আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মধ্য এশিয়ায় থেকে আমেরিকার ছায়া কি ক্রমেই সরে যাচ্ছে? প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে মার্কিন কূটনীতি। ২০১৬-এর প্রেক্ষিতে প্রশ্নটির উত্তর, হ্যাঁ। সিরিয়ায় চার বছর পর গত কাল, বুধবার, আলেপ্পো আবার চলে এসেছে আসাদ বাহিনীর হাতে। আমেরিকার না-পসন্দ এই বাশার আল-আসাদকে পূর্ণ মদত দিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। আলেপ্পো ‘উদ্ধার’ যখন হব হব করছে, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে গত মঙ্গলবার মস্কোয় রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে আমেরিকাকে আমন্ত্রণই করা হয়নি। আমন্ত্রণ করা হয়নি জাতিসংঘকেও। এই বৈঠক নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বিদেশ সচিব জন কেরি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তার পরেও বৈঠক হয়েছে। আনন্দবাজার
খুব পিছিয়ে না গিয়ে, গত দু’দশকে মধ্য এশিয়ার রাজনীতির দিকে যদি তাকানো যায়, তবে ‘সর্ব ঘটে কাঁঠালি কলা’ আমেরিকার উপস্থিতি জ্বলজ্বল করছে। সব সঙ্কটে জড়িয়ে আছে আমেরিকা।
এমনকী আমেরিকাকেই বেশ কয়েকটি সঙ্কটের জনক বলা চলে। সেই আমেরিকাকে বাদ রেখেই সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা হচ্ছে। এবং এটা নিশ্চিত যে মস্কোর এই বৈঠক সিরিয়ায় আসাদের ক্ষমতাকে আরও শক্ত করতেই। পাঁচ বছর আগে যাঁকে ক্ষমতাচ্যূত করার ডাক দিয়েছিলেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
পরিবর্তনের ডাক দিয়ে ২০০৮-এ ক্ষমতায় এসেছিলেন ওবামা। সেই পরিবর্তনের অংশ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে আনা, ‘ব্রিং আওয়ার বয়েজ ব্যাক’। গত আট বছরে দু’টি কথা রেখেছেন ওবামা। কিন্তু ইরাকে মার্কিন সেনা সরে আসায় ক্ষমতার শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে। সেই জায়াগা দখল করে নিয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়াদের ক্ষমতার আধিপত্য। এই আধিপত্য ক্রমাগত বিছিন্ন করেছে সংখ্যালঘু সুন্নিদের। ফলে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ যখনই সুন্নিদের সামনে শিয়া আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সুযোগ দিয়েছে তা সদ্ব্যবহার করতে দ্বিধা করেনি সুন্নিদের একাংশ। পিছনে জনসমর্থন না থাকলে ইসালিমক স্টেটের (আইএস) ঝড়ের মতো উত্থান সম্ভব হত না। ওবামা ও ভাবে ইরাক থেকে তাড়াহুড়ো করে মার্কিন সেনা সরিয়ে না নিলে হয়ত আইএস-এর ঝড়কে প্রথমেই সামাল দেওয়া যেত। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ আসলে ওবামার সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছিল। পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী শিয়া-সুন্নি অক্ষের মধ্যে দিয়ে শান্তির পথ তৈরি করা। কিন্তু সেই পথ তো তৈরি হয়ইনি।
উল্টে মার্কিন কূটনীতির খামতি প্রকাশ পেয়েছে। ২০১১-তে সিরিয়ার গণবিক্ষোভ এবং আসাদের কঠোর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ওবামা, আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরানোর কথা প্রকাশ্যে বলেছিলেন। কিন্তু সেই কাজে মার্কিন সেনাকে সরাসরি নিয়োগ করা, যেমন সাদ্দামকে উৎখাত করতে বুশ করেছিলেন তা স্বপ্নেও ভাবেননি ওবামা। শুধু বিদ্রোহীদের অস্ত্র, অর্থ জোগানের পথেই হেঁটেছে আমেরিকা। আমেরিকার এই দোনামনা চিরাচরিত বন্ধু সুন্নি প্রধান সৌদি আরব, কাতারকে হতাশ করেছে। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ