বেকায়দায় বহু ব্যবসায়ী রুপি নিয়ে সংকটে বাংলাদেশ
হাসান আরিফ: বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভারতের ৫০০ ও ১০০০ নোটের প্রায় ৫০ কোটি রুপি রয়েছে। এই রুপি নিয়ে সংকটে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রুপির বিনিময়ের জন্য রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই), কলকাতা এবং মুম্বাইকে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে এখনও কার্যকর কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের ফলে বেকায়দায় রয়েছেন বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী, বিশেষ করে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীরা।
ভারতীয় সরকার তাদের দেশের ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করেছে। এই জন্য বাংলাদেশের রাজস্ব সংরক্ষণের স্বার্থে কাস্টম কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে জব্দ হওয়া এবং ব্যাংক ব্যবস্থায় থাকা পাঁচ’শ ও এক হাজার রুপির সব নোট দ্রুত পরিবর্তনের (রূপান্তর) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন মাধ্যমে আসা এবং কাস্টম কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে জব্দ হওয়া ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে প্রায় ৫০ কোটি রুপি জমা রয়েছে। এই সব রুপির মধ্যে যা কাস্টম কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে জব্দ হয়েছে তার প্রতিটি নোটের বিপরিতে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। মামলা পরিচালনার স্বার্থে প্রতিটি মামলার বিপরীতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের তালিকা অনুযায়ী একটি করে নোট কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার স্বাক্ষরে রেখে অবশিষ্ট নোটের বিপরীতে মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের কাছে থাকা ১২ লাখ ভারতীয় রুপির মধ্যে ৫০০ ও ১০০০ মূল্যমানের রুপি রয়েছে ১১ লাখ। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের কাছে রয়েছে চারলাখ রুপি, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের কাছে তিনলাখ রুপি এবং বাকি এক লাখ রুপি রয়েছে জনতা ব্যাংকের কাছে।
গত ৯ নভেম্বর দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের কাছে ভারতীয় রুপি থাকার তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা সব রুপি সোনালী ব্যাংকের কলকাতা শাখার মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক তাদের কাছে থাকা সব রুপি সোনালী ব্যাংকের কাছে জমা দেয়।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে থাকা ৫০০ ও ১০০০ রুপির ভারতীয় নোট ভারতে ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সোনালী ব্যাংক, কলকাতা শাখা, সোনালী ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হেফাজতে থাকা ভারতীয় নোট রূপান্তরের জন্য ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া, কলকাতার সঙ্গে ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ চলছে। এর ফলে ৯ ডিসেম্বর ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, কলকাতা ইমেইলের মাধ্যমে বিনিময়যোগ্য নগদ নোটের পরিমাণ জানতে সোনালী ব্যাংক কলকাতাকে অনুরোধ করেছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা ভারতীয় নোটের রূপান্তরে সহযোগিতা করার জন্য ১৯ ডিসেম্বর ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া, মুম্বাইকে একটি ডিও লেটার দেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের পর এখনও পর্যন্ত ভারতের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কোন সাড়া মেলেনি। এসব কার্যক্রম সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার হওয়া ভারতীয় রুপির মালিক বাংলাদেশ সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের পক্ষে তা ভল্টে জমা রাখে।
এদিকে মোদি সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পোস্ট অফিস ও ভারতের ব্যাংকে গিয়ে এসব মূল্যমানের রুপির নোট পরিবর্তন করা যাবে। তবে যারা এ সময়ের মধ্যে বিশেষ কোনও কারণে পুরনো নোট জমা দিতে পারবে না, তারা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এসব নোট জমা দিতে পারবেন।
দেশের অভ্যন্তরে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় রুপির নোট মজুদ রয়েছে। নোট বাতিল করায় বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী, বিশেষ করে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এসব নোটের বড় অংশ অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে আসা। ভারতে ভ্রমণকারী, ব্যবসায়ী কিংবা হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কাছে মজুদ থাকা এসব নোট এখন তাদের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিবন্ধিত মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোও অবৈধ পন্থায় মজুদ করা ভারতীয় রুপি নিয়ে আর্থিক ঝুঁকিতে পড়েছে।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জের শতাধিক ব্রোকার ও মসলাপণ্য ব্যবসায়ী রয়েছেন মেমন ও গুজরাটি সম্প্রদায়ের। তাদের অনেকেরই আত্মীয়স্বজন ভারতে অবস্থান করেন। সেই সূত্রে বিহারি নামে পরিচিত এসব ব্যবসায়ীর লেনদেন ভারতের সঙ্গে। তারা ভারতীয় মসলাপণ্য আমদানি করে দেশের বাজারে বিপণন করেন। এ কাজে দেশীয় ব্যাংকিং চ্যানেলের সঙ্গে তাদের লেনদেন সীমিত। মূলত: হুন্ডি কিংবা বিশেষায়িত বিদেশী ব্যাংকের মাধ্যমেই আমদানি বাণিজ্য করেন তারা। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ভারতে নিয়মিত যাতায়াতের কারণে এসব ব্যবসায়ীর কাছে প্রচুর ভারতীয় রুপি মজুদ রয়েছে। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী