চাকরির বাজার দখল করে বৈষম্যকে চরমে নিচ্ছে রোবট হোয়াইট হাউস
পরাগ মাঝি: যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যেক প্রেসিডেন্টই আরও বেশি সংখ্যক চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করার ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মেক্সিকো এবং চীন আমেরিকার চাকরির বাজার চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে, এ দুইয়ের তালিকায় নতুন যে নামটি অন্তর্ভুক্ত করেছে খোদ হোয়াইট হাউস তা হলোÑ রোবট। ইয়াহু ফিন্যান্স’র একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমেরিকার দেশজ উৎপাদনের মাত্রা রেকর্ড ছুঁয়েছে। তবে, সে তুলনায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির বাজার বাড়েনি বরং নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। চাকরির বাজারকে অস্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে চীনের চেয়েও বেশি ভূমিকা রাখছে অটোমেশান। দেশটির প্রেসিডেন্ট অফিসের বরাত দিয়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এসব তথ্যের পাশাপাশি বলা হয়েছে, মানুষের বিকল্প বুদ্ধিসম্পন্ন যন্ত্র এবং প্রযুক্তি কয়েক মিলিয়ন মানুষকে চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলেছে। এক্ষেত্রে নিঃসন্দেহাতীতভাবে মানুষের চেয়ে যন্ত্রকেই চাকরি দাতারা বেছে নিচ্ছে। এভাবে চাকরির বাজারে বৈষম্য এবং অস্থিতিশীলতা বেড়েছে।
‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যন্ত্র এবং অর্থনীতি’ এই শিরোনামে হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘উনিশ শতকে আমরা প্রযুক্তির পরিবর্তন দেখেছি। এই পরিবর্তন নিম্ন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন শ্রমিকদের আরও বেশি পরিমাণে উৎপাদনশীল বানিয়েছে এবং এই প্রক্রিয়ায় সমাজে মধ্যবিত্ত সমাজের আবির্ভাব ঘটেছে। বিংশ শতকের শেষভাগে এসে দেখা গেছে, এই বিপ্লবটি অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকরা উৎপাদন বাড়াতে কম্পিউটারের শরণাপন্ন হচ্ছে। আর এখন সেই প্রযুক্তিই মানুষের চাকরি খেয়ে দিচ্ছে।’
হোয়াইট হাউস আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, আগামী দশকে ৯ শতাংশ থেকে অন্তত ৪৭ শতাংশ চাকরির বাজার দখল করবে রোবট। প্রযুক্তি চাকরির বাজারে মানুষের শ্রমের মূল্যও কমিয়ে দিচ্ছে। ইয়াহু নিউজ৯ বছরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ৪৫৭ জন নিখোঁজ
আজাদ হোসেন সুমন: গত ৯ বছরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ৪৫৭ জন নিখোঁজ হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে ৩৩২ জনের এখনো খোঁজ মেলেনি। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে বেশ কয়েকজনকে তুলে নেয়া হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে নিখোঁজ ৬০ জনের মধ্যে ৩২ জনের এখনো হদিস মেলেনি। বাকি ২৮ জনের মধ্যে সাতজনের লাশ পাওয়া গেছে। তিনজন ফিরে এসেছেন এবং ১৮ জনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার দেখিয়েছে। গত বছর নিখোঁজ হয় ৫৫ জন। তাদের মধ্যে আটজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সাতজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, ফিরে এসেছেন পাঁচজন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৩৫ জন। বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থা সূত্রে এ তথ্য জানাগেছে।
আরেক মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত গুম হয়েছেন ১৬৪ জন। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ৫৩, ২০১৪ সালে ৩৯ ও ২০১৫ সালে ৩৮ জন গুম হন। চলতি বছরের ১১ মাসে নিখোঁজ হয়েছেন ৭০ জন, যাদের মধ্যে ৩৪ জনকে গুম করার অভিযোগ আছে। ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে আবার অপহরণ, গুম ও গুপ্তহত্যার ঘটনা বেড়ে গেছে। সর্বশেষ গত সোমবার নাটোর পৌর যুবলীগের তিন নেতাকর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা থেকে। তারা হলেন নাটোর সদর উপজেলার কানাইখালী এলাকার রেদওয়ান আহমেদ সাব্বির (৩২), আবু আব্দুল্লাহ (৩০) ও সোহেল আহমেদ (৩২)। সাব্বির নাটোর পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। বাকি দুজন পৌর যুবলীগের কর্মী। ঘটনার দুই দিন আগে তারা নিখোঁজ হন।
গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ও পাবনায় আট শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের নিখোঁজ রহস্যের কিনারা এখনো হয়নি। গত ৪ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছে ২০টি পরিবার। এর আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে রাজধানী থেকে নিখোঁজ হয়েছেন সেই ২০ জন। দিন, মাস, বছর গড়ালেও নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাঝেমধ্যে নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে কারো কারো লাশ উদ্ধার হয়। তবে সেই হত্যার রহস্যও অজানাই থেকে যাচ্ছে। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধেই আটকের অভিযোগ উঠছে, তবে সেই অভিযোগেরও কোনো সুরাহা হয় না।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছে, পুলিশ, র্যাবসহ অন্য সংস্থাগুলো ঘটনার কার্যকর তদন্তই করে না। মানবাধিকারকর্মী ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, একের পর এক মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধারের ঘটনার সুরাহা না হওয়া চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা, জবাবদিহির অভাব, মানবিক বিপর্যয়সহ অনেক খারাপ দিক সামনে চলে আসছে, যা মানবাধিকার ও অপরাধের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। স্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রতিটি ঘটনা তদন্তের সুপারিশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ফাতেমা বেগম বলেন, অনেকেই দেখি পুলিশের বিরুদ্ধে পত্র-পত্রিকায়, সভামঞ্চে অভিযোগের কথা বলে, কোনো অপহৃত বা নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ যদি অবহেলা করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিধান আছে। কিন্তু কেউ কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না করে ঢালাও অভিযোগ করলে আমাদের কিছু করার থাকেনা।
এ ব্যাপারে মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যাডভোটে সিগমা হুদা বলেন, পুলিশের বড় কর্তারা বড়বড় বুলি আওড়ালেও বাস্তবের চিত্র ভিন্ন। তিনি বলেন, কোনো নিখোঁজ ব্যক্তির ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানা পুলিশ অভিযোগ আমলে নেয়না। তারা একটি জিডি করেই দায়িত্ব সারে। এক দু’টো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এসব অভিযোগ থানায় পড়ে থাকে বছরেরর পর বছর। এ ব্যাপারে সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত। তিনি আরো বলেন, একজন এসআই বা ইন্সপেক্টরের ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর এত বড় গুরুদায়িত্ব ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারি না থাকায় পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি ঘটছে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম