নূসরাত জাহান: সেন্সরের অভাব নেই, আছে হাইস্পিড ফোন ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট। এরপর কী আসবে? প্রযুক্তির চাকা তো থেমে থাকার পাত্র নয়। কৌতূহলী মনের খোরাক মেটালো বিবিসির প্রতিবেদন। তাতে জানা গেল বাজারে কড়া নাড়তে যাচ্ছে পোশাক ও জুতোর সেন্সর এবং অনুভূতি সম্পন্ন ভিআর সেট।
প্রযুক্তির নাম হেপটিক টেকনোলজি। শরীরের নানা জায়গায় ভাইব্রেশন ও স্পর্শ অনুভূতি দেওয়ার প্রযুক্তি এটি। এ নিয়ে কাজ করছে অস্ট্রেলিয়ার উইয়্যারেবল এক্সপেরিমেন্টস। আপাতত তারা এমন এক ইয়োগ প্যান্ট বানাচ্ছে যা পরিধানকারীকে সঠিক উপায়ে ব্যায়াম করতে ‘বাধ্য’ করবে। প্যান্টে থাকবে হেপটিক সেন্সর। পা কতটুকু বাঁকলো বা কোমর সঠিক নিয়মে সোজা হয়েছে কিনা সবই বুঝতে পারবে ওটা। ভুল হলেই জায়গামতো কেঁপে উঠবে। যতক্ষণ না পরিধানকারী ঠিক পজিশনে না যাচ্ছে ততক্ষণ ভাইব্রেশন চলতেই থাকবে। এই প্রযুক্তি কাজ করবে জুতার বেলাতেও। গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করার পর জুতোই বলে দেবে কোন দিকে যেতে হবে। পথে কোনো মোড় এসে পড়লে জুতোর ভাইব্রেশন দেখেই বুঝতে পারবেন কোন রাস্তায় যেতে হবে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের জেনেরিক রোবটস তৈরি করেছে সিমু টাচ নামে প্রযুক্তি নিয়ে। ডাক্তারদের জন্য এ প্রযুক্তি। সার্জন ও ডেন্টিস্টদের জন্য প্রশিক্ষণ প্লাটফর্ম এটি। ভার্চুয়াল অস্ত্রোপচারে সত্যিকারের আবহ ও পরিবেশ তুলে ধরবে এটি। সঙ্গে দেবে স্পর্শের অনুভূতিও। আর এর জন্য ব্যবহারকারীকে পরতে হবে এক্সোস্কেলেটন গ্লাভস। ফ্রান্সের এই আরভি (হেপটিক ভিআর) নামের একটি প্রতিষ্ঠানও একই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।
ভিআর-এ হেপটিক প্রযুক্তি আসলে কী হবে?
হেডসেট পরে ভার্চুয়াল জগতে এখন শুধু সত্যিকারের দেখার অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। হেপটিক গ্লাভস বা এ ধরনের কোনো সেন্সর এসে গেলে স্পর্শের অনুভূতিও মিলবে। এর জন্য মস্তিষ্কের উদ্দীপনা তৈরির মতো বৈদ্যুতিক প্রবাহ কিংবা আল্ট্রাসাউন্ড নিক্ষেপ করার মতো বাড়তি যন্ত্র পরতে হবে ব্যবহারকারীকে। গোট টাচ ভিআর ডট কম নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। তবে তাদের প্রযুক্তিতে সরাসরি মস্তিষ্কে সিগনাল পাঠানো হয় না। আপাতত হাতের ত্বকে ও আঙ্গুুলে কৃত্রিম পদ্ধতিতে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে স্পর্শের অনুভূতি দিতে পারে এমন ভিআর বানাচ্ছে তারা। অর্থাৎ এই ভিআর পরার পর কেউ যদি একটা বল স্পর্শ করে, তবে সেটা প্লাস্টিকের নাকি কাঠের সেটা বোঝা যাবে না, তবে বল যে ধরেছে সেটা বুঝতে পারবে। গো টাচ ভিআর-এর প্রতিষ্ঠাতা এরিক ভেজোলি জানিয়েছেন, ‘আমাদের দর্শন ও দেখার অনুভূতির যে পদ্ধতি নিয়ে আমাদের যে জ্ঞান, এই মুহূর্তের হেপটিক সিস্টেমটা তার ধারে কাছেও নেই। (মূল প্রযুক্তি আবিষ্কারের পর) শব্দদূষণ মুক্ত ব্লুটুথ হেডফোন ও ভিআর আসতেও কিন্তু একশ বছর লেগে গেছে।”
মোটকথা, প্রযুক্তির মাধ্যমে সত্যিকারের স্পর্শ-অনুভূতি দিতে চাইলে ডিজাইনার ও ডেভেলপারদের আগে সত্যিকারের স্পর্শানুভূতির বৈজ্ঞানিক ফর্মূলাটা বের করতে হবে। জানতে হবে ওই স্পর্শ আমাদের আবেগকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, সেটাও।
সম্পাদনা:এ কে আজাদ।