আজ নারায়ণগঞ্জ সিটির ভোট আস্থায় আওয়ামী লীগ, প্রত্যাশায় বিএনপি
হাসান আরিফ, নুরুল আজিজ চৌধুরী ও হাবিবুর রহমান নারায়ণগঞ্জ থেকে: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনের আজ ভোট। বহুল আলোচিত এই সিটি নির্বাচনে মূলত নৌকা আর ধানের শীষ প্রতীকের লড়াই হবে। এই লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নৌকা প্রতীক নিয়ে জয় অনেকটাই নিশ্চিত ধরে নিয়েছেন। অপরদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ধানের শীর্ষ প্রতীক নিয়ে ঘাম ঝড়াচ্ছেন জয়ের আশায়। ফলে কে হবেন নগর পিতা তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে সব পক্ষ থেকেই। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হলেও নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন গুরুত্বের দিক থেকে অর্জন করেছে জাতীয় নির্বাচনের চরিত্র। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে বিএনপি। আওয়ামী লীগও তার অন্তবিরোধ কাটিয়ে একক প্রার্থী দিতে পেরেছে। দলীয়ভাবে এই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন তেমনিভাবে বিএনপি নেতা খালেদা জিয়াও অংশগ্রহণ করেছেন। এসব বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের চিত্র। এই নির্বাচনেই প্রমাণ হবে আগামী দিনের জাতীয় সংসদের নির্বাচন কেমন হবে। সুতরাং নির্বাচনটি সবার কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন সবার চোখ এই নির্বাচনের দিকেই।
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে হচ্ছে। বিভিন্ন দলের ৫ প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও মূল আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খানকে নিয়ে। তবে ব্যালটে ৭ জন প্রার্থীর নাম ও প্রতীক থাকবে। এরই মধ্যে দুজন বিএনপির প্রার্থীর সমর্থনে নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী। তবে ব্যালটে তাদের নাম ও প্রতীক থাকবে। এদিকে আইভী এবং শাখাওয়াত দুজনই ভোট জালিয়াতির আশঙ্কা করছেন। আইভী শিবিরের অভিযোগ একটি মহল তাদের নিজস্ব অনুগতদের নৌকার ব্যাচ ব্যবহার করাবে ঠিকই কিন্তু ভোট দিবে ধানের শীষে। আর শাখাওয়াত শিবিরের অভিযোগ তার কর্মী-ভোটারদের বিভিন্ন ভাবে ভয় ভিতি দেখানো হচ্ছে, যাতে তারা ভোট দিতে না যায়। সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচন ঘিরে জাতীয় রাজনীতিতেও সৃষ্টি হয়েছে উত্তাপ। বড় দুই দল আওয়ামী লীগ আর বিএনপি এ নির্বাচনকে দেখছে মর্যাদার লড়াই হিসেবে। দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে দলীয় সব ধরনের চেষ্টা চালিয়েছেন দল দুটির সর্বস্তরের নেতারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী জাতীয় ইস্যু।
নারায়ণগঞ্জবাসী ব্যালটে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার মাধ্যমে মেয়র, ৯ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর এবং ২৭ কাউন্সিলর নির্বাচনের। ২৭ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩৮ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও ১৫৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাচনে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং বিএনপি মনোনীত অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের মধ্যে। এ ছাড়া বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী আন্দোলন ও ইসলামী ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থীও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এনসিসি এলাকায় মোট ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ ভোটার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১৭৪টি কেন্দ্রের ১ হাজার ৩০৪টি ভোটকক্ষে টানা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। এই ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬২ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৯ জন। এর আগে ২০১১ সালের নির্বাচনে ভোটার ছিল ৪ লাখ ৪ হাজার ১৮৯ জন।
সরজমিনে দেখা গেছে, নির্বাচনি এলাকায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে। নির্বাচনে সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় দশ হাজার সদস্য থাকছেন। ভোটের দিন আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচনি এলাকায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ভোট নিয়ে নির্বাচনি এলাকার পথঘাট, হাটবাজার ও ব্যস্ত এলাকাগুলোতে চলছে একটাই আলোচনা- কে হবেন নগর পিতা। তবে ভোটাররা এতটাই সতর্ক যে তাদের আলোচনা থেকে বুঝার উপায় নেই তারা তাদের সমর্থন কোন দিকে যাবে। নারায়ণগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়ার শহীদ মিনারে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, তারা নিজেদেরকে একটি প্রভাবশালী পরিবারের সমর্থক বলে জানায়। একই সঙ্গে তারা আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারপরও তারা ধানের শীষে ভোট দিবেন। কেন ভোট দিবেন তাও তারা এই প্রতিবেদকের কাছে বলেছেন।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র: নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্র ১৭৪টি। এর মধ্যে ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ, যা মোট কেন্দ্রের ৭৯ ভাগ। সিদ্ধিরগঞ্জের সব কটি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। বাকিগুলো বন্দর ও শহর এলাকায় অবস্থিত। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তায় অন্তত ১২ জন অস্ত্রধারীসহ মোট ২৪ জন নিরাপত্তাকর্মী থাকবেন। আর সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ১০ জন অস্ত্রধারীসহ ২২ জন নিরাপত্তাকর্মী থাকবেন। কেন্দ্রের বাইরেও অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হবে। মেজর মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ সিটি এলাকায় মোতায়েন করা বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় রাখতে ২৭টি ওয়ার্ডে ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছে।
বর্তমান ইসির শেষ নির্বাচন : বর্তমান কমিশনের অধীনে নাসিকই শেষ বড় নির্বাচন। ৮ ফেব্রুয়ারি এ কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নির্বাচনে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে রিটার্নিং অফিস থেকে। এই প্রচারপত্র বিলি করার জন্য চাষাড়ার গোলচত্বর এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ সদস্যরা। এ সময় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এখানে সংক্ষিপ্ত ব্রিফ করেন ঢাকা বিভাগের ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। এজন্য যা যা করার দরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার সবটাই করেছে। কোথাও কোনো অনিয়ম নেই। এ সময় রিটার্নিং অফিসার মো. নুরুজ্জামান তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
মাঠে থাকবেন ইসির ৯ গোপন পর্যবেক্ষক : এনসিসি এলাকায় নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ৯ জন কর্মকর্তা গোপন পর্যবেক্ষক হিসেবে মাঠে রয়েছেন। তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে তথ্য সংগ্রহ করে সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে জানাচ্ছে। তাদের কর্মপরিধি হচ্ছে- ব্যালট ছিনতাই, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা, জাল ভোট, অবৈধ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা নজরে এলে তাৎক্ষণিক ইসি সচিব বা অতিরিক্ত সচিবকে জানাবেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবে কমিশন।
২ বিদেশিসহ ৩২০ পর্যবেক্ষক : এ নির্বাচনে থাকবেন ৩২০ জন পর্যবেক্ষক। এর মধ্যে ৯টি স্থানীয় সংস্থার ৩১৮ জন ও একটি বিদেশি সংস্থার দুজন। ৯টি সংস্থার ১৮৫ জন স্থানীয়ভাবে ও এর মধ্যে ৭টি সংস্থার ১৩৩ জন কেন্দ্রীয়ভাবে ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন এবং এশিয়া ফাউন্ডেশনের আওতায় ২ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।
ভোটের হিসাব : ভোট নিয়ে শেষ মুহূর্তের হিসাব-নিকাশও শেষ। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে কে জয়ী হবেন তা এখনো নিশ্চিত না। তবে ভোটারদের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন আইভী, আবার কেউ বলছেন সাখাওয়াত। তবে এরা সবাই প্রকাশ্য ভোটার। আবার সংবাদ কর্মীদের মধ্যে একইভাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে শেষ হাসি কে হাসবেন তা সময়ই বলে দেবে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে নানা সমীকরণ কাজ করবে। এরমধ্যে নীরব ভোটার, নারী, ভাসমান, নতুন ভোটার, একটি প্রভাবশালী পরিবারের নিজস্ব ভোটার, আঞ্চলিক ভোটার এবং জামায়াত ও হেফাজতে ইসলামের ভোটার রয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোট ভোটারের শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ নীরব ও ভাসমান। ধানের শীষের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা। ভাসমান ভোটারদের মধ্যে ১০ হাজারের মতো বস্তিবাসী রয়েছেন। প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার মুন্সীগঞ্জের ভোটার রয়েছেন। এসব ভোট যে দিকে যাবে তিনিই জয়ী হবেন বলে সাধারণ ভোটারদের ধারণা। এই ভোটের মধ্যে মহিলাদের বেশিরভাগ ভোটই আইভীর পক্ষে যাবে। আর মুন্সীগঞ্জের ভোটারদের একটা বড় অংশ সাখাওয়াতের পক্ষে যেতে পারে বলেও তাদের ধারণা। এর বাইরে আওয়ামী লীগ আর বিএনপির দলীয় রিজার্ভ ভোট তো রয়েছেই।
এদিকে দলীয় প্রভাব ছাড়াও নারায়ণগঞ্জে একটি প্রভাবশালী পরিবারের ৩০ হাজারের মতো রিজার্ভ ভোট রয়েছে। এসব ভোটারের বেশিরভাগ ভোটই আইভীর বাক্সে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ প্রকাশ্যে তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ না থাকলেও ভিতরে কেউ কাউকে দেখতে পারেন না। ফলে এই পরিবার যেভাবে চাইবেন সে দিকেই যাবে এই ভোট। তবে এই পরিবার না চাইলেও ২০ থেকে ৩০ ভাগ ভোট নৌকার কারণে আইভীকেই দিবে। এদিকে নির্বাচনে সহিংসতা এড়াতে মাঠে নেমেছে বিজিবি, র্যাব পুলিশসহ সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ‘নাসিক নিরাপত্তায় পুলিশের ৪ হাজার সদস্য, র্যাবের ২৬শ, আনসারের ৩ হাজার ও বিজিবির ২২ প্লাটুনসহ আইনশৃঙ্খলা বহিনীর প্রায় সাড়ে ৯ হাজার সদস্য মাঠে রয়েছে। এছাড়া র্যাবের ৩১টি মোবাইল টিম এবং ২৭টি ওয়ার্ডে ২৭ জন ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা টহল দিচ্ছে। বিশেষ ক্ষেত্রে একাধিক মোবাইল টিম কাজ করছে। নাসিক নির্বাচন ক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে র্যাব শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রাইভেটকার থামিয়ে তল্লাশি করছে।
র্যাব-১১ সিপিএসসি কোম্পানি উপ-অধিনায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নরেশ চাকমা বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের আশঙ্কা আমরা দেখছি না। তবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কি হয় সেটা এখন বলা সম্ভব না। তবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।’ বুধবার দুপুর ১২টায় শহরের চাষাঢ়া বিজয় স্তম্ভের পাশে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে তল্লাশি অভিযান পরিচালনার আগে গণমাধ্যমে তিনি এসব কথা বলেন। অন্যদিকে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৈধ ও অবৈধ কোনো অস্ত্রই জমা নেওয়া হয়নি। তবে অস্ত্র প্রদর্শন না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে। বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হয়নি, তবে নির্বাচনকালীন বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করা যাবে না। অস্ত্র প্রদর্শন করলেই তা জব্দ করা হবে। তিনি আরও বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। রিটার্নিং অফিসার জানান, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করার কারণে ২৫ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। ১৫ জনকে সতর্ক করা হয়েছে। আর তিন প্রার্থীর কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। বিএনপি প্রার্থী সেনা মোতায়েনের বিষয়ে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনা মোতায়েনের কথা বলা হয়েছিল। পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রয়েছে। তাই সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই। তবে এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা না থাকলেও কাউন্সিলরদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। সেই আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। কেউ যদি মনে করে কেন্দ্র দখল করবে তাহলে সেটা কল্পনাপ্রসূত। আমরা কেমন কঠোর থাকব সেটা ভোটের দিনই প্রমাণ করব। নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। অন্যদিকে গেল কদিন ধরেই এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরগরম নারায়ণগঞ্জ। মিডিয়াকর্মী ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পদচারণায় মুখর ছিল এই নগরী। প্রার্থীদের প্রচারণা, প্রতিশ্রুতি আর ব্যক্তি ইমেজ নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা ছিল বিভিন্ন আড্ডার প্রধান উৎস।
গতকাল বুধবার রিটার্নিং কর্মকর্তা ভোটের সকল উপকরণ প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। পাশাপাশি কেন্দ্রে কেন্দ্রে মালামাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্বাচনি কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন তৎপর। ইতোমধ্যে স্ট্রাকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছে বিজিবি। পাশাপাশি পুলিশ, র্যাবসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নগরীতে টহল অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও মাঠে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কোনো অনিয়ম হলেই যেন রক্ষা না পায়, সেজন্য কঠোর নির্দেশনাও দিয়েছে ইসি। নির্বাচনে মোট ১৬৩ প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ১২১৭ সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ভোট গ্রহণ করবেন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর প্রাপ্ত ভোট কেন্দ্রে ঘোষণা করে তা পাঠানো হবে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব (নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয়) রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। এখান থেকে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
এবারের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডে ১৫৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৩৮ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ৭ জন মেয়র পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৩৯২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৫১৪ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৮ জন। তারা ১৬৩টি কেন্দ্রের ১২১৭টি ভোটকক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত