পিইসিতে পাশের হার ৯৮ দশমিক ৫১ জেএসসিতে ৯৩ দশমিক ০৬ শতাংশ
শারমিন আজাদ: পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ৯৮ দশমিক ৫১ শতাংশ ও ইবতেদায়ীতে ৯৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে এ বছর। জেএসসি-জেডিসিতে ৯৩.০৬% পাস করেছে। এর মধ্যে প্রাথমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৮৯৮ জন। আর ইবতেদায়ীতে ৫ হাজার ৯৪৮ জন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বৃহস্পতিবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন।
দুপুর ১টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এবারের ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী। এবার পিইসিতে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৭৩৪ জন। পাস করেছে ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪৩২ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ১২ লাখ ৭০ হাজার ২২২ জন ছাত্র এবং ১৫ লাখ ১৮ হাজার ২১০ জন ছাত্রী। গড় পাসের হারে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে। ছাত্রদের পাসের হার ৯৮ দশমিক ৪৪ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৯৮ দশমিক ৫৬।
মন্ত্রী জানান, পাসের হার বিবেচনায় সাত বিভাগের মধ্যে শীর্ষে বরিশাল বিভাগ। এ বিভাগে পাসের হার ৯৯ দশমিক শূন্য ৯ ভাগ। ৬৪ জেলার মধ্যে প্রথম রয়েছে মুন্সিগঞ্জ। সেখাসে পাসের হার ৯৯ দশমিক ৯২ ভাগ । দেশের ৫০৮টি উপজেলার মধ্যে শতভাগ পাস করেছে ১৭টি উপজেলায়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী জানান, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ৪ হাজার ৩৩২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৪ হাজার ১৬৫ জন। পাসের হার ৯৬ দশমিক ১৪ ভাগ।
মন্ত্রী জানান, ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার ৮৭৩ জন। ছাত্রী ১ লাখ ২৬ হাজার ৬২৭ জন। মোট পাস করেছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৮১৮ জন। পাসের হার ৯৫ দশমিক ৮৫ ভাগ। জিপিএ- ৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৯৪৮ জন। ১০৫টি উপজেলায় শতভাগ পাস করেছে।
পাসের হারে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে। ছাত্রদের পাসের হার ৯৫ দশমিক ৬৩ ভাগ। ছাত্রীদের পাসের হার ৯৬ দশমিক শূন্য ৮ ভাগ।
সর্বোচ্চ পাসের হার বিবেচনায় সাত বিভাগরে মধ্যে রাজশাহী শীর্ষে। এখানে পাসের হার ৯৮ দশমিক শূন্য ৩ ভাগ। ১০৫টি উপজেলায় শতভাগ পাস করেছে। মাদ্রাসায় সারাদেশে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ২০৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৯৮ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক ৭৪ ভাগ।
সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০১৭ সালে কোনও শিক্ষকের সংকট যেন না হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর কোনও শিক্ষার্থীকে মাঠে পাঠদান করতে না হয় সে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।’
২০১৫ সালে এ পরীক্ষায় প্রাথমিকে ৯৮ দশমিক ৫২ শতাংশ ও ইবতেদায়ীতে ৯৫ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। এই হিসাবে এবার ইবতেদায়ীতে পাস বাড়লেও প্রাথমিকে সামান্য কমেছে। তবে দুই ক্ষেত্রেই পূর্ণ জিপিএ, অর্থাৎ ৫-এ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে এবার। গতবছর প্রাথমিকে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮০ জন এবং ইবতেদায়ীতে ৫ হাজার ৪৭৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। চলতি বছর ২০ থেকে ২৭ নভেম্বর সারা দেশে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় হয়। প্রাথমিকে ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৭৩৪ জন এবং ইবতেদায়ীতে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ জন এ পরীক্ষায় অংশ নেয়।
অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় এবার পাস করেছে ৯৩ দশমিক ০৬ শতাংশ শিক্ষার্থী, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যায় ঘটেছে বড় উল্লম্ফন। জেএসসি-জেডিসি মিলিয়ে এ বছর মোট ২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮৮ জন পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে, গতবছর এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৩ জন।
গতবছর এ পরীক্ষায় ৯২ দশমিক ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। এই হিসাবে এবার পাসের হার শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পরীক্ষার ফলের অনুলিপি তুলে দেন। শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরাও তার সঙ্গে ছিলেন। দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এবারের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এবার ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৯২ দশমিক ৩১ শতাংশ। এক বছরে পাসের হার শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে আমাদের কেন্দ্র ৮টি। সেখানে পরীক্ষা দিয়েছিল ৬২৬ জন, পাস করেছে ৬২৩ জন।’ মন্ত্রী জানান, এবার শুধু মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯৪ দশমিক ০২ শতাংশ। গত বছর যা ছিল ৯২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এবার তা এক দশমিক ৫৬ শতাংশ বেড়েছে। মাদ্রাসায় ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৩৩ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৭৯ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৫৮৯ জন। শতভাগ ৩ হাজার ২০৩টি প্রতিষ্ঠানে।
এ বছর সারা দেশে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫৯ জন শিক্ষার্থী জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ২১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭৫ জন পাস করেছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার মান কমে নাই। মান বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের যে মানে পৌঁছার দরকার সে মান অর্জনে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’
এ বছর সারা দেশে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫৯ জন শিক্ষার্থী জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ২১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭৫ জন পাস করেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। ৯ হাজার ৪৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
গত ১ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ৬ নভেম্বরের জেএসসির বরিশাল, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বোর্ড এবং জেডিসির সারা দেশের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। জেএসসির স্থগিত পরীক্ষা ১২ নভেম্বর এবং জেডিসির পরীক্ষা ১৯ নভেম্বর নেওয়া হয়।
২০১৫ সালে এ পরীক্ষায় আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে জেএসসিতে ৯২ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে ৯২ দশমিক ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী