২০৪১ সালে এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হবে বাংলাদেশ : শেখ হাসিনা
হামিদুর রহমান: ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের অর্থনীতি এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে। স্থানীয় সাপ্লাই চেইন এবং গ্লোবাল ভ্যালু চেইন আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ও সংযোগ সৃষ্টিতে উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রাখবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে ‘নিউ ইকোনমিক থিংকিং : বাংলাদেশ ২০৩০ অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের অনুসৃত উন্মুক্ত অর্থনীতি উপ-আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে উইন উইন অবস্থান তৈরি করে সাফল্যের নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবে। ২০৩০ সাল নাগাদ এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ও প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতীম দেশসমূহের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক উন্নয়ন জরুরি। এছাড়া, বিসিআইএম, বিআিইএন, সার্ক, আসিয়ান, বিএমসটেক, সাসেক এবং পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশাধিকার দ্রুত ও উন্নত আঞ্চলিক সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, ব্যবসা ও বাণিজ্যিক কার্যত্রুমকে আরও সহজতর ও গতিশীল করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজিএস) অর্জনে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। একইভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজিএস ২০৩০) এর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যসমূহ ২০৩০ সালের মধ্যেই অর্জন করে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী এসডিজিএস বাস্তবায়নেও রোল মডেল হিসেবে পরিচিত হবে এ বিশ্বাস আমার আছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৭০তম জয়ন্তী উদযাপন করবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২.৫ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হবে এবং জনপ্রতি মাথাপিছু আয় প্রায় ১২ হাজার ৬শ ডলারে আমরা উন্নীত করতে পারব। একই সঙ্গে আমাদের রপ্তানি আয় ৩৫০ বিলিয়ন ডলার অতিত্রুম করবে এবং দেশীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বর্তমান ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে পারব।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত অর্থনীতিতে পরিণত করতে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রণীত কস্ট অফ ডয়িং বিজনেস ইনডেস্ক, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক প্রণীত গ্লোবাল কমপিটেটিভ ইনডেস্ক, জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেস্ক এবং অন্যান্য সংস্থা কর্তৃক প্রণীত গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেস্কসহ লজিসটিক পারফরমেন্স ইনডেস্ক এ বাংলাদেশের অবস্থান উন্নয়নে সরকার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, দারিদ্র্যসীমা ২০০৫ সালে থাকা ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০১৫ সালে ২২ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় হয়েছে ১৪৬৬ মার্কিন ডলার। ২০০৫-০৬ সালে যেখানে রপ্তানি আয় ছিল ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সেখানে বর্তমান অর্থবছরে তা ৩৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বর্তমানে ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ শতাংশই নিজস্ব অর্থায়নেই বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতের উন্নয়ন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও শক্তিশালী ও বেগবান করবে। গত সাড়ে ৭ বছরে দেশে ১০৫টি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি। দেশের ৭৮ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করছে। দেশে অফগ্রিড এলাকার ৪৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। আমাদের রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী আগামী ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হতে পারব। ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। গ্যাসের গড় উৎপাদন দৈনিক ১ হাজার ৭শ ৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট হতে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দৈনিক ২ হাজার ৭শ ৪০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। আমরা ফার্স্ট ট্রাক প্রকল্প গ্রহণ করেছি। গভীর সমুদ্রবন্দর, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লাভিক্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল, আন্তঃদেশীয় রেল প্রকল্প এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশের প্রথম টানেল নির্মাণের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, এ সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমাদের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী ও গতিশীল হবে। সম্পাদনা: আনোয়ার