বিপ্লব হালদার
অসুর কূলের আক্রমইের ফলে সঙ্কটে পরে দেবতারা। তাদের তাড়িয়ে স্বর্গরাজ্যের অধিকার নেওয়ার চেষ্টা করেছিল অসুররা। অসুরদের প্রধান ছিলেন রক্তবীজ। ব্রহ্মার বরে রক্তবীজের একফ্ােটা রক্ত থেকে জন্ম নিচ্ছিল আরও হাজার রক্তবীজ নামক অসুর। অসুর নিধন করতে অবতীর্ণ হন দেবী দূর্গা। সব অসুর নিহত হলেও বেঁচে থাকেন রক্তবীজ। কিন্তু সেই যুদ্ধেও ব্রহ্মার বরে অপরাজেয় থাকেন রক্তবীজ। এই অবস্থায় দূর্গার ভীষণ ক্রোধ থেকে জন্ম নেন দেবী কালী। অগ্নিকা কালীর ভয়াল দৃষ্টিতেই নিহত হয় বহু অসুর। এরপর দেবীর চিৎকারে প্রাণহানি হয় আরও অনেক অসুরের। রক্তবরণ লকলকে জিব বের করে কালী গ্রাস করে নেন হাতি ও ঘোড়ায় সওয়ার অসুর বাহিনীকে। তারপরেও টিকে থাকেন রক্তবীজ।
এই অবস্থায় দেবী কালী তাকে অস্ত্রেবিদ্ধ করে তার রক্ত পান করতে থাকেন। রক্তবীজের একফোঁটা রক্তও যাতে ভূমিতে না পড়ে, সেই কারণে রক্তবীজের দেহ শূন্যে তুলে নেন দেবী কালী। এই অবস্থায় রক্তবীজের দেহের সবটুকু রক্তপান করেন দেবী কালী। শেষ বিন্দু রক্ত পান করার পর নিথর রক্তশূন্য রক্তবীজের দেহ ছুঁড়ে ফেলে দেন মাতা কালী। আকণ্ঠ রক্ত পান করে বিজয়নৃত্য শুরু করেন মাতা কালী। নিহত অসুরের হাত দিয়ে তিনি কোমরবন্ধনী এবং মাথা দিয়ে মালিকা বানিয়ে পরিধান করেন। কালীর উন্মাদনী নাচ দেখে প্রমোদ গোনেন দেবতারা। কারণ এই নাচে আসন্ন হচ্ছিল সৃষ্টির লয়। পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য দেবতারা শিবের শরণাগত হলেন। শিবের একাধিক মৌখিক অনুরোধ শুনতে পাননি মাতা কালী। কারণ তখন তিনি উন্মাদিনী মতো নেচে চলেছেন। আর কোনো উপায় না দেখে নৃত্যরতা কালীর পথে শয়ন করে পথ রোধ করেণ মহাদেব। এরপরই স্মবিত ফেরে মাতা কালীর। থেমে যায় নাচ। নিজের পায়ের নিচে আবিষ্কার করেন স্বামীকে। পায়ের নিচে স্বামীকে দেখে লজ্জায় জিভ কাটেন দেবী কালী। এই পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বন করেই যুগ যুগ ধরেই পূজিত হয়ে আসছে মায়ের এই প্রতিমা। দূর্গার পাশে শিবকে নানাভাবে দেথা যায়। তার মধ্যে হরগৌরী রূপ বিখ্যাত। মাতা কালীর সঙ্গে শিব থাকলে তার জায়গা সবসময় দেবীর পদযুগলের নিচে। এই বিগ্রহে কালীর ডান পা যদি এগিয়ে থাকে তবে তিনি দক্ষিণা কালী। আবার বাম পা এগিয়ে থাকলে তা মায়ের বামা ক্ষ্যাপা রূপ।