ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে ভৈরব-তিতাস রেললাইন
শারমিন আজাদ: ভৈরব-তিতাস রেললাইনের প্রস্তাবিত ভেরিয়েশনে রয়েছে ২য় তিতাস সেতুর জন্য সিংগেল লাইনের বদলে ডাবল লাইনের নকশা, আশুগঞ্জ স্টেশনের ক্যাটাগরি পরিবর্তন, ভূমি অধিগ্রহণ পরিহার ও পেট্রোলিয়াম ডিপো থেকে নিরাপদ দূরত্বে রেললাইন নির্মাণের লক্ষ্যে এলাইনমেন্ট পুন:নির্ধারণ কাজ। এছাড়া একটি প্যাকেজকে ২টি লটে বিভক্ত করে প্রাকযোগ্যতার দরপত্র প্রণয়ন ও মূল্যায়ন। এসব ভেরিয়েশনের কারণে ব্যয় বেড়ে বাড়তি টাকা লাগবে ২ কোটি ২০ লাখ ৯১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা।
ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইন এগ্রিমেন্টের অধীনে ৯৫ হাজার ৯২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের রেললাইনসহ দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস সেতু প্রকল্পের ডিপিপি ২০১০ সালে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাল ছিল নভেম্বর ২০১০ থেকে জুন ২০১৪ পর্যন্ত। পরে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ করা হয়। কাজটি সম্পাদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনক্রমে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসটিইউপি কনসালট্যান্টস প্রাইভেট লিমিটেড, ইন্ডিয়া, যৌথ সহযোগিতায় স্কট উইলসন ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড ও মোহন কো-অপারেটিভ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট, ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মধ্যে ৪৫ কোটি ৫ লাখ ৯০ হাজার ৪৩৬ টাকার চুক্তি সই হয়।
এলওসি অনুযায়ী এক্সিম ব্যাংক ইন্ডিয়া থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সালে চুক্তি অনুমোদনের পর মার্চে কাজ শুরু করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পে সুষ্ঠু এবং নিরবচ্ছিন্ন কনসালট্যান্সি সার্ভিস দেওয়ার লক্ষ্যে মোট ২ কোটি ২০ লাখ ৯১ হাজার ১৩৫ টাকার ভেরিয়েশন প্রস্তাব দেয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী ডিজাইন ও নকশা প্রণয়ন, দরপত্র আহ্বান, দরপত্র মূল্যায়নসহ দ্বিতীয় তিতাস সেতুর জন্য সিঙ্গেল লাইনের পরিবর্তে ডাবল লাইনে নকশা করা ও আশুগঞ্জ স্টেশনের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করায় সব কাজ ৬ মাসে শেষ হওয়ার বদলে ১৮ মাস সময় লাগে। ফলে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯১ টাকা।
চুক্তিপত্রের সংস্থানের অতিরিক্ত সিগন্যালিংসহ টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করতে গিয়ে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৪৩ টাকা।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফেজ-২ এর আওতায় মূল নির্মাণ কাজের তদারকি ও নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জিআইবিআর এর অনুমোদনসহ প্রকল্পটি হস্তান্তরের সব প্রক্রিয়া শেষে নির্মাণ কাজের চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করার লক্ষ্যে সেবা প্রদান করবে। এছাড়া নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরের ১২ মাস সময় সীমিত আকারে জনবল নিয়োজিত রেখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ডে পরামর্শক সেবা চুক্তির বিপরীতে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করবে। তাই মূল নির্মাণ কাজ শেষে পরবর্তী ন্যূনতম ৩ মাস ফেজ-২ এর আওতায় সুপারভিশন কনসালট্যান্সি সেবা প্রদান জরুরি। ২য় ভৈরব সেতু নির্মাণ কাজের বর্তমান অনুমোদিত মেয়াদ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত। এছাড়া ২য় তিতাস সেতু নির্মাণ কাজের অনুমোদিত মেয়াদ এবছর ডিসেম্বরে হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। নির্মাণ কাজ মার্চে শেষ হলেও সুপারভিশন ফেজ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। সে বিবেচনায় ফেজ-২ এর মেয়াদ আরও ১০ মাস বৃদ্ধি পাবে। ব্যয় বৃদ্ধি পাবে মোট ৯ কোটি ১৯ লাখ ৪৩ হাজার ৬০৬ টাকা।
প্রকল্পে ডিপিপি প্রণয়ন ও চুক্তিপত্র সম্পাদনকালে সরকারি পরিপত্র মোতাবেক পরামর্শক চুক্তিপত্রের বিপরীতে ১০ শতাংশ আয়কর এবং সাড়ে ৪ শতাংশ ভ্যাট প্রদানের সংস্থান ছিল। ওই টাকা সরকারের কাছ থেকে ব্যয় হয়।
উল্লেখ্য যে, প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জুলাই, ২০১৪ থেকে জুন,২০১৫ পরামর্শক সেবার জন্য আয়কর ও ভ্যাট ছিল যথাক্রমে ১০ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ আর জুলাই , ২০১৫ থেকে জুন,২০১৬ পর্যন্ত এ হার যথাক্রমে ৩০ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ। পররর্তীতে জুলাই ২০১৬ থেকে এ হার যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে জুন, ২০১৬ পর্যন্ত পরিশোধিত আয়কর ও ভ্যাটসহ এরপরের বাকি কনসালট্যান্সি মূল্যের ওপর পরিশোধিতব্য আয়কর ও ভ্যাট বাবদ মোট প্রয়োজন ১৬ কোটি ৩২ লাখ ২৭ হাজার ১৭০ টাকা। মূল চুক্তিতে আয়কর ও ভ্যাট বাবদ সংস্থান ৫ কোটি ৭০ লাখ ৬১ হাজার ৬৭১ টাকা। ফলে এ বাবদ অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে ১০ কোটি ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯৯ টাকা।