কোলাহলে শব্দ বুঝতে মস্তিষ্কের বিশেষ ‘ফিল্টার ব্যবস্থা’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কোলাহলপূর্ণ ঘরে আমরা কীভাবে কোনো কথার অর্থ বুঝতে পারি, বিজ্ঞানীদের গবেষণায় তা এবার বেরিয়ে এসেছে। অনেক বেশি শব্দে ভরা বিভ্রান্তিকর পরিবেশেও একটি আলোচনায় মনোযোগ দেওয়া এবং তা বুঝতে পারার এ প্রক্রিয়াকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘ককটেল পার্টি ইফেক্ট’। চ্যানেলআই
মানুষের মস্তিষ্কের কর্মকা- রেকর্ড করার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো এ আচরণের ব্যাখ্যা ধরা পড়েছে। বার্কেলির ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক এমন ৭ জন মৃগীরোগীর উপর গবেষণা চালিয়েছেন, যাদের খিঁচুনি মনিটর করার উদ্দেশে মাথার খুলির একটি অংশ সরিয়ে মস্তিষ্কের গায়ে ইলেকট্রোড বসানো আছে।
প্রথম এ রোগীদেরকে আলাদাভাবে একটি খুবই দুর্বোধ্য ও বিকৃত বাক্যের অডিও শোনানো হয়। তাদের প্রায় কেউই বাক্যটি বুঝতে পারেননি। এরপর সেই বাক্যটিরই একটি স্বাভাবিক ও স্পষ্ট রেকর্ড শোনানো হয় তাদেরকে এবং ঠিক তার পরপরই আবার শুনতে দেওয়া হয় আগের অস্পষ্ট অডিওটি। দলটির প্রধান গবেষক ক্রিস্টোফার হোল্ডগ্রাফ জানান, স্পষ্ট বাক্যটি শোনার পর প্রত্যেক রোগীই বিকৃত অডিওটিরও অর্থ বুঝতে সক্ষম হন। এর সবকিছুই ঘটে মস্তিষ্কের শব্দ প্রক্রিয়াকরণ ও বক্তব্য অনুধাবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশগুলোতে। প্রথম যখন রোগীরা বিকৃত বাক্যটি শুনেছিলেন, তখন ওই অংশগুলোতে তেমন কোনো সক্রিয়তা দেখা যায়নি বলে জানান ওই স্নায়ুবিজ্ঞানীরা।
কিন্তু স্পষ্ট অডিওটি শোনার পর ওই অংশগুলোই কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে। এর ফলে অডিওটি শোনার সাথে সাথে যখন আবার অস্পষ্ট বাক্যটি তারা শুনলেন, তখন মস্তিষ্ক তার সক্রিয় হয়ে ওঠা অংশগুলো দিয়ে আগের সহজবোধ্য বাক্যটির সঙ্গে পরের দুর্বোধ্য বাক্যের ‘প্যাটার্নে’ মিল খুঁজতে সফল হয়। তখন দেখা যায়, শব্দগত বিভ্রান্তি ও কোলাহলের মাঝেও প্রয়োজনীয় অংশটি মস্তিষ্ক ঠিকই সনাক্ত করতে পারছে।
‘ওই সময় মস্তিষ্ক আসলে রেকর্ডটির বিভিন্ন অংশে ফোকাস করার ধরনটাই পাল্টে ফেলে, গবেষণাপত্রে বলেন, ‘বিজ্ঞানীরা, রোগীরা পরিষ্কার বাক্যটি প্রথমে শোনার কারণে তাদের অডিটরি কর্টেক্স (যে অংশটি শব্দ প্রক্রিয়াজাত করে) স্পষ্ট বাক্যের প্যাটার্নের সঙ্গে পরিচিত কথাটির সিগনাল বাড়িয়ে দেয়।’ নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। স্পিচ রেকগনিশন বা বক্তব্য সনাক্তকরণ প্রযুক্তির উন্নয়ন এ গবেষণার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। কথা শুনতে বা বুঝতে যাদের সমস্যা হয় তাদের চিকিৎসার জন্য এ আবিষ্কারের উপর ভিত্তি করে আরও পরীক্ষা চালানো হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। সম্পাদনা: ইমরুল শাহেদ