উত্তর: ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি কৃষ্ণ ছিলেন মুক্ত আত্মা বা মোক্ষলাভ করা আত্মা, আর মুক্ত আত্মারা পরমেশ্বরের মধ্যে থেকে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। আর যেহেতু তিনি মুক্ত আত্মা ছিলেন এবং ধর্ম রক্ষার্থে দেহ ধারণ করেছেন।
সেহেতু সাধারণ মানুষ যেন না বুঝতে পারে তাই তিনি ইচ্ছে করেই যোগযুক্ত হতেন, এটা একটা প্রায় অভিনয়ের মতো। আর মুক্ত আত্মারা যা বলেন তা মূলত পরমেশ্বরেরই কথা। গীতায় আমি বলতে মুলত ২টি সত্ত্বাকে বোঝায়, একটা মুক্ত জীবাত্মা কৃষ্ণজী ও অপর সত্ত্বাটা পরমেশ্বরকেই বুঝিয়েছেন। প্রমাণস্বরূপ কৃষ্ণজী বলছেন যেÑ
হে অর্জুন, ঈশ্বর. সর্ব জীবের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত থাকিয়া মায়া দ্বারা যন্ত্রারূঢ় পুত্তলিকার মতো তাহাদিগকে ভ্রমণ করাইতেছেন।
গীতা ১৮।৬১.
হে ভারত, সর্বতোভাবে তাহার (ঈশ্বরের) শরণ লও, তাহার অনুগ্রহে পরম শান্তি ও চিরন্তন স্থান প্রাপ্ত হইবে।
গীতা ১৮।৬২.
আমি তোমার নিকট এই গুহ্য হতেও গুহ তত্ত্বকথা ব্যাখ্যা করিলাম, তুমি ইহা বিশেষভাবে পর্যালোচনা করিয়া যাহা ইচ্ছা হয় তাহাই কর।
গীতা ১৮।৬৩.
উপরের এই ৩টি শ্লোক থেকে পরিষ্কার এই সময় কৃষ্ণ স্বাভাবিক মানুষদের মতোই তথা জীবের মতোই কথা বলছেন। যোগীপূরুষদের মতো কথা বলছেন না।
কারণ এই স্থলে কৃষ্ণ আমার বা আমাকে শরণ লও এই কথা বলে নাই। বলেছে ঈশ্বরের শরণ নেওয়ার কথা।
আর যখন দেখলেন এতেও অর্জুন স্থির হতে পারেন নাই তখনই কৃষ্ণ যোগযুক্ত জীবাত্মার মতো কথা বললেন এবং তখন তিনি বলিলেন,
সকল ধর্ম পরিত্যাগ করিয়া তুমি একমাত্র আমারই (পরমেশ্বরের) শরণ লও, আমি(পরমেশ্বর) তোমাকে সকল পাপ থেকে রক্ষা করিব, শোক করিও না।
গীতা১৮।৬৬.
এই শ্লোকটি পড়িয়া অনেকেই ভ্রমে পতিত হয়। কারণ এতে সর্ব ধর্ম পরিত্যাগ ও আমার শরণ লও আমি তোমাকে রক্ষা করিব এই ২টি কথা মানুষকে ভ্রমে ফেলে। এইরূপ আরো অনেক অনেক স্থানেই দেখানো যাবে যে কৃষ্ণ সারাক্ষণ যোগী পুরুষদের মতো কথা বলেননি, কখনো কখনো স্বাভাবিক মানুষদের মতো কথা বলেছেন। যেমন গীতা ৪।
৫ এখানেও কৃষ্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল। আবার পরক্ষণেই যোগযুক্তদের মতো হলেন যেমন গীতা ৪।৬ ও ৭ (এখানে বিশেষভাবে এই কথাটা বলে রাখতে হবে যে শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন মুক্ত পুরুষ, আর মুক্ত পুরুষরা তাহা পারেন। শ্রীকৃষ্ণ যখনই উচিত মনে করেন তখনই মানুষী শরীর ধারণ করিবেন ইহা তার ইচ্ছা)।