মূলধনের ঘাটতি মেটাতে ৫’শ কোটি টাকার বন্ড পাচ্ছে রূপালী ব্যাংক
হাসান আরিফ : মূলধনের ঘাটতি মেটাতে রূপালী ব্যাংক সরকারের কাছে বার বার বন্ড চাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত বরফ গলতে শুরু করেছে। তৃতীয় দফায় আবেদন করার পর অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে আমলে নিয়েছে। এর ফলে রূপালী ব্যাংক সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড নামে ৫’শ কোটি টাকার বন্ড পেতে যাচ্ছে ব্যাংকটি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দশে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখছে । বন্ড ছাড়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে তিন দফা আবেদন করেছে রূপালী ব্যাংক।
জানা গেছে, রূপালী ব্যাংক সাব-অর্ডিনেটেড বন্ডের মেয়াদকাল হবে সাত বছর। বন্ড ছাড়তে সরকারকে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না, শুধু গ্যারান্টি দিতে হবে।
গত সপ্তাহে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হকের সভাপতিত্বে রূপালী ব্যাংকের বন্ড ছাড়ার বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সরকারের মনোভাব এই বিষয়ে ইতিবাচক হওয়ায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, বন্ড চেয়ে রুপালি ব্যাংকের আবেদন করায় এ নিয়ে কাজ চলছে। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কি হয়। এই জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে। এখনই এই ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাবে না।
২০১৫ সালের জুনে রূপালী ব্যাংক ৫’শ কোটি টাকার বন্ড চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রথম আবেদন করে । কোনো সাড়া না পেয়ে নয় মাস পর গত মার্চে পুনরায় আবেদন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তখনও কোনো সাড়া দেয়নি সরকার। ব্যাংকটি সম্প্রতি আবার একই আবেদন করে।
আবেদনে রূপালী ব্যাংক বলেছে, বন্ডের আকার হবে ৫’শ কোটি টাকা, এর মেয়াদ হবে সাত বছর। তবে সুদের হার নির্ধারণ করা থাকবে না। সুদের হারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যা বলবে, সেটাই মেনে নেবে রূপালী ব্যাংক।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্ডের দাবিতে প্রথমবার আবেদনের সময় রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ৫’শ কোটি টাকার কম। এক বছরের ব্যবধানে বর্তমানে (গত জুন পর্যন্ত) ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে। এখন তা হয়েছে এক হাজার ৫২ কোটি টাকা। মূলধন ঘাটতি বাড়লেও ব্যাংকটির বন্ডের আবেদন ৫’শ কোটি টাকাই রয়েছে।
এই ব্যাপারে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, আপাতত আমরা ৫’শ কোটি টাকার বন্ড চাচ্ছি।
অন্য ব্যাংকের মতো রূপালী ব্যাংককেও আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে ব্যাসেল-৩ নীতিমালা পরিপালন করতে হবে। ব্যাসেল-৩ হলো, ব্যাংক খাতের মূলধন পর্যাপ্ততা ও তারল্য ঝুঁকি নিরসনে একটি বৈশ্বিক স্বেচ্ছাসেবী নিয়ন্ত্রক কাঠামো। বিশ্বের সব দেশের ব্যাংক খাতই এর নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হয়।
রূপালী ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন ১০ শতাংশ থেকে পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। মোট ঋণ সুবিধার তুলনায় উদ্যোক্তা মূলধনের অনুপাতও (লিভারেজ রেশিও) রাখতে হবে ৩ শতাংশ।
বন্ড চাওয়ার যুক্তি হিসেবে রূপালী ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানায়, ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি থাকায় বৈদেশিক বাণিজ্য ঠিকমতো করা যাচ্ছে না। ব্যাংকের স্বাভাবিক আয় থেকে এ মূলধন ঘাটতি সহসা পূরণ করা সম্ভব নয় বলেও আশঙ্কা রয়েছে। নিষ্ঠার সঙ্গে খেলাপি ঋণ আদায়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেওয়া, দক্ষ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যাংক চললে বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহের দরকার পড়ত না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ব্যাংক খাত ঠিকমতো চললে বন্ড চেয়ে এমন আবেদন আসত না। সরকার যদি বন্ড ছাড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ও, বিবেচনায় রাখতে হবে, কারণ পাছে না জনগণের স্বার্থ ক্ষুণœ হয়।
রূপালী ব্যাংকের ৫’শ ৬০টি শাখার মধ্যে গত জুন শেষে লোকসানি শাখা দাঁড়িয়েছে ১’শ ২৬টিতে। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটির লোকসানি শাখা ছিল ১০টি। রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ গত জুনে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা, যা গত ডিসেম্বরে ছিল ১ হাজার ৫’শ ৪৯ কোটি টাকা। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী