বৈদিক ধর্ম আসলে কি?
যেহেতু বৈদিক সভ্যতার উত্থান হয় সিন্ধু নদের তীরে, আর সিন্ধুকে পূর্বের অশিক্ষিত যাযাবর গোষ্ঠী হিন্দু নামে ডাকত, সেখান থেকেই হিন্দু নামটি এসেছে। আবার অনেকে হিন্দু ধর্মকে সনাতন ধর্ম বলেন। কারণ এ ধর্ম হলো চিরন্তন, শাশ্বত, অব্যয়। এজন্য একে ডাকা হয় সনাতন অর্থাৎ আদি।
প্রকৃতপক্ষে এটি হলো মানব ধর্ম। মানুষের স্বাভাবিক যা ধর্ম তাই হলো বৈদিক বা সনাতন ধর্ম। আগুনের যেমন ধর্ম উত্তাপ বা দগ্ধ করার শক্তি তেমনি মানুষের জন্মগত বা স্বভাবগত বা স্বাভাবিক ধর্ম হলো সনাতন। তাই ধর্মকে রিলিজিয়ান বলা ঠিক না। সংস্কৃত ধর্ম মানে হলো মানুষে বা কোন বস্তু যা ধারণ করে। যেমন অগ্নি ধারণ করে উত্তাপ তাই অগ্নির ধর্ম হলো উত্তাপ যা কোনোকিছুকে দহন করে বা পুড়িয়ে দেয়। এখন কেউ যদি বলে অগ্নির রিলিজিয়ান উত্তাপ। তাহলে ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে যায় না? আর মানুষে যা ধারণ করে তাই হলো মানুষের ধর্ম বা মানব ধর্ম বা সনাতন ধর্ম। তেমনি যদি কেউ জিজ্ঞেস করে আপনার রিলিজিয়ান কি? আর আপনি যদি উত্তর দেন সনাতন বা হিন্দু তাহলে ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে যায়। তাই ধর্মের সমর্থক কখনও রিলিজিয়ান হতে পারে না। যদি সমর্থক ইংরেজি শব্দ খুঁজতেই হয় তা হতে পারে ঢ়ৎড়ঢ়বৎঃু।
তাহলে ধর্ম কি?
যা মানুষের মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তোলে তাই-ই ধর্ম। মানুষের যা স্বভাব, যাই মানবতা তাই-ই আসলে ধর্ম। স্বামীজির ভাষায়, ধর্ম হলো মানুষের পশুত্বকে দমন করে আর দেবত্ব জাগিয়ে তোলে। আর মানব ধর্ম বা সনাতন ধর্ম বা মানবতার এই অনন্য দর্শন বৈদিক ঋষিরা দেখেছিলেন, যারা সিন্ধু নদীর তীরে সভ্যতার পত্তন করেছিলেন। অনার্যরা সিন্ধুকে হিন্দ বা হিন্দু উচ্চারণ করত তাই এ মানব ধর্মই হলো হিন্দু ধর্ম কিংবা বৈদিক ধর্ম। অর্থাৎ সনাতন বা মানব ধর্মের আজ যে নাম হয়ে গেল হিন্দু ধর্ম তা আসলে দেয় বিদেশিরা। তাই এ নামটি প্রকৃত না। তবে নামে কিছু আসে যায় না। তাই মানুষের যেকোনো মানুষের জন্মগত বা স্বভাবগত ধর্মকে আপনি ডাকতে পারেন বৈদিক ধর্ম বা সনাতন ধর্ম বা মানব ধর্ম অথবা শুধুমাত্র ধর্ম। কারণ মানবের তো একটিই ধর্ম।
আসলে রিলিজিয়ান হলো এক একটি মতো বা মার্গ। বিভিন্ন মহাপুরুষ বিভিন্ন মতো দিয়েছেন ঈশ্বরকে পাবার পথ হিসেবে। যেমনÑ বুদ্ধ, শ্রীচৈতন্য, শঙ্করাচার্য, যিশু বিভিন্নজন। অর্থাৎ বৈষ্ণব, শাক্ত, বৌদ্ধ, শৈব, গানপত্য, শিখ, জৈন, দ্বৈত, অদ্বৈত ইত্যাদি হলো রিলিজিয়ান। এগুলো হলোÑ মত বা রিলিজিয়ান যা সবই হলো মানব ধর্মের শাখা প্রশাখা। এখন এসব মার্গের বা পথের ভালো মন্দ থাকতে পারে, সুবিধা বা অসুবিধা থাকতে পারে, গ্রহণযোগ্যতা বা অগ্রহণযোগ্যতা থাকতে পারে।
তাই সব শেষে আবার বলি ধর্ম হলো একটি তাকে কেউ ডাকে মানব ধর্ম, কেউ মানবতা, কেউ বইদিক, কেউ সনাতন, কেউ আদিধর্ম, কেউ ডাকে হিন্দু ধর্ম আর মত, পথ বা মার্গ হলো অসংখ্য।