১ জানুয়ারি বই উৎসব বই পৌঁছেনি অনেক জেলায়
দেলওয়ার হোসাইন : ১লা জানুয়ারি সারা দেশে বই উৎসব পালন করবে সরকার। কিন্তু ওইদিন সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছানো নিয়ে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এখনো অনেক স্কুলে বই পৌঁছানোর কার্যক্রমই শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এখনো দেশের অনেক জেলায় প্রাথমিকের একটি বইও পৌঁছেনি। যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরায় প্রাথমিকের কোনো বই এখনো পাঠানো হয়নি। লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী এবং চট্টগ্রাম জেলার প্রত্যন্ত কিছু উপজেলায়ও প্রাথমিকের বই পৌঁছেনি বলে জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল আজিজ জানান, আজ পর্যন্ত কোনো বই হাতে পাইনি তাদের কাছে থেকে। সূত্রে জানা গেছে, এনসিটিবির কর্মকর্তাদের ভুলের কারণে বিপদে পড়েছেন ঠিকাদাররা। এতোদিন ছাপাখানায় বই ছাপিয়ে সরবরাহ করছিলো ঠিকাদাররা। এবার ঠিক সময়ে টাকা না পাওয়ায় বই ছাপা বন্ধ করে দেন তারা। এই নিয়ে নতুন দ্বন্দ্ব শুরু হয় ঠিকাদার ও এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের মধ্যে। ফলে আগামী ১ জানুয়ারি বই উৎসবের আনন্দ থেকে অনেক শিক্ষার্থীই বঞ্চিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতারা বলছেন, এনসিটিবির ভুলের কারণে ১৯৬ কোটি টাকা কম বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। যে কারণে এনসিটিবি ঠিকাদারদের টাকা দিতে পারছে না। পরবর্তী অর্থ বছরের বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত টাকা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ঠিকাদারদের অনেকে ব্যাংক ঋণ আবার কেউ ধারদেনা এবং নিজস্ব মূলধন দিয়ে বই ছাপার কাজ শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে বই সরবরাহ করেন এনসিটিবি রানিং বিল দেয়। এভাবেই বই ছাপিয়ে সরবরাহ করেন। এখন ঠিকাদারদের টাকা না দেওয়ায় তারা অর্থ সংকটে পড়েছেন। অনেকে বই ছাপা বন্ধ করে টাকার জন্য এনসিটিবিতে ধরনা দিচ্ছেন। এনসিটিবি বই ছাপার টেন্ডার দিয়েছে। টাকা তাদেরই দিতে হবে। ব্যাংকে তাদের কোটি কোটি টাকার এফডিআর আছে। এনসিটিবি চেয়ারম্যান আমাদের টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো লাভ হয়নি। আগে এ রকম সংকটে এফডিআর ভেঙে ঠিকাদারদের টাকা দেয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। সমাধান না হলে আমরা আইনানুুগ ব্যবস্থা নিবো।
নানা কারণে এবার এ বই নিয়ে একটা সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানান মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান। তিনি বলেন, এজন্য এনসিটিবি ও প্রেস মালিকরা সমানভাবে দায়ী। এবার ধারণ ক্ষমতা নেই তারপরও তাকে কাজ দেয়া হয়েছে, আর যার ধারণ ক্ষমতা আছে তাকে কাজ দেয়া হয়নি। অন্যদিকে ছোট ছোট প্রেস মালিকদের বিল দিতে অনর্থক দেরি করা হচ্ছে। এতে শ্রমিকরা নোট গাইড বইয়ের প্রেসে চলে যাচ্ছে। শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে ভারত থেকে বই পেতে দেরি হচ্ছে। আমার জানা মতে একটা কোম্পানি গতকাল পর্যন্ত মাত্র ৪০শতাংশ বই সরবরাহ করতে পেরেছে। আরেকটি কোম্পানি এখন পর্যন্ত একটি বইও দিতে পারেনি। পুরো জানুয়ারি মাসে পারে কি না তাও সন্দেহ আছে। বিষয়টিতে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তিনি।
জানা গেছে, তিনটি প্রতিষ্ঠানকে সক্ষমতার বাইরে বই দেয়া, ভারতীয় কোম্পানির কাছ থেকে সময়মতো বই না পাওয়া, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনটিসিবি) বিল দেরিতে হওয়া এবং এনসিটিবির হিসাবে ভুল করার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে।
তবে অভিযুক্ত প্রেসের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বব্যাংকের নানা শর্তের কারণে আমরা শেষ সময় এসে কাজ পাই। এছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দরের এক সপ্তাহ কাগজ ডেলিভারি বন্ধ থাকা, বছরের মৌসুম হওয়ায় শ্রমিকরা অন্যত্র কাজ করার কারণে শ্রমিক না পাওয়াই অন্যতম কারণ। তবে টেন্ডারের শর্তানুযায়ী ডিসেম্বরের পরেও আরও ২০শতাংশ বই সরবরাহ করা যায়। তারপরও আমরা এই ডিসেম্বরের মধ্যে ৮০-৮৫শতাংশ বই উপজেলা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া সম্ভব বলে জানান তারা।
একজন প্রেস মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন বড় সমস্যা শ্রমিক। কারণ আমরা খুব কম রেটে কাজ করি। এজন্য শ্রমিকদের মজুরি দিতে হয় সীমিত। অন্যদিকে নোট গাইড বইয়ের মালিকরা উচ্চ মূল্যে এই শ্রমিকদের নিয়ে যায়।
এবিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, বিল পেতে দেরি হচ্ছে এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। যে কারণে টেন্ডারের শর্ত মোতাবেক তাদের বিল যথাসময়ে ছাড় হচ্ছে। গত সপ্তাহেও ১২৯ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। জানুয়ারির মধ্যে ঠিকাদাররা সব বিল পেয়ে যাবে বলে জানান তিনি। আর ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের বই পেতে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তারা ওয়ার্ক অর্ডার পেতে একটু দেরি হয়েছে। তারপরও বই পেতে শুরু করেছি। তাদের বই পেতে একটু বিলম্ব হলেও সেটি বই উৎসবে বাধা হবে না বলে আশা তার। সম্পাদনা: এনামুল হক