বইমেলায় বিতর্কিত প্রকাশনা লেখকের বই না তুলতে পুলিশি সুপারিশ আছে
রিকু আমির: শ্রাবণ প্রকাশনীকে অমর একুশে বই মেলায় অংশ নিতে না দেয়ার বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো সুপারিশ বা নির্দেশনা না থাকলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন বই ও প্রকাশনা সংস্থা যেন মেলায় অংশ নিতে না পারে, সে বিষয়ে বাংলা একাডেমির প্রতি সুপারিশ আছে পুলিশের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশ থেকে পাওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে বাংলা একাডেমি সতর্ক অবস্থানে গিয়েছে। যাদের সম্পর্কে মেলা সম্পর্কিত তিল পরিমাণ দোষ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এরকম একটি অনন্য উদাহরণ শ্রাবণ প্রকাশনী। গত বইমেলায় ধর্মকেন্দ্রিক একটি বই ঘিরে ব-দ্বীপ প্রকাশনী নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়, যাতে আসামি করা হয় ব-দ্বীপের প্রকাশক শামসুজ্জামান মানিককে। তার মুক্তির দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার কারণে বাংলা একাডেমি শ্রাবণ প্রকাশনীকে আগামী দুই বছরের জন্য একুশে বই মেলায় অংশ নিতে দেয়া থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
শ্রাবণের কর্ণধার রবীন আহসান আন্দোলনে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন সাংবাদিকদের কাছে। গত সোমবার তিনি বলেন, আমি টক শোতে ও মানববন্ধনে মানিকের গ্রেফতারের প্রতিবাদ করেছিলাম, তার মুক্তি চেয়েছিলাম।
শাহবাগ থানা সূত্র দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে জানায়, বাংলা একাডেমির পূর্বানুমতি ছাড়া একটি বইও অমর একুশে বইমেলার কোনো স্টলে স্থান পাবে না। একইসঙ্গে যেসব বই বাংলা একাডেমি অনুমতি দেবার পর স্টলে নেয়া যাবে, সেসব বইয়ের কমপক্ষে একটি কপি বাংলা একাডেমির কাছে সংরক্ষিত রাখা হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এই কৌশল গ্রহণ করেছে। এ কৌশল সুপারিশ আকারে এরই মধ্যে বাংলা একাডেমিকে জানিয়েছে শাহবাগ থানা পুলিশ।
শাহবাগ থানার ওসি আবুবকর সিদ্দিক গত বুধবার দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, এই সুপারিশ করার কারণ একটিই, যেন এমন কোনো প্রকাশনা স্টলে না উঠে, যাকে কেন্দ্র করে কোনো অশান্তি বা গোলোযোগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। যেমনটি হয়েছিল গত বছর। এর পাশাপাশি যেসব প্রকাশনীর বই নিয়ে বিভিন্ন সময় বিতর্ক সৃষ্টি হয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠেছিল, সেসব প্রকাশনীকেও মেলা থেকে একদম দূরে রাখা হবে। তারা যেন স্টল করার অনুমতি না পান, সেজন্য বাংলা একাডেমির কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
কিন্তু পুলিশ কোনো প্রকাশনা সংস্থা বা বইয়ের নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে বাংলা একাডেমির কাছে কোনো সুপারিশ করেছে কি-না, জানতে চাইলে শনিবার আবুবকর সিদ্দিক এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।
শাহবাগ থানার ওসি (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ শনিবার এ প্রতিবেদককে জানান, বাংলা একাডেমির কাছে পুলিশ কোনো প্রকাশনা সংস্থা বা লেখকের নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে কোনো সুপারিশ করেনি। পুলিশ শুধুমাত্র বলেছে- যাতে এমন কোনো প্রকাশনা সংস্থা বা লেখকের বই মেলায় স্থান না পায়, যে কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এসব কিন্তু বাংলা একাডেমির প্রতি কোনো নির্দেশ নয়, সুপারিশ মাত্র। তারা যদি পুলিশের কথা না-ও রাখে, তাতে পুলিশ বাধা দিবে না। কেননা, মেলা বাংলা একাডেমির। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এবং সুন্দর পরিবেশে মেলা পরিচালনায় পুলিশ প্রস্তুত।
বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ বলেন, গত বছর ইসলাম বিতর্ক নামের একটি বই নিষিদ্ধ করা হয়। ওনারা (শ্রাবণ প্রকাশনী) এর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। গত ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত একাডেমির কাউন্সিলে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবং তাদের তৎপরতাকে বইমেলার স্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনা করে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। তবে পাল্টা জবাব দিতে মামলার পথে হাঁটার জোর চিন্তায় আছে শ্রাবণ প্রকাশনী। একটি গণমাধ্যমকে বিন আহসান বলেন, আমি কোনো অন্যায় করে থাকলে আমাকে আইনের আওতায় আনতে পারে মহামান্য আদালত। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোনো ভিত্তিই নেই; অথচ আমার প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমি মহামান্য আদালতের কাছে এর বিচার চাইব।
শ্রাবণ প্রকাশনীর দুই বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা শর্ত সাপেক্ষে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা একাডেমি। এজন্য ওই প্রকাশনীকে লিখিত অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। গত শুক্রবার একাডেমির নির্বাহী পর্ষদের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। শনিবার পর্যন্ত এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি নেই। সম্পাদনা: শারমিন আজাদ