ট্রাম্পের প্রশংসা করলেন সাদ্দাম কন্যা রাঘাদ
ডেস্ক রিপোর্ট: যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন ইরাকের সাবেক শাসক সাদ্দাম হোসেনের মেয়ে রাঘাদ হোসেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রাঘাদ ট্রাম্পের প্রতি আর আস্থার কথা জানান। ইরাকে ১৯৭৯ সালে ক্ষমতা দখল করেন সাদ্দাম হোসেন। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জতিক বাহিনী তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। এরপর তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। অভিযানে নিহত হন তার দুই পুত্রও। এরপর থেকে রাঘাদ জর্ডানে অবস্থান করছেন। যুদ্ধে তিনি তার স্বামীকে হারিয়েছেন। এখন সন্তান ও বন্ধুদের সঙ্গেই সময় কাটে তার। তবে নিজ দেশের জন্য মন কাঁদে তার। তিনি ইরাকে ফিরে যেতে চান। রাঘাদ বলেন, এই ইরাক আমার নিজের, পরিবারের এবং পূর্বপুরুষদের সবার। আমি কেন ফিরে যাওয়ার কথা ভাববো না? একদিন না একদিন ইরাকে ফিরে যাওয়ার বাসনা খুবই স্বাভাবিক। ইরাকে সহিংসতা একদিন থামবে বলেও আশা করেন রাঘাদ। বলেন, এখন যা হচ্ছে তা এক ক্ষণিকের ঘটনা। সেখানে আগ্রাসনের পর বিভ্রান্তির কারণে এসব ঘটছে। তবে এটা ইরাকের ভাগ্য হতে পারে না। এই যুদ্ধ চিরস্থায়ী হবে না। আমি কখনও আশা হারাতে পারি না। যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। তবে সাদ্দামের ফাঁসি কার্যকরের পর পর তিনি বলেছিলেন, ইরাকের জনগণের সদিচ্ছা ছাড়া আইনের শাসন কায়েম করা সম্ভব নয়। অবশ্য এখন বলা হচ্ছে, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। আর সাদ্দামের শাসনের অবসানের পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দেশটিতে। কোনোভাবেই সামাল দেয়া পারছে না দেশটির সরকার। সাদ্দাম কন্যা রাঘাদ আশা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পূর্বসূরির চেয়ে অন্য রকম হবেন। সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই লোকটি সবে নেতৃত্ব পেয়েছেন। কিন্তু মনে হচ্ছে তার উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা আছে। এটাই তাকে তার আগের নেতাদের চেয়ে আলাদা করেছে রাঘাদ বলেন, তিনি (ট্রাম্প) অন্যের ভুলগুলো তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে ইরাকের কথা উল্লেখ করেছেন। এর মানে, তিনি ইরাকে এবং বিশেষ করে আমার বাবাকে নিয়ে যে ভুল হয়েছে, তিনি এই বিষয়ে সচেতন আছেন। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচার চলাকালে জানিয়েছিলেন, তিনি ইরাকে যে যুদ্ধ হয়েছে তা সমর্থন করেন না। সাদ্দামকে বাজে লোক বললেও তিনি সন্ত্রাসীদেরকে খতম করেছিলেন বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প। সাদ্দাম কন্যা বলছেন, তিনি রাজনীতিতে জড়িত নন। তবে ইরাক সরকার অভিযোগ করছে রাঘাদ তার বাবার বাথ পার্টিকে সমর্থন দিচ্ছেন। তাকে ফিরিয়ে দিতে সে দেশের সরকারকে অনুরোধও করেছে ইরাকি সরকার। সম্প্রতি সাদ্দাম কন্যার বিরুদ্ধে জঙ্গি সংগঠন আইএসকে মদদ দেয়ার অভিযোগও করছে ইরাকি সরকার, যদিও তিনি সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সিএনএনকে সাদ্দাম কন্যা বলেন, আইএস বা অন্য কোনো উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে আমার অবশ্যই কোনো সম্পর্ক নেই। আমার পরিবারের কেউই উগ্রবাদী আদর্শে বিশ্বাস করে না। এর প্রমাণ হচ্ছে আমরা ইরাক ছাড়ার পরই এই উপদলগুলো শক্তিশালী হয়েছে। নিজের বাবার শাসনামলের প্রশংসা করে সাদ্দাম কন্যা বলেন, তার বাবা বেঁচে থাকলে আইএস কখনও ইরাকে প্রভাব বিস্তার করতে পারতো না। সমালোচকরা বলে থাকেন, দুই যুগের শাসনামলে সাদ্দাম হোসেন তার বিরোধীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছেন।
সাদ্দাম কন্যা এটা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, হ্যাঁ, কিছু নিষ্ঠুরতা হয়েছে এবং আমি এর সমর্থন করতে পারি না। তবে এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে ইরাকের মতো একটি দেশকে শাসন করা খুবই কঠিন। আর এখন মানুষ এটা বুঝতে পারছে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম