শিক্ষার মান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপের বিষয়েও সমালোচনাকারীদের সহযোগিতা করা উচিত প্রধানমন্ত্রী
শারমিন আজাদ: প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেই। ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমরা ২’শ ২৫ কোটি ৪৩ লাখ বই বিতরণ করেছি। নতুন বই পেলে আনন্দের অনুভূতি হয়। সুন্দর এই অনুভূতি পড়ালেখার আগ্রহ বাড়ায়। এ জন্যই আমরা প্রতিবছর সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেই।’ তিনি বলেন, ‘বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার আরেকটি কারণ আছে। অনেক বাবা-মা ছেলে-মেয়েদের বই কিনে দিতে পারে না। অনেকে অবহেলার কারণেও বই কিনে দেয় না। তাই বছরের প্রথম দিনেই আমরা তাদের হাতে বই তুলে দেই যাতে সন্তানদের পড়ালেখার জন্য বাবা-মায়ের কোনও অজুহাত না থাকে। গণভবনের ব্যাংকুয়েট হলে গতকাল শনিবার ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
দেশে পড়ালেখার মান নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাদের (সমালোচকদের) বলব, একদিনে সবকিছু হয় না। আর মানের মাত্রাটা কী, সেই ব্যাখ্যা আমরা এখনও পাইনি। যারা এই প্রশ্নটা তোলেন তাদের কাছ থেকে যদি মানের মাত্রাটা পেতাম তাহলে খুশি হতাম। তিনি বলেন, পড়ালেখার মান নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কিছুদিন অবস্থান করে কোন কোন এলাকায় মানের ঠিক নেই তা জানাতে পারেন। পাশাপাশি পড়ালেখার মান উন্নয়নে কার্যকর কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সে বিষয়েও সহযোগিতা করা উচিত বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে এসময় শেখ হাসিনা বলেন, নতুন বছরের আগমন উপলক্ষে সবাইকে হ্যাপি নিউ ইয়ার। ইংরেজি বছর তো, তাই ইংরেজিতে বললাম।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মান সবসময় পরিবর্তনশীল। বিশ্বে সবকিছুতেই পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা এখন বিজ্ঞান শিক্ষা, প্রযুক্তি শিক্ষাসহ সব ধরনের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। শিক্ষাকে সার্বজনীন করেছি। প্রতিবছরের শুরুতেই আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিচ্ছি। এমনকি ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী তান্ডবের মধ্যেও আমরা সব শিক্ষার্থীর হাতে সময়মতো বই তুলে দিয়েছি। শিশুরা শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, মেধা ও মনননের বিকাশ ঘটিয়ে আরও উদার হয়ে সংস্কৃতি, ধর্ম, খেলাধূলা সব ক্ষেত্রেই পারদর্শী হয়ে উঠবে বলে নিজের আশাবাদ ব্যাক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে যেসব শিশুরা বই গ্রহণ করেছে তাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মৌলিক অধিকার। এই অধিকার সবাইকে গ্রহণ করতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা। দারিদ্র্যমুক্ত করতে হলে সবাইকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। শিক্ষাই দারিদ্র্যমুক্তির মূল ভিত্তি। শেখ হাসিনা আরো বলেন, শিক্ষাকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে আ.লীগ সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নতি একদিনে সব হয়ে যায় না। সেজন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা চাই সব ছেলে-মেয়ে পরীক্ষা দেবে, এ জন্যই পঞ্চম-অষ্টমের পরীক্ষা ব্যবস্থা। অথচ এই দুই পরীক্ষা নিয়েও অনেকে কথা বলেন। বাংলাদেশে পড়াশোনার মান নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেন তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা আগে ভলান্টিয়ার সার্ভিস দিন, তারপর কথা বলুন। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, পিইসি-জেএসসির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ভীতি কমছে। এতে করে তাদের মধ্যে সাহস জন্মাচ্ছে। দিন দিন রেজাল্টও ভালো হচ্ছে, পাসের হারও বাড়ছে। শেখ হাসিনা বলেন, একটা সময় ছিল যখন ক্লাস থেকে কিছু ছেলে-মেয়ে বেছে, তাদের প্রস্তুত করা হতো বৃত্তির জন্য। তাদের ভালো টিফিন দেওয়া হতো, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা সেটি পেতো না। বৃত্তির জন্য শিক্ষকরা যাদের বাছলেন না, তাদের মধ্যেও তো মেধাবী থাকতে পারে। কেউ বৃত্তি পাবে, বাকিরা বঞ্চিত থাকবে, এই পদ্ধতি ঠিক করতেই পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণিতে পরীক্ষা। সম্পাদনা : আনিসুর রহমান তপন।