কৃষ্ণকান্ত বৈরাগী
শ্রীমদ্ভাগবত গীতার ষোড়শ অধ্যায়ের ১ম, ২য় ও ৩য় শ্লোকে বলা হয়েছে দিব্যগুণে যার জন্ম হয়েছে তার মধ্যে ভয়শূন্যতা, সত্তার পবিত্রতা, প্রকৃত জ্ঞানের অনুশীলন, দান, আত্মসংযম, যজ্ঞ অনুশীলন, শাস্ত্র অধ্যয়ন, তপশ্চর্যা, সরলতা, অহিংসা, সত্যবাদিতা, ক্রোধশূন্যতা, বৈরাগ্য, শান্তি, অন্যের দোষ দর্শন না করা, জীবে দয়া, নির্লোভ, মৃদুতা, লজ্জা, অচপলতা, তেজ, ক্ষমা, ধৈর্য, অদ্রোহ, অভিমানশূন্যতাÑ এই সমস্ত গুণ দেখা যায়। উল্লেখিত গুণসমূহের প্রতিটির বিষদ ব্যাখ্যা রয়েছে। দিব্যগুণে জন্ম হয়েছে যার- কথাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বৈদিক শাস্ত্রে নির্দেশিত দশবিধ সংস্কার যথাযথভাবে অনুসরণের মাধ্যমেই দিব্যগুণ সম্পন্ন সন্তান লাভ করা যায়। বাসনা চরিতার্থ করা থেকে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করে তার মধ্যে দিব্যগুণ দুর্লভ।
পরমেশ্বর ভগবান সর্বদাই তার সন্তানদের রক্ষা করছেনÑ এই দৃঢ় বিশ্বাসকেই বলে ভয়শূন্যতা। ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ থেকেই এ ধরনের দৃঢ় বিশ্বাস তৈরি হয়। সত্তার পবিত্রতা হলো নিজের অস্তিত্ব পবিত্র রাখা। পিতা-মাতা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ইত্যাদি বহুবিদ প্রভাবের উপর এটা নির্ভর করে। পিতা-মাতা যদি পবিত্র সত্তায় অধিষ্ঠান করেন, সমাজে যদি পবিত্রতা বিরাজ করে, তবে সন্তান যেমন জন্মগতভাবে এ ধরনের গুণ লাভ করে তেমনি সমাজ থেকেও সে একই শিক্ষা পায়। এভাবে প্রতিটি গুণাবলি অর্জনের পেছনে যেমন জন্মগত প্রভাব থাকে তেমনি থাকে পরিবেশগত প্রভাব।
যারা দিব্যভাবসম্পন্ন তারা বৈদিক রীতি অনুসারে সাত্ত্বিকভাবে জীবনযাপন করে মুক্তির পথে অগ্রসর হন। অন্যরা রাজসিক ও তামসিক কর্মের ফলস¦রূপ বিভিন্ন দেহ ধারণ করে জড় জগতে অবস্থান করেন। বর্তমান সময়ে দিব্যভাব সম্পন্ন মানুষের খুবই অভাব। কারো কারো মধ্যে হয়তো আংশিক পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু কল্যাণার্থে সমাজের স্তর উন্নয়নের জন্য দিব্যগুণ সম্পন্ন মানুষের খুবই প্রয়োজন। তাই বর্ণাশ্রম ধর্মের আলোকে অনুশীলনের মাধ্যমে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে এ সকল গুণাবলি সঞ্চার করে ধীরে ধীরে সমাজকে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়াসী হওয়া দরকার।