জাপানীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার উদ্যোগ দেওয়া হয়েছে আয়কর অব্যাহতি
হাসান আরিফ: বাংলাদেশে কর্মরত জাপানী নাগরিকরা এখনো আতঙ্কে রয়েছেন। গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও তাদের আতঙ্ক কাটছে না। এই অবস্থায় তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদেরকে কিছু সুযোগ সুবিধাও দিচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে এখন থেকে বাংলাদেশে কর্মরত জাপানীদের আয়কর দিতে হবে না। সরকার বাংলাদেশে জাপান সরকারের আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে নিয়জিত জাপানী কোম্পানীর ঠিকাদারী/সরবারাহকারী, কনসালটেন্সদের তালিকা তৈরি করছে।
উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত ২০ জনের মধ্যে সাতজনই ছিলেন জাপানি নাগরিক। অর্থ বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, জাপানের অর্থায়নে চলমান গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে মেট্রো রেল, মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কাঁচপুর,মেঘনা গোমতী সেতু নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে আরেকটি রেল সেতু নির্মাণে সমীক্ষা, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ ও ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্র। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে,গত ১৪ জুলাই জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) ভাইস প্রেসিডেন্ট হিদেতোসি ইরিজাকি অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। তাতে জাপানি নাগরিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। এরপরই সরকার তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে। এই বিষয়ে আলোচনার জন্য অর্থমন্ত্রী গতমাসে জাপান সফর করেছেন। ওই সফলে মন্ত্রী জাপানী নাগরিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এদিকে জাপানী কোম্পানীর ঠিকাদারী/সরবারাহকারী, কনসালটেন্স ব্যবসা করছেন তাদেরকে আয়কর অব্যাহতি এবং সব প্রকল্পে নিয়োজিত জাপানী কর্মীদের আয়ের উপর আয়কর অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। ফলে এসব অব্যাহতি কার্যকর করতে জাপানীদের তালিকা দরকার। তাই বাংলাদেশে কর্মরত সব জাপানীদের তালিকা হালনাগার করছে সরকার।
জাপানীদের তালিকার হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করতে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের প্রধানদের চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে চলমান ৩৪টি প্রকল্পে কর্মরত জাপানি কোম্পানি ও নাগরিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে সব মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রকল্প পরিচালককে (পিডি) নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সচিব ও প্রকল্প পরিচালকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, জাপান সরকারের অর্থায়নে অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্টেন্সের (ওডিএ) আওতায় চলমান প্রকল্পগুলোতে নিয়োজিত জাপানি কম্পানির লোকজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থা নেবেন।
জাপানের অর্থায়নে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকল্প চলমান। অর্থ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, জাপান সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই মূলত সে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে হিদেতোসি ইরিজাকি বলেন, হলি আর্টিজানে যে সাতজন নিহত হয়েছেন, তারা নগরের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে সমীক্ষার কাজ করছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো মেট্রো রেলের সমীক্ষার কাজ। তারা সবাই জাপান ওডিএ প্রকল্পের আওতায় কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশে বর্তমান নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। এ কারণে অন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি আপনি সব মন্ত্রণালয়কে এই নির্দেশ দিন, যেন তারা জাপানের অর্থায়নে চলমান সব প্রকল্পে জাপানি কোম্পানি ও নাগরিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করে। যাতে করে জাপানি কোম্পানি ও নাগরিকরা কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর থেকে অনেক জাপানি বাংলাদেশে চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এছাড়াও বিচ্ছিন্ন ভাবে জাপানী নাগরিক নিহত হয়েছে। তাই তাদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী