যাদের জন্যে বড়দিন আনন্দের নয়
রাশিদ রিয়াজ : বড়দিনের আনন্দ সবার জন্যে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার, চমৎকার এ বাণীটি এখন বাংলাদেশে প্রচলিত। শুধু প্রচলিত নয়, সব ধর্মের উৎসবে আমরা সবাই আনন্দ ভাগ করে নিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠার চেষ্টা যখন করছি তখন উন্নত দেশগুলোতেও কিন্তু এমনটা সম্ভব হচ্ছে না। ক্রিসমাস ডে উপলক্ষে এক হাজারেরও বেশি শিশু তাদের জন্যে হেল্প চাইল্ডলাইনে নিজেদের মন খারাপের কথা, নিঃসঙ্গতার কথা জানিয়েছেন। যা শুনলে উৎসবের আমেজ নষ্ট হয়ে যায়। বড়দিনে তাদের কেউ উপহার দেওয়ার মত নেই এমন মন খারাপের কথা যেমন এসব শিশু বলেছে, তেমনি পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ায় তাদের অনেকে বাবা কিংবা মা’কে না পাওয়ার তীব্র বেদনার কথা জানিয়েছে। এমএসএন এধরনের খবর দিয়ে বলেছে, আয়ারল্যান্ডে ক্রিসমাসের দিন ১ হাজার ৪০ জন শিশু চাইল্ডলাইনে ফোন করে বিভিন্ন রকমের সাহায্য চেয়েছে। মন খারাপ করা দুঃখের কথা বলেছে। শিশুদের অনেকেই তাদের পরিবারে অতিরিক্ত মদ্য পানে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও সমস্যা দূর করতে তাদের করণীয় কি তা জানতে চেয়েছে।
শিশুদের জন্যে এধরনের চাইল্ডলাইনে ফোন করা যায় নিখরচায়। ওয়েব চ্যাট. লাইভ টেক্সট সার্ভিসের সুবিধা আছে। ক্রিসমাসের দিন আয়ারল্যান্ডে ৬১ জন স্বেচ্ছাসেবী শিশুদের অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর দেন। বড়দিনে তারা কারো সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে চায় কি না তাও জিজ্ঞেস করা হয় এবং সংযোগ ধরিয়ে দেওয়া হয়। অনেকে চাইলেও কাঙ্খিত ব্যক্তি তা না চাওয়ায় কোনো কোনো শিশুর কথা বলার আব্দার পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
অধিকাংশ শিশুর জন্যে বড়দিনে আনন্দ ও মজা করার জন্যে তাদের পরিবারের সঙ্গে কাটানোর কথা। কিন্তু আয়ারল্যান্ডে অনেক শিশুর জন্যে ঘরও নিরাপদ নয়। ঘরেও তারা পরিবারের সান্নিধ্য, একটু উষ্ণতা বা আনন্দ খুঁজে পায় না। ভয়, নিঃসঙ্গতা, ব্যথা, অবহেলা এসে তাদের ঘিরে ধরে। এর ফলে বড়দিন উল্টো বড় কষ্টের দিন হয়ে ওঠে তাদের জন্যে। কোনো কোনো শিশু বড়দিনে চাইল্ডলাইনকে সারা বছর জুড়ে তাদের সাহায্য করার জন্যে ধন্যবাদ দেন। কেউ কেউ এদিন কতটা কষ্টে কাটে তা শেয়ার করতে চায়। কেউ তার পরিবারের কোনো সদস্যকে হারানোর কথা বলতে চান, পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার কথা বলে স্মরণ করতে চায় সে যখন ছিল তখন বড়দিন না কতই আনন্দের ছিল। আর এজন্যে ক্রিসমাসের দিন তাদের জন্যে বিশেষ দুঃখের হয়ে থাকে।
এমন অনেক শিশু আছে তারা চাইল্ডলাইনে ফোন করে তাদের অভিভাবকদের মানসিক যন্ত্রণার কথা বলে, কিভাবে তার একটা সুরাহা করা যায়, এমন পরামর্শ চায়। নিঃসঙ্গ বাবা বা মা’কে দেখে তা তাদের যে ভাল লাগে না এবং তা কিভাবে দূর করা যায় তার একটা বিহিত চায়।
চাইল্ডলাইনের প্রধান নির্বাহী গ্রেইনিয়া লং বলেন, ক্রিসমাস সবার জন্যে নিরাপত্তা, উষ্ণতা ও সুখ বয়ে আনবে কিন্তু অনেক শিশুর জন্যে তা বাস্তবতা নয়। কি বিষন্নতায় ক্রিসমাস তাদের অনেকের কাটে আপনি তা শুনলে বিশ্বাস করতে চাইবেন না। কেউ কেউ তাদের উপর যে অকথ্য নির্যাতন চালানো হয় দিনের পর দিন তা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। বেঁচে থাকতে চায় না। কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে চায়। এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে তারা ফের আস্বাভাবিক কিছু করতে চায় যা তাদের জন্যে কোনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না।
ক্রিসমাসের দিন এই শিশুদের অব্যক্ত কথা শুনতে যেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা যে সময় ব্যয় করেন তাও কম নয়। বছরের পুরো সময় তারা চাইল্ডলাইনে ফোন করে সহায়তা যেমন পায় তেমনি অনেক সময় হয়ত কোনো সমস্যার সমাধানও খুঁজে পায় না। তবুও চাইল্ডলাইন তাদের কাছে আস্থা আনতে পারে বলেই বড়দিনে তারা ফোন করে ধন্যবাদ জানান। এজন্যে স্বেচ্ছাসেবীদের বড় ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শিশুরা চাইল্ডলাইনে ফোন করে তাদের প্রশ্নের অনেক সদুত্তর ও পরামর্শ পেয়ে থাকে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম