পাঠ্যক্রমে যুক্ত হলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা
জাফর আহমদ: প্রথমবারের মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা পাঠ্য বইয়ে যুক্ত হলো। এই নৃগোষ্ঠীগুলো হলো চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা (ককবরক), গারো ও ওঁরাও (সাদরি)। এই পাঁচ জাতিগোষ্ঠীর জনসংখ্যা ১০ লাখের বেশি। গতকাল এসব বইয়ের একটি সেট শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন। পাঠ্যক্রম বোর্ডে একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, যে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় বই যুক্ত হলো তার মধ্যে চাকমা ও মারমা ভাষার বইগুলো তাদের নিজস্ব লিপিতে লেখা। কিন্তু বাকি তিনটি নৃগোষ্ঠীর বইগুলো লেখা হয়েছে কোনোটি বাংলা লিপিতে, কোনোটি রোমান হরফে। এর মধ্য দিয়ে বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির যে আকাক্সক্ষা তা বাস্তায়ন হলো।
সূত্রটি জানায়, চলতি বছর শুধু প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় এসব বই দেওয়া হবে। পরের বছর (২০১৮) প্রথম শ্রেণি ও এরপরের বছর দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বইও মাতৃভাষায় ছাপিয়ে বিনা মূল্যে বিতরণ করা হবে। এরপর ধীরে ধীরে সবাইকে জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বই পড়তে হবে। অন্যদিকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য যুক্ত হলো ব্রেইল বই। সকল শ্রেণির দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা চলতি বছর এই বই পাবেন। এর মধ্য দিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো। এ ব্যাপারে জাতীয় পাঠ্যক্রম বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ন চন্দ্র সাহা এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাঁচটি ভাষা পাঠ্যক্রমে যুক্ত হলো। এর মধ্য দিয়ে দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা ও সংস্কৃতিকে রক্ষার যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তার বাস্তবায়ন শুরু হলো। পাশাপাশি সবার মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থার যে প্রতিশ্রুতি সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে তারও এক ধাপ এগুলো।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৌরভ সিকদার বলেন, এটার জন্য আমরা অনেক দিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। এটা হলে খুবই ভালো হবে। তবে শুধু বই হলেই মাতৃভাষায় শিক্ষা হয়ে যাবে এমনটা নয়। শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিষয়টিও নির্ভর করবে এর সফলতা। সেটা না হওয়া পর্যন্ত এটা বাস্তবায়ন কঠিন হবে।
পাঁচ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা পাঠ্য বইয়ে যুক্ত হওয়ায় কৃতজ্ঞা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ। এ ব্যাপারে খাহড়াছড়ির ‘জাবারাং’ নামক একটি অধিকার সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক মধুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, এটা আমাদের অধিকার। দীর্ঘদিন আমরা দাবি করে আসছিলাম। পাঠ্যবইয়ে পাঁচ আদিবাসীর ভাষা যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের সে দাবি পূরণ হলো। এখন অপেক্ষা বাস্তবায়নের। পাশাপাশি সকল ভাষাগোষ্ঠীর ভাষা যুক্ত হবে- এটাও প্রত্যাশা। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী