দুই বছরে শেষ হয়নি শিশু জিহাদের মৃত্যুর মামলা
মামুন খান: রাজধানীর শাহজাহানপুরে গভীর নলকূপের পাইপের মধ্যে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুর দুই বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ২০১৪ সালের এই দিনে জিহাদ পানিতে পড়ে মারা যায়। এরপর জিহাদের বাবা নাসির ফকির একটি মামলা করেন। মামলাটির একাধিক তদন্তেই মূলত দীর্ঘ সময় পার করা হয়েছে বলে দুই বছরে আলোচিত এই মামলার বিচার শেষ হয়নি বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি ।
মাত্র আড়াই মাস আগে গত ৪ অক্টোবর ছয় আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। আর এরই মধ্যে মামলাটি ভিন্ন খাতে পরিচালিত করতে বিভিন্ন তোড়জোড় চলছে। অআপসযোগ্য ধারার এ মামলায় ইতোমধ্যেই বাদীপক্ষ ও আসামিপক্ষ উভয়ই সমঝোতার প্রস্তাবও দিয়েছে। এতে মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। তবে বাদীপক্ষের দাবি, তারা শিশু জিহাদ হত্যা মামলার সুবিচার প্রত্যাশী। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ এ মামলা থেকে সুবিধা পেতে চায়। তারাই এ ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে।
ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আকতারুজ্জামানের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। ওই আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর শওকত আলম বলেন, ‘এ মামলার বিচার ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। মামলার প্রসিকিউশনে থেকে আমি দেখতে পাইÑ এ মামলার বাদী আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য আসামিদের সঙ্গে যোগসাজস করে আপসের চেষ্টা করেছেন। ১০/১২ দিন আগে মামলার বাদী এক আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আপসের জন্য প্রস্তাবও দিয়েছেন। প্রস্তাবে বলা হয়, বাদীর এক ছেলে চলে গেছে। আরও দুই ছেলে আছে। তাদের ভরণ-পোষণের জন্য অর্থের প্রয়োজন। এরপরই আসামি পক্ষ থেকেও আপসের প্রস্তাব দেওয়া হয়। আমরা আদালতে এর বিরোধিতা করেছি। কারণ এটা কম্পাউন্ডেবল সেকশন না, এটা নন কম্পাউন্ডেবল সেকশন। এছাড়া সর্বোচ্চ আদালতেও এ বিষয়ের একটি মামলা চলমান রয়েছে। সেখানে একটি রিট করা হয়েছিল। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেল সর্বোচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল করেছেন। বর্তমানে তা বিচারাধীন রয়েছে।’
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘সাধারণত অবহেলাজনিত এ আইনের বিচারটা আমাদের দেশে হয় না। তাই আমরা চাচ্ছি আদালতের মাধ্যমে এ মামলায় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য।’ এ মামলায় আসামিদের অর্থদ-ে দ-িতসহ সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
তবে এ ব্যাপারে শিশু জিহাদের বাবা ও মামলার বাদী মো. নাসির ফকিরের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাতে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বাদীর আইনজীবী জসীম উদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা সমঝোতা করতে চাইÑ এ কথার কোনো ভিত্তি নাই। তাই যদি হতো তাহলে বাদীপক্ষ থেকে যাদের সাক্ষী করা হয়েছেÑ তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ হতো না। মামলাটি আপসযোগ্য ধারার মামলা নয়। তাই আপসের কথাও ওঠে না। আসলে কিছু মানুষ সুবিধা নিতে চায়। তাই তারা এ ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে।’
মামলার আসামিরা হলেনÑ মেসার্স এসআর হাউজের মালিক মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ রেলওয়ের সিনিয়র সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (নলকূপ পরিদর্শন) মো. জাহাঙ্গীর আলম, কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জাফর আহমেদ শাকি, সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) দীপক কুমার ভৌমিক ও সহকারী প্রকৌশলী-২ মো. সাইফুল ইসলাম। আসামিরা সকলেই বর্তমানে জামিনে আছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর পানির পাইপে পড়ে মারা যায় শিশু জিহাদ। ওই ঘটনায় শিশু জিহাদের বাবা নাসির ফকির একটি মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল শাহজাহানপুর থানার এসআই আবু জাফর ওই দুজনকেই আসামি করে দ-বিধির ৩০৪ (ক) ধারায় (অবহেলাজনিত মৃত্যু) আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। কিন্তু বাদী এতে সন্তুষ্ট না হয়ে আরও অন্য ৪ জন ওই ঘটনার জন্য দায়ী বলে আদালতে নারাজি দাখিল করেন। এরপর ৪ জুন মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। নতুন এ দায়িত্ব পায় পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (ডিবি)। দ্বিতীয় দফায় অধিকতর তদন্ত শেষে গত ৩১ মার্চ আদালতে ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি পুলিশের এসআই মিজানুর রহমান। এরপর চলতি বছরের ৪ অক্টোবর এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এ মামলায় মোট ২৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, আজ সোমবার এ মামলার সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য রয়েছে। আসামিপক্ষ আরও সাফাই সাক্ষীর জন্য নাম প্রস্তাব করেছে। সে অনুসারে রেলওয়ের দুই কর্মকর্তাকে হাজির হয়ে সাফাই সাক্ষী দেওয়ার জন্য আদালত থেকে সমন পাঠানো হয়েছে। সম্পাদনা: শাহানুজ্জামান টিটু