বাংলাদেশে বিনিয়োগ আগ্রহ দেখাচ্ছে বিদেশি কোম্পানিগুলো
আজাদ হোসেন সুমন: দেশে এখন স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক সহিংসতা নেই। নেই হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচিও। এ অবস্থায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তির কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বড় আকারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে নামকরা সব বিদেশি কোম্পানি। চীন, ভারত, জাপান, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বিনিয়োগ প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে। কারো প্রস্তাবে এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার, আবার কারো তার চেয়েও বেশি। অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে, কেউ পর্যটনশিল্পে আবার কেউ কেউ এলপিজি প্ল্যান্ট নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া বস্ত্রশিল্প, মোটরসাইকেল তৈরি, নির্মাণসামগ্রী ও কাঁচশিল্প তৈরি করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে অনেক বিদেশি কোম্পানি।
দেশীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগ করতে বেশ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি এরই মধ্যে সমঝোতা স্মারকও (এমওইউ) সই করে ফেলেছে। আগামী বছরের মধ্যে ভূমি উন্নয়ন ও প্ল্যান্ট নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্প পার্ক ও কারখানার কাজ শুরু হবে। আগামী ১৫ বছরে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর পাশাপাশি জাপান, চীন ও ভারতের অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্যও স্থান চূড়ান্ত করে রেখেছে সরকার।
এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে বাড়তি ৪০ বিলিয়ন (৪,০০০ কোটি) ডলারের পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জমির নিশ্চয়তা এবং একগুচ্ছ প্রণোদনা প্যাকেজ দেখে তাতে আগ্রহ তৈরি হয়েছে বিদেশি কোম্পানিগুলোর। তারা এরই মধ্যে বেজার নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া যারা যৌথভাবে বিনিয়োগে আগ্রহী, তারা দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। অনেকে সমঝোতা স্মারক সই করার পর এখন চূড়ান্ত চুক্তির অপেক্ষায়। সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ইথান কোম্পানি কক্সবাজারের মহেশখালীতে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। ২০০ একর জমির ওপর তারা দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে। প্রতিষ্ঠানটি ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায়। মিরসরাইয়ে ৮,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে সমঝোতা চীনের কেআইএসসির প্রস্তাবিত মিরেরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে যৌথভাবে ১০০ কোটি ডলার (প্রায় ৮,০০০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের স্টিল কোম্পানি বিএসআরএম এবং চীনের কুনমিং আয়রণ অ্যান্ড স্টিল হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড (কেআইএসসি)। মিরেরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে যৌথভাবে এই ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে দুটি কোম্পানি। এরই মধ্যে দুই কোম্পানির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এ জন্য বেজার কাছে ৫০০ একর জমি চেয়েছে তারা। এটি বাস্তবায়িত হলে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, অননুন্নত ও দারিদ্র্যতার তকমা থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে সম্প্রতি। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায়ও সরকার সফলতার পরিচয় দিয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতাও এখন নেই, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অনেকটা স্বাভাবিক। এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। সরকারও এ ব্যাপারে আরও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি করার কথা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। যদি সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে খুব বেশিদিন সময় লাগার কথা নয়। সম্পাদনা : আমিনুর রহমান তাজ।