাগুলোর প্রধান গেটের সামনে অনির্দিষ্টকালের বন্ধের নোটিশ সাঁটিয়ে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সঙ্গে বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যদের দায়িত্বপালন করতে দেখা গেছে। সকাল থেকে আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কে দূরপাল্লার ও আঞ্চলিক গণপরিবহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। একমাত্র রিকশা ও মাহেন্দ্র চলাচলই চোখে পড়ার মতো। চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিল্প পুলিশ, জেলা পুলিশ, দাঙ্গা পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সড়কটিতে মহড়া দিতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বিজিএমইএ সভাকক্ষে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান তার মালিকানাধীন স্টার্লিং অ্যাপারেলস, স্টার্লিং ক্রিয়েশন, স্টার্লিং স্টাইল ও বান্দ ডিজাইনসহ আশুলিয়ার ৫৫টি পোশাক কারখানা শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের বন্ধের ঘোষণা দেন। ঘোষণা মোতাবেক কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের প্রধান গেটে অনির্দিষ্টকালের বন্ধের নোটিশ সাঁটিয়ে দেয়। বন্ধকালীন শ্রমিকরা বেতন ভাতা পাবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া ঢাকা জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় আশুলিয়ার সকল স্থানে খোলা জিপে শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কারখানায় ও কারখানা গেটের সামনে যেতে নিষেধাজ্ঞা প্রচার করা হয়। সাভার-আশুলিয়ায় প্রায় ৬ শতাধিক পোশাক কারখানা রয়েছে। এ সকল কারখানার সামনে শ্রমিকরা যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন। মূলত গতকাল বুধবার সকাল থেকে আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কে কোনো গণপরিবহন চলাচল না করায় শ্রমিকরা অধিকাংশ কারখানায় কাজে যোগদান করতে পারেনি। বাইপাইল এলাকায় পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে কোনো যানবাহন ওই সড়কটিতে ঢুকতে দেয়নি।
এদিকে গতকাল সকাল থেকে আওয়ামী লীগের ইয়ারপুর ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক শাহেদ মজিবুর রহমান, থানা যুবলীগের যুগ্মসম্পাদক আরিফ মাতবর, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি তাদেরকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে শ্রমিকরা জানান, বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী বাজার দরের কারণে ও বাড়িভাড়া বৃদ্ধিসহ ব্যয়ভার নির্বাহ করা বর্তমান মজুরি দিয়ে সম্ভব না থাকায় তারা মজুরি কাঠামো রিভিউ করে ন্যূনতম বেতন ১৫ হাজারসহ ১৬ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। এ মাসের ১২ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত এ আন্দোলন চলে। শ্রমিকরা আরও জানান, তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বেতন ও অন্যান্য দাবি পূরণ না করে বিজিএমইএ গতকাল বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেয়। এর ফলে শ্রমিকদের দুর্দশা আরও বাড়বে। অবিলম্বে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে কারখানা খুলে দেওয়ার আহ্বান জানান শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকদের আন্দোলন দমাতে পুলিশের টিয়ারসেল, লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপেরও নিন্দা জানান তারা।
এদিকে ঘোষিত ৫৫টি পোশাক কারখানা ছাড়া বাকি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গতকাল সকাল থেকে তাদের কারখানার ভিতরে কর্মবিরতি করেছে। পাশাপাশি অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ঘোষণার পরপরই গতকাল সকাল থেকে আশুলিয়ার বিভিন্ন বাস স্টপেজে ঈদের মতো গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে। বন্ধ কারখানাগুলো হলোÑ হামীম গ্রুপ, শারমিন গ্রুপ, মেডলার অ্যাপারেলস, সোনিয়া অ্যাপারেলস, নাসা গ্রুপ, জনরন, নিট এশিয়া, ডেকো ডিজাইন, নেক্সট কালেকশন, সিন সিন অ্যাপারেলস, নেক্সট জেনারেশন, সিগমা অ্যাপারেলস, রেজা গ্রুপ, ডেবনিয়ার গ্রুপ, দি রোজ ড্রেসেস লি. ডিকে গ্রুপ, আইডিএস গ্রুপ, ফ্যাশন ফোরাম, সা’দাতিয়া, ওশান অ্যান্ড ডিজাইন, জিন্স ডিজাইনার, এনভয় গ্রুপ, উইন্ডি গ্রুপ, হলিউড ফ্যাশন, এএম ডিজাইন, সেড ফ্যাশন, সেতারা গ্রুপ, স্টার্লিং অ্যাপারেলস, স্টার্লিং স্টাইল, স্টার্লিং ক্রিয়েশন, মানারাত অ্যাপারেলস, ফাউন্টেন, আনজির অ্যাপারেলস, স্কাইলেন, শাহরিয়ার, পলমল গ্রুপ, মদিনাপেল, হিয়ন, লিন্ডা, হার্ভার্ড, সুসুকা, ওশান গেট, ডংলিয়ন, বার্ডস, মাচিহাতা, নাসির গ্রুপ, আনজির-২, সফটেক্স, জাপান বাংলা, নালিজা, গ্রীন লাইফ, ন্যাচারাল ডেনিমস, তুরাগ, পাল গার্মেন্টস, ম্যাগপাই, ট্রাউজার জিন্স, ওপেক্স, নর্দার্ন, মাসকট, সাউদার্ন, এসিও, টেক্সটাউন, অনুরিমা, আনজির-৪, অনন্ত অ্যাপারেলস লি.।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহসিনুল কাদির বলেন, শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধিসহ কয়েক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। তবে আশুলিয়ার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির ঘটনা ঘটেনি। কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম