কোনো সীমাবদ্ধতাই অজুহাত হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয় : প্রধান বিচারপতি
এস এম নূর মোহাম্মদ: প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা বলেছেন, বিনা বিলম্বে, স্বল্পব্যয়ে ও প্রকাশ্য বিচারের মাধ্যমে আইন সম্মত সুবিচার প্রাপ্তি প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা নাগরিকগণের মানসম্মত সুবিচার নিশ্চিতকরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। এক্ষেত্রে কোনো সীমাবদ্ধতাই অজুহাত হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
গতকাল রোববার জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গতকাল জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, চিফ মেট্রাপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং সমপর্যায়ের কর্মকর্তারা সম্মেলনে অংশ নেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারকের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন বিচারক নিশ্চিতভাবে বিচার কর্মের জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট থেকে স্বীকৃতি, প্রশংসা ও পুরস্কার পাবেন। বিচারক একজন মানুষ এবং তিনি অন্য সকল মানুষের বিচার করেন। যেকোনো মানুষের প্রত্যাশা যে, একজন বিচারক হবেন আইনের জ্ঞানে প্রাজ্ঞ, আদালতের কাজে সময়ানুবর্তী ও নিয়ম-নিষ্ঠ। তিনি প্রশ্নাতীতভাবে সকল ক্ষেত্রে সৎ, মানবিক মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সকলের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ ও পরিশীলিত আচরণের একজন আদর্শ স্থানীয় মানুষ। আমাদের জনমানুষের এই সঙ্গত ও যৌক্তিক প্রত্যাশা পূরণে যতœবান হতে হবে।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, জেলা জজ জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারক এবং জেলা পর্যায়ের বিচার প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও বটে। অধীনস্থ বিচারক ও আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যক্রম তত্ত্বাবধায়ন এবং জেলার বিচার ব্যবস্থায় সামগ্রিক মানোন্নয়নের দায়িত্ব জেলা জজের। তবে আমি ব্যথিত হয়েছি যে, কোনো কোনো জেলা জজ ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে অনাকাক্সিক্ষত বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এটি জেলার সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থার উপর অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব ফেলছে। জ্যৈষ্ঠ ও দায়িত্ববান কর্মকর্তা হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট জেলা জজ তার প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাবেনÑ এটাই আমার প্রত্যাশা।
মামলা জটের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, মামলাজট ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতা জনগণের বিচার লাভের ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায়। নিম্ন আদালতগুলোতে প্রায় ২৭ লাখ মামলাজট আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি। এ কারণে মানুষ তার বিরোধকে আদালতে আনতে নিরুৎসাহিত হতে পারে। আগ্রহী হতে পারে বিচার বহির্ভূত পন্থায় অর্থ বা পেশি শক্তির মাধ্যমে সুবিধাজনক সমাধান প্রাপ্তির। এর ফলে আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা শিথিল হতে পারে, সমাজে অসহিষ্ণুতা ও সংঘাতের প্রসার ঘটতে পারে। তাই আমাদের অবশ্যই মামলাজটের দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে হবে।
মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় সময়দানের সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে। আদালতের পুরো সময়কে বিচার কাজে ব্যয় করতে হবে। আমি শুনতে পাই কোনো কোনো জেলা জজ মধ্যাহ্ন বিরতির পরে বিচার কাজে বসেন না। এটা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। কজলিস্টে এমনভাবে ও এরকম সংখ্যায় মামলা রাখতে হবে, যেন পুরো বিচারিক সময়ে আদালত কার্যরত থাকতে পারে। কোনো কোনো জেলা জজের ও তার অধীনস্থ বিচারকের পরিবার ঢাকায় থাকেন। এতে কিছু বিচারক বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন আর রোববার দুপুরে ফিরে যান কর্মস্থলে। আবার কোনো কোনো জেলা জজ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই সরকারি গাড়ি নিয়ে জেলার বাইরে ভ্রমণ করেন। এমনকি ঢাকার বাইরে কর্মরত কোনো কোনো জেলা জজের গাড়ি প্রায়ই ঢাকা শহরে দৃশ্যমান হয়। এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জেলা জজ নিজে সঠিক সময়ে আদালতে আসবেন, পুরো বিচারিক সময় বিচার কাজে ব্যাপৃত থাকবেন এবং অন্য বিচারকদের একইভাবে নিয়মানুবর্তী ও সময়নিষ্ঠ হতে সহায়তা করবেন এটাই প্রত্যাশা। সম্পাদনা: শাহানুজ্জামান টিটু