সাংবাদিকতায় ‘ভুল স্বীকার’ কালচার : ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদকদের প্রতি আমার খোলা চিঠি
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী, ব্যবসায়ী, আওয়ামী লীগের সাবেক আন্তর্জাতিক সম্পাদক সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘আমার কথা’। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকা-, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন। এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি ‘আমাদের অর্থনীতি’ ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। আজ পড়–নÑ সাংবাদিকতায় ‘ভুল স্বীকার’ কালচার : ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদকদের প্রতি আমার খোলা চিঠি।
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, সবাই ভলো আছেন এবং পেশাদারিত্বের সমন্বয় ঘটিয়ে অর্পিত দায়িত্ব যথারীতি পালন করে চলেছেন। আমি একজন ব্যবসায়ী হলেও সমসাময়িক বাংলাদেশ এবং বিশ্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখার চেষ্টা করি। বলতে পারেন- এটা আমার শখ বা ঐড়ননু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন আমি পত্রিকা সম্পাদনা ও লেখার সাথে জড়িত ছিলাম। তারপর ব্যবসা, রাজনীতি এবং মন্ত্রী থাকাকালীন সময় থেকে এ বিষয়ে আমি সবসময় খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করেছি। নিজে একজন লেখক হিসেবে বহু বই প্রকাশ করেছি। মিডিয়ার কর্নধার না হলেও, মিডিয়ার গতি-প্রকৃতি, মিডিয়ার বিকাশ এবং মিডিয়ায় অবদান আমি কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছি। সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব আমাকে চমৎকৃত করে- আমার ভালো লাগার এটি একটি দিক। মিডিয়ায় আপনাদের আজকের অবস্থান, আপনাদের দক্ষতা এবং পেশাদারিত্ব সবার সঙ্গে আমাকেও মুগ্ধ করেছে। মিডিয়া জগতে আপনাদের সাফল্য ও অবস্থান গর্বের বিষয়। আপনাদের আমি অভিনন্দন জানাই।
ডেইলী স্টারের ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে ০৩/০২/১৬ তারিখে এটিএন নিউজ-এ একটি টকশো’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সম্পাদক মাহফুজ আনামসহ আরও দু’জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। ডেইলী স্টারের এ আলোচনায় সম্পাদক জনাব মাহফুজ আনাম ১/১১-এর সময় একটি সংবাদ ভেরিফাই না করে তার পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়াকে সাংবাদিক জীবনে ভুল হিসেবে স্বীকার করেছেন। মিডিয়া জগতে অন্তঃত একটি ভুল স্বীকারের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। মাহফুজ আনামের ভুল স্বীকারের প্রেক্ষিতে ০৯/০২/১৬ তারিখ রাতে “সাংবাদিকতায় ভুল স্বীকারে মহত্ত্ব” শীর্ষক এক আলোচনাও আমি এটিএন নিউজে প্রত্যক্ষ করেছি। সাংবাদিকতা পেশায় ‘ভুল স্বীকার’-এর যে পথ সৃষ্টি হয়েছে, দুয়ার খোলা হয়েছে- এ দুয়ার খোলা বাংলাদেশের মিডিয়া ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
জনাব মাহফুজ আনাম-এর ভুল স্বীকারের প্রেক্ষিতে আমার মনে অনেক কথা উদয় হয়েছে। মিডিয়ার অসত্য খবরে আমার অনেক রাতের ঘুম হারাম হয়েছে। আমাকে আত্মীয়-স্বজন, ব্যবসায়ী পার্টনার, বিদেশি উদ্যোক্তা এবং দেশবাসীর কাছে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়েছে। মিডিয়ায় নিজের সম্পর্কে অসত্য খবরে আমি কষ্ট পেয়েছি, ব্যথিত হয়েছি। সেদিনগুলোর কথা মনে হলে আজও মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। মন বিষাদে ভরে উঠে। এ বিষয়ে আমি কারও প্রতি অভিযোগ করছি না। আমি এসব কষ্ট, বেদনা ভুলে যেতে চাই। কাজ দিয়ে, ব্যবহার দিয়ে আমি মিডিয়ায় প্রকাশিত অসত্য খবরকে- অসত্য প্রমাণের চেষ্টা করেছি- সত্যিকার কথা উপস্থাপন করেছি। আমার স্বভাবসুলভ আচরণের এটা বহিঃপ্রকাশ। মনের মধ্যে চেপে থাকা কথাগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। কোনো ব্যক্তি বা কোনো সম্পাদক ও সাংবাদিক আমার কথায়, আমার লেখায়- কষ্ট পাক, ব্যথিত হোক- এটা আমার কাম্য নয়। সাংবাদিকতায় ভুল স্বীকারের যে কালচারের নতুনমাত্রা সংযোজন হয়েছে- তারই প্রেক্ষিতে আমি সবিনয়ে আমার প্রতি অন্যায়-অবিচারের বিষয়টি তুলে ধরার প্রয়াসেই আমার লেখা, কিছু বলা। আশা করি, বিদগ্ধ ও সমাজে উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত শ্রদ্ধেয় সম্পাদকগণ বিষয়টি উপলব্ধি করবেন এবং আমাকে সেভাবে মূল্যায়ন এবং বুঝার চেষ্টা করবেন।
সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। গণতান্ত্রিক দেশে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা- রাজনৈতিক নেতৃত্বকে পরিবর্তন করে, মিডিয়া মানুষের জন্য তথ্য প্রকাশ করে এবং এর মাধ্যমে মানুষের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। এ আলোকে মিডিয়ার গুরুত্ব অ-নে-ক অ-নে-ক বেশি। আজ বাংলাদেশে গণমাধ্যম বড় শক্তি, শিক্ষার অন্যতম বাহন। প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বদৌলতে পত্রিকায় বিভিন্ন প্রবন্ধ লেখা, সংবাদ ও টকশো আলোচনা শিক্ষার বাহন হিসেবে কাজ করছে। জনসচেতনায় অবদান রাখছে। এসব লেখা ও আলোচনায় প্রায়ই বিজ্ঞ ও সিনিয়র সাংবাদিকদের বক্তব্যে বর্তমান মিডিয়া জগতের উন্নয়নের কথা যেমন শুনি, তেমনি কতিপয় সাংবাদিক ও মিডিয়ার অপসংবাদের কথাও জানি। সাংবাদিকরা নিরপ্রেক্ষ থাকলে, সৎ থাকলে সত্য ও ভাল কিছু প্রত্যাশা করা যায়। কিন্তু অপ-সাংবাদিকতার কারনে, দলদাস সাংবাদিকদের ভীড়ে এ সত্য ও ভাল কাজ বিলুপ্তির পথে। কতিপয় সাংবাদিক আজ রাজনৈতিক দলের ব্যানারে সাংবাদিকতা করছেন। দলের হয়ে দলের অন্যায় ও স্বৈরতান্ত্রিক আচরনের পক্ষে কথা বলছেন, আন্দোলন করছেন- আর বিনিময়ে পদ-পদবী ও সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। এ দলে আবার যোগ দিয়েছেন কতিপয় সুশীলসমাজ ও বুদ্ধিজীবীরা। সিনিয়র সাংবাদিকদের ভাষায় “বর্তমানে সংবাদপত্রের বিকাশের পাশাপাশি সংবাদপত্রে এক ধরনের অপসংবাদ ও সাংবাদিকতা দেশের সংবাদপত্র জগতকে বিতর্কিত করছে। সংবাদপত্র জগতে এক ‘অপসংস্কৃতি’র জন্ম দিচ্ছে। কতিপয় সাংবাদিক, সাংবাদিকতার সত্য পেশাকে কলুষিত করে একে অন্যায় ও অবৈধ আয়ের উৎস হিসেবে গ্রহণ করছে, মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করছে”।
অসত্য ও ব্লাকমেইলিং রিপোর্টের প্রভাব সমাজ, দেশ ও ব্যক্তির জন্য কতটুকু ক্ষতিকর ও এর প্রভাব কতটুকু বিস্তৃত- তা বাংলাদেশের মানুষ এবং রাজনীতিবিদরা ১/১১-এর সময় হাঁড়ে হাঁড়ে উপলব্ধি করেছে যার ক্ষতি এখনও বাংলাদেশ বয়ে বেড়াচ্ছে। অপ-সাংবদিকতা ও ‘দলদাস’ সাংবাদিকদের কারনে জাতি আজ বিভাজিত হয়ে পড়েছে। কতিপয় দলদাস সাংবাদিকের কারনে সাংবাদিক সমাজ জাতির শত্রু হিসেবে নিজেদের চিহ্নিত করছেন। এটা কোন সত্যিকার সাংবাদিক ও জনগণের কাছে কাম্য নয়। সাংবাদিকদের এ ‘দলদাস’ হওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। জাতির স্বার্থে দলদাস বা দলবাজীর রাজনীতি বন্ধ করে দেশের উন্নয়নে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হবে। আপনারা জানেন, আমার ব্যবসায়ী ও মন্ত্রিত্ব জীবনে আমি কিভাবে মিডিয়ার অপপ্রচারের শিকার হয়েছি। মিডিয়া কিভাবে অন্যায়ভাবে আমার সুনাম নষ্ট করে, আমার ব্যবসাকে ক্ষতিগস্ত করেছে। আমাকে নানাভাবে হয়রানি করেছে।
আপনারা জানেন, আমাকে নিয়ে কতিপয় পত্রিকা কিভাবে নেতিবাচক, অসত্য সংবাদ পরিবেশন করেছে, টকশো’তে আলোচনা হয়েছে- কিভাবে পদ্মা সেতুতে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে, আমি কোনো অন্যায়, অনিয়মে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও কিভাবে কতিপয় পত্রিকা আমাকে মিথ্যা খবরের শিরোনাম করেছে, কিভাবে বিশ্বব্যাংককে আমার বিরুদ্ধে একহাট্টা হওয়ার শক্তি যুগিয়েছে এবং বিশ্বব্যাংকের একজন বিশিষ্ট আইনজীবী মি. ওকাম্পো’র সাথে কোনো একজন সাংবাদিক ঢাকায় পৃথক বৈঠক করেছেন- বৈঠকে আমাকে জড়িত করার কায়দা বা ফর্মূলা বাতলিয়েছেন না বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে, না বিশ্বব্যাংককে রক্ষায় বুদ্ধি দিয়েছেন? এক্ষেত্রে আজ আমি বিশ্বব্যাংক সম্পর্কেও অভিযোগ করতে চাই না- তারা বাংলাদেশ মিডিয়ার অসত্য খবরে প্রভাবিত হয়ে কাজ করেছে। সরকারকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে- এগুলো ইতিহাস। কিন্তু শেষাবদি দেখা গেল- আমি কোনো অন্যায় কাজে সম্পৃক্ত ছিলাম না। পদ্মা সেতুতে কোনো অনিয়ম হয়নি। দুর্নীতি হয়নি। কিন্তু ফলে কি হলো- আমি ক্ষতিগ্রস্ত হলাম, অপমানিত হলাম। দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলো। পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন পিছিয়ে গেল। এর দায় কার? ওয়ান ইলেভেনের ভূমিকার জন্য আজ ভুল স্বীকার করা হয়েছে- আমার প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে- আমাকে লেখার মাধ্যমে, বিশ্বব্যাংককে সহায়তার মাধ্যমে- যে অন্যায় করা হয়েছে- তার জন্য কি আপনারা যাঁরা প্রভাবিত হয়ে অসত্য খবর প্রকাশ করেছেন, তাঁরা কি আমার কাছে, দেশের কাছে দুঃখবোধ প্রকাশ করবেন? মিডিয়ায় টকশো আলোচনায়ও আমাকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলা হয়েছে- হয়তো না বুঝে বা প্রভাবিত হয়ে- তার জন্য কি আমি কোনো সহানভুতি আপনাদের কাছে পেতে পারি না? আপনার বা আপনাদের একটু উপলব্ধিবোধ- আমার হারানো সম্মান ফিরে দিতে না পারলেও অন্তঃত আমি একটু ‘সান্ত¦না’ পেতাম। এটাই বা কম কিসে?
পদ্মা সেতুতে অর্থ সহায়তা বন্ধ করে যে ভুল বিশ্বব্যাংক করেছে- তার জন্য বিশ্বব্যাংক আজ অনুতপ্ত। বিশ্বব্যাংক উপব্ধি করেছে- অসত্য অভিযোগ ও বাংলাদেশের কতিপয় পত্রিকার মিথ্যা সংবাদে প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া তাদের আদৌ উচিত হয়নি। আমার প্রতি অন্যায় ও অমানবিক আচরণের জন্য বিশ্বব্যাংক এখন
চরম অনুতপ্ত। অথচ দেশের কতিপয় পত্রিকা, যেভাবে নানা ইস্যুতে আমাকে ঘিরে যে অসত্য খবর পরিবেশন করেছে- তা ছিল অকল্পনীয়। ডেইলী স্টার পত্রিকার একজন সিনিয়র সাংবাদিক আছেন- যিনি অসত্য খবর পরিবেশনে সিদ্ধহস্ত, তিনি নীতিভ্রষ্ট ও ন্যায়ভ্রষ্ট একজন সাংবাদিক। তিনি আমার ব্যবসায়িক বিষয়েও হস্তক্ষেপ করেছেন। চায়নার কোনো প্রতিষ্ঠান বিড করলেই আমার নাম, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান- সাকো’র নাম জড়িয়ে প্রতিবেদন করেছেন। বিদ্যুৎখাতসহ সাকোর প্রতিটি টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার আগে এমনভাবে প্রতিবেদন করা হয়েছে- যাতে প্রক্রিয়াটি ভ-ুল হয় এবং অন্য দরদাতার স্বার্থ রক্ষিত হয়। এছাড়া, পদ্মা সেতুর পরামর্শ নিয়োগে দরপ্রস্তাব পাওয়া গেছে ৩৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার। কয়েকটি বিশেষ পত্রিকার অভিযোগ পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে ৩৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার ঘুষ লেনদেন হয়েছে। এটা কি সম্ভব? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য! ৩৭ মিলিয়ন ডলারের কাজে ৩৫ মিলিয়ন খেয়ে ফেলা? এর সূত্র ধরে টকশো’তে গুনীজনরা ৩৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ লেনদেনের অসত্য ঘটনা নিয়ে অবাস্তব কথা বলেছেন। তাঁরা এ অসম্ভব ঘটনার, অসত্য ও কাল্পনিক ঘটনার সত্যতা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। তাদের এই কাল্পনিক বক্তব্য প্রমাণ করে পদ্মা সেতু এবং আমি অপপ্রচারের শিকার।
আপনারা জানেন, যেহেতু আপনারা মিডিয়া জগতের মানুষ, দেশের বোদ্ধামহল, কিভাবে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে, ব্যবসায়িকভাবে পত্রিকাগুলো, মিডিয়া আমার চরিত্রহরণে অসত্য খবর প্রকাশ করেছে- টকশো’তে দিনে-রাতে আমাকে নিয়ে, অসত্য খবরের ভিত্তিতে আলোচনা করেছে।
পদ্মা সেতুর অভিযোগে কানাডার ১০০০ পৃষ্ঠার পুলিশ-রিপোর্টে বাংলাদেশের পত্রিকার কাটিং ইংরেজী অনুবাদসহ এবং ডেইলী স্টার-এর অসত্য সংবাদের কাটিং সংযুক্ত ছিল বলে আমাকে অনেকেই বলেছেন;
আমি যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালীন মন্ত্রীর অফিস সংস্কার ও গাড়ি ক্রয়- যে গাড়ি আদৌ কেনা হয়নি- অসত্য রিপোর্ট প্রতিনিয়ত প্রকাশ হয়েছে;
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরিত সড়ক সংস্কার বিষয়ে একটি সার-সংক্ষেপ নিয়ে কতিপয় পত্রিকার অসত্য রিপোর্ট সংসদের নজরে এনে তা নিয়ে সংসদে উত্তপ্ত আলোচনা- এ নিয়ে মধ্যরাতে টকশো। আবার ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অবকাঠামো মেরামত ও সংস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সার-সংক্ষেপ পাঠানো হয়। তা নিয়েও পত্রিকায় অসত্য রিপোর্ট প্রকাশ হয়। সংসদে সমালোচনার ঝড় বয়। অনেক পত্রিকা আমাকে এবং তোফায়েল ভাইকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে- তার কোনো ভিত্তি ছিল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে এ বিষয়ে কথা বলায় চড়রহঃ ড়ভ ঙৎফবৎ-এ আমি বক্তব্য দিতে পারিনি। অথচ সে সার-সংক্ষেপে এমন কিছু ছিল না যা নিয়ে সংসদে উত্তপ্ত আলোচনা হতে পারে। অথচ পত্রিকার অসত্য সংবাদ নিয়ে আমার সম্পর্কে নেতিবাচক সমালোচনা হয়েছে। আমার পদত্যাগের ক্ষেত্র তৈরির ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। যে সার-সংক্ষেপটি বক্তব্য নিয়ে এতো হুলস্থুল- সেটি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট নথিতে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এবং আমার লেখা ‘আমি ও জবাবদিহিতা’ বইয়ের ৬৮৮ পৃষ্ঠায় সংযাজিত আছে। মূলত পত্রিকাগুলো মনগড়া, বনোয়াট ও অবাস্তব তথ্য দিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে রিপোর্ট করেছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীর নিহত হওয়ার দায় আমার উপর চাপিয়ে মিছিল, মানববন্ধন, শহীদ মিনারে শিশুদের গলায় ‘যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই’ ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক মধ্যরাতের টকশো’-তে আমাকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে আমার পদত্যাগ চাইলেন। অন্য একজন বড়মাপের সাংবাদিক ব্যানার হেডে প্রতিবেদন প্রকাশ করে
আমার পদত্যাগ কনফার্ম করতে চাইলেন। এ সড়ক দুর্ঘটনায় আমি মর্মাহত, দুঃখিত ও ব্যথিত হয়েছি। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়, রাস্তা নয়, ড্রাইভারের গাফিলতিই এর জন্য দায়ী। অথচ আমাকে নিয়ে মিডিয়ার যে বাড়াবাড়ি ছিল- তা কি অস্বীকার করবেন? কিন্তু এ দুঃখজনক সড়ক দুর্ঘটনার পর এবং আমার পদত্যাগের ৭ দিনের মাথায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে- এক সাথে একই স্পটে ১৪ জন মানুষের জীবন চলে গেল। মন্ত্রীর ছেলে, এমপির ছেলে নিহত হলো কিন্তু এর জন্য কোনো মিছিল হয়নি- কোনো পদত্যাগের প্রশ্ন আসেনি- তাহলে কি পদ্মা সেতু নির্মাণ বন্ধ ও আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা ছিল- কিন্তু কেন? আমি কি কারো ক্ষতি করেছি, দেশের ক্ষতির কোনো চেষ্টা করেছি।
গ্রামের বাড়ি কালকিনিতে আমার কর-পরিশোধিত অর্থে বাড়ি করেছি- তা নিয়ে দেশের একটি প্রথম সারির পত্রিকা ব্যানার হেড করেছে- আপনারাও কেউ কেউ তা টকশো’তে আলোচনায় এনেছেন। নিজ গ্রামে বাড়ি করার সামর্থ্য, ‘আল্লাহ’ কি আমাকে দেয়নি?
ওয়ান-ইলেভেন ছিল- বাংলাদেশের জন্য একটি কালো অধ্যায়। এ সময় আমাকে দুর্বিষহ কষ্ট ও নির্যাতন সইতে হয়েছে। আমার পুরো পরিবার- সহধর্মিণী, দুই মেয়ে, আমার বড় ভাই, বড় বোনের ছেলে, আমার সহধর্মিণীর ভাইসহ আত্মীয়-স্বজনের হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। হয়রানির শিকার হতে হয়েছে আমার অফিসের লোকজনেরও। আওয়ামী লীগ ছাড়তে রাজি না হওয়ায়- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলতে রাজী না হওয়ায়- আমাকে ১/১১ কুশিলবদের রোষানলে পড়তে হয়। আমাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়। আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়। দুদকের দ্বিতীয় তালিকায় আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পত্রিকার অসত্য রিপোর্টের কাটিং গ্রহণ করে দীর্ঘ তদন্ত হয়- তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই। একজন মানুষকে- সৎ ও স্বচ্ছ মানুষকে যন্ত্রণা দেওয়ার আর কি বিষয় হতে পারে? একটু ভাবুন।
পদ্মা সেতুর বিষয়ে দুদক যখন আমাকে অফিসে সাক্ষাতকারের জন্য ডাকে- তখন মিডিয়া কিভাবে এ সংবাদ সংগ্রহে হুমড়ি খেয়ে পড়ে, আমার আসা-যাওয়া পথের লাইভ কাস্ট করে ইলেকট্রনিক মিডিয়া,
অদ্ভুত প্রশ্ন করে আমাকে বিব্রত করে। একজন ব্যক্তির পক্ষে, আমার কাছে এটি কত দুর্বিষহ, কত মনস্তান্তিক চাপ- তা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারছেন।
পরবর্তীতে পদ্মা সেতুসহ পত্রিকার অসত্য রিপোর্ট আমলে নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক তদন্ত হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে সব মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আমার জন্ম থেকে ১/১১ পর্যন্ত মিডিয়ার বদৌলতে অসত্য খবর নিয়ে ব্যাপক তদন্ত হয়- তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই। তৎপরবর্তী একই বিষয় এবং পদ্মা সেতু যোগ করে দুদক আবার ব্যাপক তদন্ত করে- তাতেও আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই। কানাডার মামলায় আমাকে সম্পৃক্ত করা হয়নি- আন্তর্জাতিক ব্যাপক তদন্তে আমাকে সম্পৃক্ত করার কোনো উপাদানও পাওয়া যায়নি।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সংবাদপত্রে প্রকাশিত অসত্য খবরের উপর ভিত্তি করে একটি ‘শ্বেতপত্র’ তৈরি করে। এই শ্বেতপত্রে আমার বিরুদ্ধে পত্রিকার অসত্য রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যাপক তদন্ত হয়। তদন্ত করে এর কোনো সত্যতা পায়নি।
মন্ত্রী থাকাকালীন আমি চেষ্টা করেছি- বাংলাদেশে একটি সমন্বিত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। পদ্মা সেতু দ্রত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি- এলিভিটেড এঙ্খপ্রেসওয়ে, উড়াল সেতু, মেট্রো রেল প্রকল্প ও ৪-লেনের সড়ক নির্মাণসহ অসংখ্য প্রকল্প গ্রহণ করেছিলাম। এসব প্রকল্প নিয়ে এখন গর্ব করা হয়- যা নিয়ে দেশবাসীর মনে আশাবাদের জায়গা তৈরি হয়েছে। অথচ এসব প্রকল্প গ্রহণের ২/৩ মাস না যেতেই পত্রিকায় খবর শিরোনাম করে-
কাজ এখনো শুরু হয়নি? কি আশ্চর্য, এভাবে কি কাজ হয়- না কখনো হয়েছে? আমাকে বিতর্কিত করতে- মিডিয়া সেসময় নেতিবাচক কাজ করেছে।
আপনাদের হয়তো মনে আছে- পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে অব্যাহত অভিযোগ প্রকাশ হতে থাকলে আমি এর প্রতিবাদ জানিয়ে কয়েকটি পত্রিকায় চিঠি দিয়েছি। পত্রিকার অভিযোগ ও রিপোর্টের সত্যতা প্রমানের আহবান জানিয়েছি। আমি সংশ্লিষ্ট সম্পাদকদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম- আসুন, ১৯৯১ সালে আমি রাজনীতিতে যোগদানের পর থেকে আমার ব্যক্তিগত বিষয় ও পদ্মা সেতুসহ যত বিষয় নিয়ে অন্যায়ভাবে আমাকে জড়িয়ে যেসব পত্রিকায় রিপোর্ট করা হয়েছে- সেগুলোর সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক ও আমার যৌথ স্বাক্ষরে ‘দুদক’-কে দিয়ে তদন্ত করাই। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোনো সম্পাদক আমার আহবানে সাড়া দেননি।
আপনারা জানেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অসত্য অভিযোগের ফলে সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে এক অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিশ্বব্যাংক বলে, আমি পদত্যাগ করলে- বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করবে? এমন এক পরিস্থিতিতে আমি দেশের স্বার্থে স্বেচ্ছায় মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলাম- কিন্তু আমার স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য প্রশংসা না করে কতিপয় মিডিয়া আমার সমালোচনায় হুমড়ি খেয়ে পড়লেন? বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী চেহারা কিসের বার্তা দেয়? আমার পদত্যাগের শর্ত ছিল- তাদের কাছে অজুহাত মাত্র।
ব্যক্তি জীবনে আমি একজন সাধারণ মানুষ। ছোটবেলা থেকে আদর্শ ও নৈতিকতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। পারিবারিক মূল্যবোধ আমার কাজের সঙ্গী। নিজের অধ্যবসায়, চেষ্টা, কঠোর শ্রম, আন্তরিকতা ও সততার মাধ্যমে নিজেকে আজকের অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছি। স্কাইলাস বলেছেন, “কথা ও কাজে সততাই চরিত্রের মেরুদ-।” কথা ও কাজে সততা বজায় রেখে আমি বড় হয়েছি। কাউকে প্রতারিত করে, কাউকে বঞ্চিত করে, কাউকে কষ্ট দিয়ে আমি কিছু অর্জন করেনি। আমি মনে করি, বিনা পরিশ্রমে যা অর্জিত হয়, তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আমি কষ্ট করে, সৎ পথে সম্পদ অর্জন করেছি। মানুষ, সমাজ ও দেশের উন্নয়নে নিবেদিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনের কর্মকা-ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সততা নিশ্চিত করে কাজ করেছি। আমি আমার কর্মজীবনকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে গড়ে তুলেছি। আমি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী একজন পরিছন্ন মানুষ। কোনোদিন, কোনো অন্যায়কে, অবৈধ কাজকে প্রশ্রয় দেইনি। সরকারি নিয়মকানুন, বিধি, উপবিধি ভঙ্গ করে মন্ত্রী থাকাকালীন কোনো নথিতে স্বাক্ষর করিনি। কারও কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করিনি। কাউকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করিনি। কাউকে কোনো বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিতে কোন উদ্যোগ নেইনি। শিক্ষাজীবন যেমন ছিল আমার পরিছন্ন, তেমনি যখন ব্যবসা করেছি তখনও আমার সুনাম ছিল সুবিদিত। রাজনীতি করতে এসে জনপ্রতিনিধি বা এমপি নির্বাচিত হওয়া এবং মন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে আলোচনা, সমালোচনা এবং মিডিয়ার অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি পরিলক্ষিত হয়েছে। জানি না, এটা দেশের রাজনীতির খেলা কিনা; বা একে রাজনীতির অপসংস্কৃতি- বলা যায় কিনা?
আমি সাংবাদিকদের স্বাধীনতায়, মিডিয়ার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এ প্রসঙ্গে ভল্টেয়ার-এর একটি বিখ্যাত উক্তি উদ্ধৃত করে বলতে চাই- ও ফরংধঢ়ঢ়ৎড়াব ড়ভ যিধঃ ুড়ঁ ংধু, নঁঃ ও রিষষ ফবভবহফ ঃড় ঃযব ফবধঃয ুড়ঁৎ ৎরমযঃ ঃড় ংধু রঃ. এ উক্তি আমি সমর্থন করি, আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুসরণ করি। মানুষের কথা বলার অধিকার আছে এবং পত্রিকারও খবর প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। আমি মনে করি, অন্যায়, অসত্য ও ভিত্তিহীন খবর প্রচারের স্বাধীনতা কারো নেই, কাউকে এ ধরনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি। অসত্য ও ভিত্তিহীন খবর প্রকাশ ও প্রচার না করাই মিডিয়ার শিষ্টাচার হওয়া উচিত। অপসংবাদ
ও অপসাংবাদিকতা কত ক্ষতিকর, কত ভয়ংকর- তা ভুক্তভোগী নিজেই জানেন।
আমরা যারা ধর্মে বিশ্বাসী, তারা জানি, এসব মিথ্যা ও অসত্য সংবাদ পরিবেশন পাপ ও গুনাহ’র কাজ। এসব গুনাহ’র জন্য, অন্যায় ও অবিচারের জন্য, অসত্য সংবাদ পরিবেশনের জন্য কেউ এখনো অনুতপ্ত হয়নি- দুঃখবোধ প্রকাশ করেনি। ভুল স্বীকার করে কেউ সম্পাদকীয় বা কোনো কৈফিয়ত দেয়নি। ডিজিএফআই শ্রদ্ধেয় মাহফুজ আনাম সাহেবকে জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য পরিবেশনে বাধ্য করেছিলেন- হতে পারে! কিন্তু আমার বিরুদ্ধে অসত্য কথা লিখতে মিডিয়াকে কে বাধ্য করেছে? তাদের কে লিখতে বলেছে? আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে নেওয়া ভূমিকা ভুল ছিল বলে স্বীকার করা হয়েছে- তাহলে আমার প্রতি, পদ্মা সেতু নির্মাণ বাধাগ্রস্ত করতে যে ভূমিকা নেয়া হয়েছিল- তার কি হবে? কতিপয় পত্রিকা ও কতিপয় সাংবাদিক যেভাবে মিথ্যার উপর ভিত্তি করে আমার চরিত্র হননের অপচেষ্টা করেছে- তা কোন পর্যায়ের তা আমার বোধগম্য নয়। তারা আমার চরিত্রহননের পাশাপাশি সৎপথে পরিচালিত আমার ব্যবসারও ক্ষতিসাধন করেছে। আজ এটা নানা তদন্তে প্রমানিত যে, আমি জীবনে কোনো অন্যায় ও অনিয়ম করিনি। তাই আমি আশা করব, যেসব পত্রিকা ও সাংবাদিক অসত্য খবর পরিবেশন করে আমার ক্ষতি করেছেন- তারা সত্য বলার মাধ্যমে, সত্য প্রকাশের মাধ্যমে, আমার সুনাম ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করবেন। আমি আল্লাহর কাছে তাঁদের জন্য রহমত কামনা করি।
আমার প্রতি যে অন্যায়, অবিচার অসত্য খবর প্রকাশের মাধ্যমে, টকশো’র মাধ্যমে করা হয়েছে- তার একটু ধারণা আপনাদেরকে দিলাম। আপনারা সুধীজন এবং অসুসন্ধিৎসু সাংবাদিক যাঁরা পেশার উচ্চ কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। আমার প্রতি যে অন্যায়, অবিচার কতিপয় সাংবাদিক করেছেন- তা আমি আমার লিখিত বই- ‘আমি ও জবাবদিহিতা’য় আলোকপাত করেছি। বইটি আপনাদের সবার জন্য এককপি করে পাঠিয়েছিলাম। আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন- কিভাবে মিডিয়া আমার প্রতি অন্যায় করেছে- আপনারাও প্রভাবিত হয়ে এ প্রচারণায় একটু হলেও অংশগ্রহণ করেছেন। এজন্য আমি আপানাদের দোষারুপ করছি না। আপনাদের প্রতি আমার এখন কোনো অভিযোগও নেই। আমি চাই, এ বিষয়ে আমাকে শান্তনা দেওয়ার কাজটুকু- আপনাদের মাধ্যমেই হোক। ভুল ভুলই- তা স্বীকার করার মধ্যে কোনো অন্যায় নেই, কোনো লজ্জা নেই। পদ্মা সেতুসহ নানা বিষয়ে অসত্য খবরে আমাকে জড়িয়ে যে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে- তা যে একেবারে অসত্য তা আজ নানা তদন্তে প্রমাণিত, বাস্তবতায় উদ্ভাসিত। সততা ও ন্যায়-বিচারের দাঁড়িপাল্লায় আমি নির্দোষ। সত্যিকারভাবে আমি কোনো অন্যায় করিনি- অনিয়ম করিনি। কোনো দুর্নীতি করিনি। আমি হলুদ সাংবাদিকতার শিকার। আমি সারাজীবন সততা ও ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে জীবন গড়ে তুলেছি- আজ আমার যা সম্পদ- তা আমার সৎ উপায়ে অর্জিত এবং এর জন্য সরকারকে যথানিয়মে কর পরিশোধ করেছি। এলাকার শিক্ষা বিস্তারে ব্যয় করছি, গরিব-দুঃখীর ও এতিমদের উন্নয়নে কাজ করেছি- আমার এলাকা ডাসার-কালকিনি-মাদারীপুর একবার ঘুরে আসলে তা বুঝতে পারবেন, খবর নিলেও এর সত্যতা পাবেন।
আপনাদের পেশাদারিত্বপূর্ণ সাংবাদিকতার কাছে আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরলাম। আশা করি, মিডিয়া জগতের হলুদ সাংবাদিকতার দিকগুলো চিহ্নিত এবং তা তুলে ধরতে আপনাদের উদ্যোগ অব্যাহত রাখবেন এবং আপনাদের এ পদক্ষেপ মিডিয়ার যথাযথ বিকাশে অবদান রাখবেন। আমরা যারা ন্যায়পথে চলার চেষ্টা করি তাদের স্বার্থও সংরক্ষণ করবেন। এর ফলে মিডিয়ার ভাবমূর্তি বাড়বে। দেশের লাভ হবে। আপনারা আপনাদের পেশাদারিত্বের জন্য মিডিয়ায় ‘আইকন’ হয়ে থাকবেন। আমি আপনাদের মনের সততার প্রতিফলন কামনা করি।
[ আগামীকাল পড়–নÑ সত্য ও ন্যায় : সমাজ ও জীবনের প্রত্যয়]