আপটায় মঙ্গোলিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করতে মন্ত্রিসভার অনুমোদন
আনিসুর রহমান তপন : সপ্তম সদস্য হিসেবে মঙ্গোলিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট (আপটা) সংশোধন হচ্ছে। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপন করা ‘সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট টু দ্য এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট’র খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সচিবালয়ে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এই অনুমোদনের কথা জানান। বর্তমানে ছয়টি দেশ আপটার সদস্য একথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা ও লাওস আপটার সদস্য। মঙ্গোলিয়াকে এখানে সদস্যভুক্তির জন্য প্রস্তাব এসেছে। এ ডকুমেন্টে একটি সংশোধনী আনা হবে যে, এ ফোরামটা হবে সাত সদস্যবিশিষ্ট। সপ্তম সদস্য হিসেবে মঙ্গোলিয়াকে অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যান্য দেশগুলো সংশোধিত আপটা অনুসমর্থন করলে আগামী ১৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডে আপটার মন্ত্রী পর্যায়ের সভাতে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলেও জানান তিনি।
শফিউল আলম বলেন, ১৯৭৫ সালে ব্যাংককে একটা প্রিফারেন্সিয়াল বাণিজ্য চুক্তি হয়। সেটা ২০০৮ সালে আপটা বা এপিটিএ নামকরণ করা হয়। এটি ব্যাংকক এগ্রিমেন্ট নামে পরিচিত, কারণ এর সদর দফতর ব্যাংককে অবস্থিত।
কোন জায়গায় ট্যারিফ কনসেশন দেওয়া হবে, চুক্তিপত্রের সঙ্গে একটি লিস্ট আছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জেনারেল লিস্টে সব সদস্যদের জন্য পণ্যের সংখ্যা ৫৯৮টি। এখানে ১০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ছাড়ের সুযোগ দেওয়া হবে। স্বল্পন্নোত যেগুলো আছে তাদের জন্য অতিরিক্ত আরও চারটি পণ্যের শুল্ক ছাড় হবে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ হারে। বাংলাদেশ অংশ থেকে কোন ৬০২টি পণ্যের শুল্ক ছাড়ের সুযোগ দেওয়া হবে এ সদস্যগুলো ও এলডিসি সদস্যদের জন্য।
অন্যান্য দেশও শুল্ক ছাড়ের সুবিধা দিচ্ছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, চীন সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে, তাদের সুবিধা হলো ২ হাজার ১৯১টি পণ্যের জন্য, যেখানে ৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত সুবিধা দেওয়া হবে। এলডিসির জন্য ১৮১টি, যেখানে শূন্য থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ছাড় দেওয়া হবে।
ভারত ৩ হাজার ৩৩৪টি পণ্যে এ সুবিধা দেবে যেটাতে শুল্ক ছাড় হবে ৫ থেকে ১০০ শতাংশ। এলডিসি দেশের জন্য ৪৭টি পণ্যে ১৪ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া ২ হাজার ৭৯৬টি পণ্য এ তালিকায় রেখেছে। যার ছাড়ের হার ১০ থেকে ৫০ শতাংশ। এলডিসির জন্য ৯৬১টি আইটেম, ২০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় রয়েছে। শ্রীলঙ্কা ৬৮৫টি পণ্যের শুল্ক ছাড়ের জন্য ধার্য করেছে, আর এলডিসির জন্য ৭৫টি আইটেম। লাওস ৯৯৯টি আইটেমে ২০ থেকে সাড়ে ৩৭ শতাংশ শুল্ক ছাড়। মঙ্গোলিয়া প্রস্তাব করেছে ৩৩৩ আইটেমে শুল্ক ছাড় দেবে। এ ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় ১০ থেকে ৩০ শতাংশ বলেও জানান শফিউল আলম।
আপটার সংশোধনীর বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মূল যে ডকুমেন্টের সঙ্গে সংযোজনীও সংশোধন হয়েছে। এর কারণ হল ২০০৭ অনুযায়ী এইচএস কোড (পণ্যের পরিচিতি তালিকা) প্রণীত হয়েছে। এর মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ২০১২ সালে একটি নতুন এইচএস কোড ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন প্রবর্তন করেছে, এ জন্য ২০০৭ সালের লিস্ট ২০১২ সালের লিস্টের সঙ্গে মিলিয়ে নতুন তালিকাটা তৈরি করা হয়েছে।
সেক্টরাল রুল অব অরিজিন (আরওও)’র আপটা সংক্রান্ত বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আপটার আওতায় সদস্য দেশগুলোর শুল্ক সুবিধা পাওয়ার জন্য চুক্তির এনেক্সার-২ এর রুল অব অরিজিনের ব্যাখ্যায় কতগুলো ফুটনোট যুক্ত করা হয়েছে। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী