পরাজয় দিয়ে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের
নিউজিল্যান্ড: ৩৪১/৭, বাংলাদেশ:২৬৪
ফলাফল-নিউজিল্যান্ড ৭৭ রানে জয়ী
এল আর বাদল: বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় ইতিহাসে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোনো জয় নেই। লাল-সবুজের যতো যশ, সুখ্যাতি সবই দেশের মাটিতে। এবার জয়ের ভৌগলিক সীমারেখা অতিক্রম করতে দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে গতকাল মাঠে নেমেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু জয়ের স্বপ্নপূরণ হয়নি। নিউজিল্যান্ডের কাছে ৭৭ রানে হেরে গেছে মাশরাফিবাহিনী। জয় না পেলেও জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়নি। সামনে এখনো দুই ম্যাচ, গতকালের হারে আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়নি। সবকিছু শেষ হয়েও যায়নি। মাশরাফিদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে এখনো। যে কোনো দেশে খেলতে গেলে একটি ‘সত্যি’ আঁড়ালেই থেকে যায়। সেটি হলো- কঠিন চ্যালেঞ্জ, সে দেশের কঠিন কন্ডিশন, দেশবাসির প্রত্যাশার চাপ। এই শব্দগুলো নিয়ে বাংলাদেশ মাঠে নেমে ভীষণ চাপে থাকে। এই চাপ অনেক সময় ইতিবাচক ফল দেয় না। এই চাপেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটলো গতকাল নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে।
তবে বিশাল হারের পূণরাবৃত্তি হবে না দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে, ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন টাইগার দলপতি মাশরাফি। গতকাল পরাজয়ের পর আরো একটি দুঃসংবাদ পেলো বাংলাদেশ দল। দলের পরাজয়ের ক্ষতে নুনের ছিটা দিলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শাসক সংস্থা আইসিসি। সেøা ওভার রেটের জন্য বাংলাদেশ দলের প্রত্যেককে ম্যাচ ফির ১০ শতাংশ জরিমানা করা হয়। তবে দলনায়ক মাশরাফিকে জরিমানা করা হয়েছে ম্যাচ ফি’র ২০ শতাংশ।
ক্রাইস্টচার্চে সকালে টস জিতে ব্যাটিং নেয় স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। ৩৪১ রানের বড় পুঁজিও অর্জন করে তারা। এই পুঁজি দেখে ঘাবড়ে যাবারই কথা। বড় সংগ্রহের পেছনে দৌড়াতে গিয়ে শুরুতেই উইকেট হারিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে টাইগাররা। ১২ ওভারে ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার আর মাহমুদুল্লাহর উইকেট হারি চাপে পড়ে টাইগারবাহিনী। যদিও সাবিক-মুশফিক, মুশফিক -মোসাদ্দেক জুটির ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন আবারো জেগে উঠেছিল। কিন্তু শেষ দিকে এসে আবার নিউজিল্যান্ডের বোলারদের কাছে আত্মসমর্পণে জয়ের ভেস্তে যায় বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত ৪৪.৫ ওভারেই ৯ উইকেটে শেষ হয় টিম মাশরাফিদের ইনিংস। আহত মুশফিক আর মাঠে ফিরেনি। ফলে ৭৭ রানে পরাজয় বরণ করতে হয় টাইগারদের।
স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে দলকে ভালোই পথ দেখাচ্ছিলেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। হাফসেঞ্চুরি পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। তবে সে যাত্রা আর বেশিদূর এগুতে পারেনি। ফার্গুসনের বলে সাউদির সাথে কট হয়ে সাজঘরে ফিরলেন ৫৯ রানে। তবে তার এ সংগ্রহ ছিল মারমুখো। ৫৯ রান করেছেন ৫৪ বলে। এর মধ্যে আছে ২টি ছক্কা ও ৫টি চারের মার। শুরু থেকেই দেখেশুনে খেলছিলেন বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল খান। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সুন্দর একটি জুটির গড়ার সম্ভাবনাও জাগিয়ে তুলেছিলেন তিনি। তবে আবারও জেমস নিশাম ঝড়ে আশাহত হতে হলো বাংলাদেশকে। ১৮তম ওভারে নিশামের শেষ বলে আপার কাট করে ডিপ পয়েন্টে মিচেল স্যান্টনারের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন এই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। আউট হওয়ার আগে তিনি ৫টি চারের মারে ৫৯ বলে ৩৮ রান করেন।
প্রস্তুতি ম্যাচ রানে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও সৌম্য সরকার কিন্তু এদিনের ম্যাচেও বরাবরের মতোই ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন। জেমস নিশামের বলে মিডঅফে কেন উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৮ বলে ১ রান করে প্যাভিলিয়ানের পথ ধরেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। সৌম্যকে ফেরানোর পর মাহমুদউল্লাহকেও বিদায় করেছেন নিশাম। অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক রনকিকে ক্যাচ দেন বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য এই ব্যাটসম্যান। তিন বল খেলে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাকে। এ সময় বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪৮/৩।
এর আগে বাংলাদেশের ওপেনার ইমরুল কায়েস ব্যক্তিগত ১৬ রানে ফিরেছেন সাজঘরে। ম্যাচের শুরুতেই জীবন পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি কায়েস। ৭.৩ ওভারে লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের শের্ট বলে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক রনকির হাতে। আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নেন কায়েস। তবে তা কাজে লাগেনি। তাকে দলীয় ৩৪ রানে ফিরেই যেতে হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: নিউজিল্যান্ড -৫০ ওভারে ৩৪১/৭ (ল্যাথাম ১৩৭, মানরো ৮৭, উইলিয়ামসন ৩১; সাকিব ৩/৬৯, মুস্তাফিজ ২/৬২, তাসকিন ২/৭০)।