বড়াইগ্রামে খ্রিষ্টানপল্লীতে বড়দিনের আমেজ নেই
তাপস কুমার, নাটোর : নাটোরের বড়াইগ্রামের জোয়াড়ি ইউনিয়নের কুমরুল ও বনপাড়া পৌরসভার হঠাৎপাড়া দরিদ্র আদিবাসী পল্লীতে বড়দিনের কোন আমেজ নেই। পল্লীর মধ্যে গীর্জাঘরেও বড়দিনের কোন সাজ নেই। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসবে এসব আদিবাসীদের কথা ভাবারও যেন কেহ নেই। বড়দিনের তাদের ভাগ্যে মেলেনি কোন সরকারি বা ব্যক্তিগত অনুদান। ফলে প্রার্থনা ও কোন রকম ভাল খাবারের ব্যবস্থা করে বড়দিন পালন করার চেষ্টা চালাচ্ছে পরিবার প্রধানেরা। সরেজমিনে কুমরুল আদিবাসী পল্লীতে গিয়ে দেখা গেছে, বড়দিন পালন করার জন্য ঘর- দোর পরিস্কার করছেন নারীরা। ওই পল্লীর মধ্যে রয়েছে টিনসেড বিল্ডিং একটি গীর্জাঘর। বড়দিন উপলক্ষে গীর্জা ঘরের ভিতরে যতসামান্য রঙ্গীন কাগজ লাগিয়েছে স্থানীয় আদিবাসী যুবক-যুবতীরা। গীর্জার বাইরে নেই বিন্দুমাত্র সাজ-সজ্জা।
পল্লীর প্রামাণিক (মাতব্বর) সলেমান বিশ্বাস জানান, এই পল্লীতে পাহাড়িয়া গোত্রের আদিবাসীদের বসবাস শুরু হয়েছে প্রায় ৫০ বছর আগে থেকে। এখানে প্রায় একশ পরিবার খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী। এই পল্লীর নারী-পুরুষদের পেশা দিনমজুর। অতিদরিদ্র এই আদিবাসী পল্লীর কথা কেহ ভাবে না। বড়দিন উপলক্ষে পল্লীর বাসিন্দাদের আয়োজন কি জানতে চাইলে তিনি জানান, গরীব মানুষ, দিন আনি দিন খাই। রাতে গীর্জায় গিয়ে সকলে প্রার্থনা করবে, কীর্তন করবে। বড়দিনে সবাই চেষ্টা করছে একটু মাংস-ভাত জোগাড় করতে। তবে অনেক মা-বাবাই সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে শিশুদের জন্য কম দামী নতুন কাপড়-চোপড় কিনলেও নিজের বা বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য কিনতে পারেনি।
অষ্টম শ্রেণীতে পড়–য়া তমা বিশ্বাস জানায়, বাজারের কাপড়ের অনেক দাম। কেনার মতো যথেষ্ট টাকা তার বাবার ছিলো না, ফলে কেনা হয়নি।
গৃহিণী লিপি বিশ্বাস জানান, ছোট দুইটি ছেলেকে চার’শ টাকা দিয়ে কাপড় কিনে দিয়েছি। চেষ্টা করেছিলাম শ্বশুর-শাশুড়িকে দিবো। কিন্তু বড়দিনের জন্য মাংস কিনতে গিয়েই নয়শ টাকা খরচ হয়ে গেছে। তাই আর কোন পোশাক কেনার সাহস পেলাম না।
কুমরুল আদিবাসী পল্লীর মতোই একই চিত্র হঠাৎপাড়া পল্লীতে। সেখানে পাহাড়িয়া ও সাওতাঁল গোত্রের আদিবাসী খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক পরিবার বাস করছে। সেখানকার বাসিন্দা ফিলিপ বিশ্বাস ভরাক্রান্ত মনে জানান, আমাদের আবার বড়দিন আছে নাকি। আমরা কিভাবে আছি, কিভাবে বড়দিন পালন করবো তার খোঁজ-খবর নেয়ার কেহই নাই। সম্পাদনা : তারেক