ছুটির দিনে স্বাধীনতা জাদুঘর বন্ধ থাকায় দর্শনার্থীরা বিপাকে
ফারুক আলম ও এম এ আহাদ শাহীন: সাইফুল ইসলাম পরিবার নিয়ে পাবনা থেকে এসেছেন স্বাধীনতা জাদুঘর দেখতে। বিজয় দিবসের এই মাসে ছোট মেয়ে পিংকিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জীবনীর প্রতিচ্ছবি দেখাবেন জাদুঘরে। কিন্তু এত দূর থেকে অনেক আশা নিয়ে এসে যখন এই জাদুঘর বন্ধ পেলেন তখন তার ক্ষোভের শেষে নেই। তিনি বলেন, আজ সরকারি ছুটির দিন। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি স্বাধীনতা জাদুঘর দেখতে। অনেক দিন শুনেছি এই জাদুঘরের কথা। কিন্তু বিজয়ের এই মাসে ছুটির দিনেও এই জাদুঘর বন্ধ থাকায় আর দেখা হলো না। সাইফুলের মতো অনেকে এসেছিলেন এই জাদুঘর দেখতে। কিন্তু সবাই হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।
নরসিংদী থেকে সায়মা চৌধুরী বাচ্চা নিয়ে এসেছিলেন। বন্ধ থাকায় তাদেরও জাদুঘর দেখা হয়নি। সরকারি ছুটির দিনে জাদুঘর বন্ধ রাখায় তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, অন্য দিনগুলোতে স্কুল কলেজ খোলা থাকে। আর তা ছাড়া চাকরির কারণেও কোথাও যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই সরকারি ছুটির দিনে দর্শনীয় স্থান ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খোলা থাকলে দর্শনার্থীদের সুবিধা হয়।
সিলেট থেকে আসা ফাহমিদা মুমু বিজয়ের মাসে স্বাধীনতা জাদুঘর বন্ধ থাকায় উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, বিজয়ের মাসে এই জাদুঘর বন্ধ থাকা দুঃখজনক। মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজে পড়–য়া মুমু অনেক আগ্রহ নিয়ে এসেছিলেন।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত ভূগর্ভস্থ স্বাধীনতা স্তম্ভ ও স্বাধীনতা জাদুঘর উদ্বোধনের পর থেকে দর্শকরা ভিড় করছেন সেখানে। স্বাধীনতা জাদুঘরটি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার বাস্তব নিদর্শনে সমৃদ্ধ।
রোববার সরেজমিনে গিয়ে স্বাধীনতা জাদুঘর বন্ধ পাওয়া গেলে এই বিষয়ে কথা হয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আলীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের সাপ্তাহিক ছুটি বৃহস্পতিবার। কিন্তু হঠাৎ কেন রোববার জাদুঘর বন্ধ রাখা হলো আমরা জানি না। জাদুঘর বন্ধ রাখার বিষয়ে আগাম কোনো নোটিসও দেয়া হয়নি।
এই বিষয়ে কথা বলতে স্বাধীনতা জাদুঘরে কোনো উচ্চ পদস্থ কর্মকতাকে পাওয়া না গেলেও অনেক দর্শনার্থীকে মন খারাপ করে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
স্বাধীনতা জাদুঘর বন্ধ থাকলেও খোলা ছিলো জাতীয় জাদুঘর। জাতীয় জাদুঘরের অধীনেই মূলত স্বাধীনতা জাদুঘর পরিচালিত হয়। স্বাধীনতা জাদুঘরের বিষয়ে জাতীয় জাদুঘরের জনশিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা নূরে নাসরীন এই প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে ছুটির দিনগুলোতে যেন জাতীয় জাদুঘর ও স্বাধীনতা জাদুঘর খোলা থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হবে।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, অবশ্যই ছুটির দিনে জাতীয় জাদুঘর ও স্বাধীনতা জাদুঘর খোলা রাখা উচিত। বাইরের দেশগুলোতেও ছুটির দিনে দর্শনীয় স্থানগুলো খোলা রাখা হয়।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর জানান, ছুটির দিনে স্বাধীনতা জাদুঘর বন্ধ থাকার বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী