জঙ্গি দমনকারী ইউনিটগুলোর উৎকন্ঠা বাড়াচ্ছে ‘স্লিপার সেল’
আমিনুর রহমান তাজ : পুলিশের জঙ্গি দমনকারী ইউনিটগুলোর উৎকন্ঠা বাড়াচ্ছে ‘স্লিপার সেল’। এই সেল থেকেই দেশে আক্রমন শানাচ্ছে জঙ্গিরা। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার পূর্ব আশকোনার যে বাড়িটিতে নারী জঙ্গি আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় সে ‘স্লিপার সেলের’ই একজন সদস্য বলে ধারনা করছে গোয়েন্দারা।
দেশের ভেতরে জঙ্গিদের এধরনের কয়টি স্লিপার সেল রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই দেশের জঙ্গি দমনকারী ইউনিট র্যাব ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে। ফলে এক ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি সার্বক্ষণিক বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। পুলিশের পরিসংখ্যান মতে, গত ১১ বছরে (২০০৪-২০১৬) দেশের ভেতরে ৩০ জনেরও বেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি খুন হয়েছেন জঙ্গিদের হাতে। এ সকল খুনের সঙ্গে জড়িতরা প্রত্যেকেই স্লিপার সেলে’র সদস্য।
গত জুলাই মাসে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান স্প্যানিশ রেস্তোঁরাতে হামলা পরিচালনাকারী জঙ্গিরা ছিল স্লিপার সেলেরই সদস্য। ওই হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা, বিদেশী ও ৬ জঙ্গিসহ মোট ২০ জন নিহত হয়। হামলাকারী জঙ্গিরা সকলেই স্লিপার সেলের সদস্য ছিল বলে জানা গেছে। র্যাব ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, দেশে জঙ্গিদের স্লিপার সেলের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ (হুজি), হিজবুত তাহরীর ও আনসারউল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এর সদস্যদের স্লিপার সেল রয়েছে। এই সেলগুলোতে অবস্থান করে ব্যক্তি ও স্থানকে টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে জঙ্গিরা। র্যাব ইন্টেলিজেন্স প্রধান আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামি ষ্টেটস (আইএস) ও আল-কায়েদার সঙ্গে এদের যোগসুত্র রয়েছে। তাদের নির্দেশেই পরিচালিত হচ্ছে হামলা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দম্পত্তি, ফ্যামেলি পরিচয়ে আবার কখনো ব্যাচেলর হিসেবে বাড়ি ভাড়া নিয়ে এই ‘স্লিপার সেল’ খোলা হচ্ছে। এই সেলকে ঘিরেই সংগঠিত হচ্ছে জঙ্গিরা।
রাজধানীতে এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে রাজধানীর বাড়ির মালিকদের কাউকে বাড়ি ভাড়া না দেয়ার জন্য সতর্ক করে দেয়। পরে আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশ নগরীতে বসবাসরত ভাড়াটিয়াদের পরিচয় সম্পর্কে লিখিত তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে। এ সকল তথ্য বর্তমানে বস্তাবন্দী অবস্থায় থানাগুলোতে পরে আছে। জনবল স্বল্পতার জন্য পুলিশ ভাড়াটিয়াদের তথ্যগুলো ভেরিফাই করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা।
গত তিন বছরে রাজধানীতে যেসকল ব্লগার, প্রকাশক ও মুক্তমনা খুন হয়েছেন তাদের হত্যাকান্ডের পেছনে ‘স্লিপার সেল’র জঙ্গিদের হাত রয়েছে। পুলিশের তদন্তকারীরা কর্মকর্তারা বলেছেন, লেখক অভিজিৎ হত্যায় আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের ৭ জঙ্গির হাত ছিল। আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের নেতা রেদওয়ানুল আজাদ রানা এই অভিজিৎ হত্যাকান্ডে নেতৃত্ব দেয়। কিলাররা সকলেই স্লিপার সেলের সদস্য ছিল বলে জানা গেছে। একই কায়দায় হত্যা করা হয়, ব্লগার রাজিব হায়দার, ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে। পরবর্তীতে এই হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় জঙ্গি জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলামকে যারা স্লিপার সেল’র সদস্য বলে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে । সম্পাদনা: এনামুল হক