নির্বাচন ভবন উদ্বোধন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব: রাষ্ট্রপতি
সাইদ রিপন: নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি দক্ষ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুুল হামিদ।
গতকাল ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নতুন ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার বিষয়টি তুলে ধরে এই আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করে কেবল গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ও অগ্রযাত্রাই রক্ষা করে না, জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভোটের অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতন্ত্রের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে নির্বাচন। তবে গণতন্ত্রের চর্চা ও বিকাশের জন্য শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠানই যথেষ্ট নয়। গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করতে হলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পাশাপাশি প্রক্রিয়াগত পরিবর্তনেরও প্রয়োজন রয়েছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে সজাগ থাকতে হবে। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ, দেশব্যাপি জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করায় বিদায়ী নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ দেন রাষ্ট্রপতি হামিদ।
তিনি বলেন, জনগণ সব সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করে এবং গণতন্ত্রের জন্য তা অপরিহার্য। তবে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সকল রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, সমর্থকসহ সাধারণ জনগণের সদিচ্ছা ও সহযোগিতা অত্যাবশ্যক।
রাষ্ট্রপ্রধান আরও বলেন, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় তা দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমি মনে করি, আগামী যে কোনো নির্বাচনের জন্য এ নির্বাচন একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেবে নতুন ইসি। ওই কমিশনের অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।
২০০৭ সালে পশ্চিম আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাশে নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ২ একর ৩৬ শতাংশ জমি নির্বাচন কমিশনকে বরাদ্দ দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ণ মন্ত্রণালয়। প্রায় ২শ কোটি টাকা ব্যয়ে এ ভবন নির্মাণের কাজ ২০১১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শুরুই হয় ২০১২ সালে।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এমএ সাঈদের আমলে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ভবনের জন্য জমি বরাদ্দ দেয় সরকার। এরপর সিইসি এটিএম শামসুল হুদার সময়ে কমিশন জমি অধিগ্রহণ, ভবনের নকশা চূড়ান্ত করা হয়। কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশন বিদায়ের আগে ভবনটির উদ্বোধন হলো। ২ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭ বর্গফুট বিশিষ্ট ‘নির্বাচন ভবনে’ রয়েছে সৌরবিদ্যুৎ ও বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা।
দ্বিতল বেইজমেন্টে শব্দ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাসহ আধুনিক মিলনায়তন ও নিজস্ব পানি সরবরাহ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ১১তলা ভবনটির চত্বরে ভাস্কর মৃণাল হকের তৈরি ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের দুটি ভাস্কর্য রয়েছে। দুই ভাগে বিভক্ত ভবনটির পূর্ব অংশে কমিশন অফিস এবং পশ্চিম অংশে ইসি সচিবালয় থাকবে, মাঝখানে থাকছে সুদৃশ্য ফোয়ারা।
আধুনিক রেফারেন্স লাইব্রেরি, মিডিয়া সেন্টার, কনফারেন্স কক্ষ, প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় সার্ভার স্টেশন ও ন্যাশনাল আইডি উইংও থাকছে এ ভবনে। এছাড়া অন্যান্য ফ্লোরে থাকছে নির্বাচন শাখা, পল্লী শাখা, প্রশাসন শাখা, বাজেট শাখা ও আইটি শাখা।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নতুন ভবনের ফলক উন্মোচন করেন এবং ভবনের সামনে একটি ‘লালপাতা’ গাছের চারা রোপণ করেন। পরে ভবনের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। অন্যদের মধ্যে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, ইআরসির জাতীয় প্রকল্প পরিচালক এসএম আশফাক হোসেন বক্তৃতা করেন। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী