এক জঙ্গি পরিবারের কাহিনী
আজাদ হোসেন সুমন: গৃহকর্তা ব্যাংকের পদস্থ কর্মকর্তা। তার স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাস করে নামকরা এনজিওতে কর্মরত। ঘরে যমজ দু ছেলে সন্তান আবীর ও আশিক। হতে পারতো উচ্চ মধ্যবিত্ত সুখী সমৃদ্ধশালী একটি পরিবার। কিন্তু না ইসলামের নামে, জেহাদের নামে বেছে নেয় সন্ত্রাসের পথ। বেশিদূর আগাতে পারেনি তারা এই পথে। একের পর এক পুলিশি অভিযানে তছনছ হয়ে গেছে তাদের নেটওয়ার্ক, ভেস্তে গেছে তাদের স্বপ্ন। দুর্ধুর্ষ জঙ্গি তানভীর কাদেরী গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযান চলকালে আত্মহত্যা করেছিলেন । ওই ঘটনায় পুলিশ তার স্ত্রী আবিদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা ও তাদের যমজ সন্তানের মধ্যে আবির কাদেরীকে গ্রেফতার করে। পুলিশের অভিযানের সময় সে হাতে ছোড়া নিয়ে পুলিশকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এ সময় পুলিশ বাহিনীর দু’সদস্য তাকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে আটক করতে সক্ষম হয়। খাদিজা এখনো পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। ওই সময় পুলিশ তানভীর কাদেরীর কিশোর ছেলের কাছ থেকে জানতে পারে তার আরেক যমজ ভাই রয়েছে নাম আশিক কাদেরী। সে কোথায় আছে সেটা সে পুলিশকে জানাতে পারেনি। তবে কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট সদস্যরা প্রায় মাসব্যাপি জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে জঙ্গিওয়ার্ল্ডের যাবতীয় তথ্য উদ্ধার করে। এরপর তাকে গাজীপুরের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠিয়ে দেয়। এদিকে শনিবার আশকোনার জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের কাউন্টার অ্যাটাকে নিহত ২ জনের মধ্যে তানভীর কাদেরীর আরেক যমজ সন্তান আশিক কাদেরী রয়েছে।
জানাগেছে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাটিকামারি গ্রামের তানভীর কাদেরী লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে দুটি বেসরকারি কোম্পানি ঘুরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং শাখায় উচ্চ পদে যোগ দিয়েছিলেন। ২০০১ সালে তিনি বিয়ে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে লেখাপড়া শেষ করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘সেইভ দ্য চিলড্রেন’ এ চাকরিরত ফাতেমাকে। ২০১৪ সালে হজ করতে সপরিবারে সৌদি আরবে যান তানভীর কাদেরী। সেখান থেকে ফিরে আসার পর তার মধ্যে ধর্মীয় উগ্রতা ধরা পড়ে আত্মীয়দের চোখে। ফাতেমাও তখন থেকেই হিজাব পরা শুরু করেন বলে স্বজনরা জানান। হজ থেকে ফিরে ২০১৪ সালে ডাচ-বাংলার চাকরি ছেড়ে ‘আল সাকিনা হোম ডেলিভারি সার্ভিস নামে একটি ব্যবসা শুরু করেছিলেন কাদেরী। আজিমপুরের আস্তানা থেকে গ্রেফতারকৃত খাদিজা ইতিমধ্যে আদালতে নিজের কর্মকা-ের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, স্বামীর কারণেই নাশকতার এই পথে নেমেছিলেন তিনি। গোয়েন্দারা বলছেন, তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর নব্য জেএমবির সমন্বয়কের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছিলেন কাদেরী। ‘আব্দুল করিম’ ও ‘শমসেদ’ নামে সংগঠনে পরিচিত ছিলেন তিনি। করিম নাম ব্যবহার করেই তিনি বসুন্ধরা আবাসিকে গুলশান হামলাকারীদের জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া করেছিলেন। কাদেরীর ১৪ বছর বয়সী এই ছেলে এলাকায় কিশোরদের মধ্যে জঙ্গিবাদের প্রচার চালাতেন বলে ওই এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তানভীর কাদেরী ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় আত্মহত্যা করেন। তিন মাসের ব্যবধানে যমজ সন্তানের একজন আবীর পুলিশের কাউন্টার অ্যাটাকে নিহত হয়। আর খাদিজা রয়েছে জেল হাজতে আরেক সন্তান কিশোর সংশোধনাগারে। সুশিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারটি দু’ সন্তান নিয়ে সুখে শান্তিতে দিন যাপন করার পরিবর্তে জঙ্গিবাদের মত অপঘাতের পথ বেছে নিয়ে কলুষতা ছড়িয়ে নিজেরা শেষ হওয়ার মধ্যদিয়ে একটি জঙ্গিবাদ অধ্যায়ের যবনিকা হল। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু