যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশিয়ার ৩৫ কূটনীতিক বহিষ্কার, ট্রাম্পের জন্য অপেক্ষা পুতিনের
কামরুল আহসান: গত মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হ্যাকাররা সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে এই অভিযোগে আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা খুব কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। রাশিয়ার ৩৫ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের আমেরিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুরো পরিবার নিয়ে। রাশিয়ার কূটনীতিকদের পরিচালিত নিউইয়র্কের দুটো কম্পাউন্ডও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নতুন বছরের আগ মুহূর্তে আমেরিকার বিমানপথে এখন তীব্র জ্যাম। বিমানের টিকিটও পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় পুরো পরিবার নিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে দেশটিতে কর্মরত রাশিয়ার কূটনীতিকরা। স্বভাবতই রাশিয়ার তাতে মারাত্মক ক্ষুব্ধ হওয়ার কথা। তা তারা হয়েছেনও।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখরোভা ওবামাকে আখ্যা দিয়েছেন প্রতিহিংসা পরায়ণ এক ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতিক হিসেবে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ঘোষণাও দিয়েছিলেন, রাশিয়ার ৩৫ জন কূটনীতিককে আমেরিকা থেকে বিতাড়িত করার বিরুদ্ধে রাশিয়াও আমেরিকার
কূটনীতিকদের তাড়াবে। কিন্তু, না, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এতো দ্রুতই কোনো প্রতিহিংসার প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাইলেন না। তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়া আমেরিকার কোনো কূটনীতিককে এখনই বহিষ্কার করছে না। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য তারা অপেক্ষা করবেন।’
২০ জানুয়ারিতেই ক্ষমতায় আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্পও জানিয়েছেন, ‘এখন আমাদের দেশকে আরও বড় ও মহৎ করে গড়ে তোলার সময়। এখন বিভাজন তৈরির সময় না। আগামী সপ্তাহেই এই চলমান সংকট নিয়ে আমি আন্তর্জাতিক নেতাদের সঙ্গে বসবো।’
এর আগে রাশিয়ায় আমেরিকার একটি অ্যাংলো-আমেরিকান স্কুল বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল। মারিয়া জাখরোভা সে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছিলেন, ওয়াশিংটনের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার কথা বিবেচনা করে আমরা এখনো আশা করছি এ ধরনের উদ্ভট পদক্ষেপ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। তার চেয়ে বরং দ্বি-পাক্ষিক সম্মতির ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে এগিয়ে যাওয়াই ভালো। আমরা এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি যে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ব্যক্তিগতভাবে এ ধরনের নির্দেশ দিয়েছেন।
রাশিয়া এখনো বলছে যে, গত আমেরিকার নির্বাচনে রাশিয়ার গোয়েন্দারা কোনোরকম হস্তক্ষেপ চালায়নি। এক ধরনের মিথ্যা খবরের উপর ভিত্তি করেই তারা বারবার রাশিয়াকে অভিযুক্ত করছে এবং শেষ পর্যন্ত এরকম মারাত্মক একটা পদক্ষেপ নিয়েছে যা ঠা-া যুদ্ধের কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিই ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)-এর সঙ্গে যুক্তভাবে ১৩ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তারা এখন নিশ্চিতভাবেই সমস্ত তথ্যপ্রমাণ নিয়ে প্রায় ছক এঁকে বুঝিয়ে দিচ্ছে কীভাবে কখন কোত্থেকে রাশিয়ার হ্যাকাররা আক্রমণ চালিয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি চলছে। রাশিয়া এখনই কোনো জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছে না পুতিনের এই বিবৃতিই আপাতত শেষ খবর। আর বাকি খবর জানার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প ওবামার হাত থেকে ক্ষমতা গ্রহণের পর পর্যন্ত। বিবিসি, সিএনএন। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি