ভাঙন আতঙ্কে ৯ গ্রামের মানুষ
উজ্জল মাহমুদ, লোহাগড়া (নড়াইল) : বর্ষার পর এবার শুষ্ক মৌসুমে নড়াইলের লোহাগড়ায় মধুমতি নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ফলে মধুমতি নদী তীরবর্তী উপজেলার শিয়রবর, মাকড়াইল, কাশিপুর, রামচন্দ্রপুর, চর-শালনগর, চর-মাকড়াইল, নওখোলা, দিগনগর, কাতলাশুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। স্রোতের তোড়ে শালনগর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে এলাকার হাটবাজার, বাড়িঘর, দোকানপাট, মসজিদ, স্কুল, আবাদি জমি, ও রাস্তা। ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন দরে মধুমতির ভাঙন চললেও তা রোধে কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গতকাল ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙনের মুখে পড়ে এলাকাবাসী অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের ঘরবাড়ি। ভাঙন অব্যাহত থাকায় ভাঙন-আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এসব গ্রামের বাসিন্দারা। ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে কেউ প্রতিবেশি বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে, আবার কেউ বা রাস্তার পাশে ছাপড়া তুলে আশ্রয় নিয়েছেন। নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকে। তাঁরা মানবেতর দিন যাপন করছেন।
শালগনর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের আয়েশা বেগমের বাড়ি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ১৫ বছর বয়সে বউ হয়ে এখানে আসি। জমিজমাসহ শ্বশুর বাড়িতে সুখের সংসার ছিল। নদীর ভাঙনে সব হারিয়েছি। দুইবার বসতঘর সরাতে হয়েছে। এখন পরের জায়গায় ছাপড়া তুলে কোন রকম আছি। তাও সরিয়ে নিতে বলেছেন জায়গার মালিক। এখন কোথায় যাব?
একই গ্রামের মো. আমিনুর মোল্যার নিকট নদী ভাঙনের ভয়াবহতা জানতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাপ-দাদার সামান্য কৃষি জমি ছিল। সেই জমি চাষাবাদ করে বেঁচে থাকলেও তা এবার সর্বনাশা নদী গিলেছে। চার শতক জমিতে বসত ভিটা আছে।
শিয়রবর বাজারের ব্যবসায়ী নারায়ন চৌধুরী বলেন, শুরুতে বাজারটি প্রায় ২০ একর এলাকাজুড়ে ছিল। তৎকালিন সময়ে কয়েক জেলার মধ্যে এই বাজাটি ছিল অন্যতম। মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাঙনে এখন বাজারটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেলেও ভাঙন রোধে সরকারি কোন পদক্ষেপ আজও নিতে দেখা যায়নি।
একই বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার শেখ বলেন, চলতি বছরেই ভাঙনের কবলে পড়ে তিন বার দোকানঘর সরাতে হয়েছে। হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী রাজ্জাক মোল্যা বলেন, বাজারের এমন কোন দোকান নেই যে, ৩ থেকে ৪ বার সরাতে হয়নি।
এ বিষয়ে শালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খান তসরুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। বহু পরিবার বসত ভিটা হারিয়ে এখন নিঃস্ব। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দিনে দিনে এসব জনপদ বিলীন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে এবং আর্থিক সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা জানান, আমরা বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ইতি মধ্যে নদীভাঙন এলাকার মানুষকে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির আওতায় ১০ টাকার চাল যাতে পেতে পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের অবগত করেছি। নড়াইল পানি উন্নয়ন বের্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, আমরা ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ইতিপূর্বে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠিয়েছি। আশা করছি ভাঙন রোধে বিশেষ করে শিয়েরবর বাজার এলাকায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব। সম্পাদনা : তারেক