আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ, কারণ জানতে ৫টি তদন্ত কমিটি গঠন সরকারের সাফল্য ও অগ্রগতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এই আন্দোলন : মুজিবুল হক চুন্নু
আনিসুর রহমান তপন: সরকারের অগ্রগতি ও সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আশুলিয়ায় শ্রমিকদের একাংশ আন্দোলনের নামে কর্মবিরতি পালন করছে বলে দাবি করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ কক্ষে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এই কথা বলেন। তিনি বলেন, অবশ্যই এর পিছনে দেশি বা বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্র রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকরা আন্দোলন করছে অথচ এর সঙ্গে গার্মেন্টস সেক্টরের প্রায় ৫৫০টি ট্রেড ইউনিয়ন ও ৪৩টি শ্রমিক ফেডারেশনের কেউ এই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এবং আন্দোলনরত শ্রমিকদের লিখিত বা অলিখিত কোনো দাবি-দাওয়াও নেই। তাহলে কিসের জন্য এই আন্দোলন?
গত সপ্তাহে আশুলিয়ার জামগড়া উইন্ডি অ্যাপারেলস নামের কারখানা থেকে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের সূত্রপাত হয়। বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, বেতন বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া বিষয়ে এবং এই আন্দোলনের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা জানতে ইতোমধ্যে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের অধীনে ৫টি টিম কাজ শুরু করেছে। তাদেরকে ৭ দিনের সময় দিয়ে আন্দোলনের আসল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য জানতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এবং প্রতিবেদনের সুপারিশ দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, চলমান এই শ্রমিক অসন্তোষের পিছনে যারাই থাকুক বা যে গোষ্ঠীই থাকুক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কারা এই শ্রমিক অসন্তোষের পিছনে ষড়যন্ত্র করছে জানতে চাইলে, মুজিবুল হক চুন্ন বলেন, এর আগে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে যে গোষ্ঠী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সফল হতে পারেনি। তারা থাকতে পারে। আবার বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিখাতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। বাংলাদেশের এ শিল্পখাতকে ধ্বংস করা গেলে বিদেশে বাংলাদেশের যেসব প্রতিযোগী দেশ রয়েছে তারা লাভবান হতে পারে। তাই এমন কোনো বিদেশি গোষ্ঠীও এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করতে পারলে কোনো কোনো দেশ লাভবান হতে পারে? প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি সরকার, মালিক ও আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বৈধ ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকেও ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ সরকারকে জানিয়েছে, চলমান এই আন্দোলনের কারণ কি সেটা তারা জানেন না। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এটা শ্রমিকদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের যে প্র্যাকটিস সেটা নষ্ট করার ষড়যন্ত্র। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে সরকার চাইলে অ্যাকশন নিতে পারে, বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই আশুলিয়ার শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গত কয়েক দিন যাবৎ এ আন্দোলন চলছে, অথচ এখন পর্যন্ত নিয়ম অনুসারে অর্থাৎ শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকরা লিখিত বা অলিখিত কোনোভাবেই তারা সরকার এবং মালিক পক্ষের কাছে কোনো দাবি জানায়নি। এমনকি আন্দোলনরত শ্রমিকদের প্রতিনিধিরা চলমান আন্দোলন কি নিয়ে কিসের দাবিতে চলছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো দাবি-দাওয়ার বিষয়ে জানাতে পারেনি।
শ্রমিক ছাঁটাই এবং আন্দোলনরত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এই ব্যবস্থাটা মালিক পক্ষ নিয়েছে। এর সঙ্গে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই। মালিক পক্ষ তাদের প্রয়োজনে মামলা করেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো কারখানার শ্রমিকরা অসদাচরণ করে, শ্রম আইন বহির্ভূত আন্দোলন করে, অথবা সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কর্মবিরতি পালন করে, ক্ষতি করে বা উৎপাদন বন্ধ করে দেয় সেক্ষেত্রে কারখানার মালিক শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় আশ্রয় নিয়ে বা এই ধারার ঘোষণা দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে শ্রমিকরা কর্মবিরতির সময় বা কারখানা বন্ধ থাকায় কোনো বেতন-ভাতা পাবে না। এ ধারার আলোকেই বৃহস্পতিবার আশুলিয়ার গার্মেন্টস কারখানাগুলোর কিছু শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে বলে জানান চুন্নু। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী।