বাংলা ডোমেইন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
শারমিন আজাদ: প্রধানমন্ত্রীর হাতে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো ডট বাংলা ডোমেইন। যার ফলে এখন বাংলা ভাষায় নাম ঠিক করে ওয়েব ঠিকানার নিবন্ধন নেওয়া যাবে। আগ্রহীরা আজ রোববার থেকেই নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ‘ইন্টারনেট কর্পোরেশন অব অ্যাসাইন্ড নেমস অ্যান্ড নাম্বার (আইসিএএনএন) বাংলাদেশের জন্য ডট বাংলা (.বাংলা) ডোমেইন চূড়ান্তভাবে বরাদ্দ দেওয়ার দুই মাস পর গতকাল শনিবার দুপুরে গণভবনে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, ডট বাংলা ডোমেইন চালু হলে আইসিটি খাতে ব্যবসার আরও প্রসার ঘটবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণার সমালোচনা করেছিলেন, তারাও ডট বাংলা ডোমেইন ব্যবহার করতে পারবেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী, বিটিআরসির প্রধান শাহজাহান মাহমুদ এবং বিটিসিএলের এমডি মাহফুজ উদ্দিন আহমদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের জন্য এতদিন আইসিএএনএনের স্বীকৃত ডোমেইন কোড ছিল ডট বিডি (. বিডি)। গত ৫ অক্টোবর তার সঙ্গে যুক্ত হয় ডট বাংলা।
কোনো একটি রাষ্ট্রের জাতীয় পরিচয়ের স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করে এই ডোমেইন। যেমন ডট ইউকে ডোমেইল নামের কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেই বুঝা যাবে সেটি যুক্তরাজ্যের ওয়েবসাইট। তেমনি ইউনিকোড দিয়ে স্বীকৃত বাংলাদেশি ডোমেইন ডট বাংলা। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত সরকারের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ এবং সিয়েরা লিওন একই ডোমেনের আবেদন করেছিল। ডট বাংলা ডোমেইন এর টেকনিক্যাল কনটাক্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। বাংলায় নতুন ডোমেইন নাম চালু হওয়ার পর িি.িনঃপষ.পড়স.নফ এর বদলে ইন্টারনেট ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে বিটিসিএল.বাংলা লিখেও বিটিসিএল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাবে।
অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের নানাবিধ উদ্যোগের তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, একটি উন্নত সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে অবাধ তথ্যপ্রবাহ অপরিহার্য। তিনি বলেন, একটি উন্নত সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে অবাধ তথ্যপ্রবাহ অপরিহার্য। এই কারণেই আমরা তথ্যপ্রবাহের সকল মাধ্যমের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সম্প্রসারণ করে যাচ্ছি।
শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের (সিটিভি) ৬ ঘণ্টা সম্প্রচারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলায় তার সরকারের উদ্যোগের তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে আমরা দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। ১৯৭৫ সালের সেই কালো অধ্যায় যদি রচনা না হতো, তাহলে ২০ বছর আগেই দেশের উন্নয়ন হতো। বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে তখন থেকে দেশের উন্নয়ন শুরু হয়। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর দেড় ঘণ্টা সম্প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের যাত্রা শুরু করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এখন ২০ বছর পর এসে আবারও আওয়ামী লীগ সরকার বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ৬ ঘণ্টা সম্প্রচারের উদ্বোধন করলো। ভবিষ্যতে এটি সম্পূর্ণ চ্যানেল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে সব বিভাগীয় শহরগুলোতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র চালু করা যাবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনকালে গণভবনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, বৈদেশিক ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র একটি ভিডিওচিত্র পরিবেশিত হয়।
এখন থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সম্প্রচারিত হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা ভাষায় প্রথম টেলিভিশন বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন ডিআইটি ভবনের নিচতলায় এনইসি (নিপ্পন ইলেকট্রনিক কোম্পানি) জাপানের সহযোগিতায় আত্মপ্রকাশ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার রাষ্ট্রপতির আদেশে বাংলাদেশ টেলিভিশনকে একটি সরকারি গণমাধ্যমে রূপ দেন। তিনি বলেন, জাতির পিতার নির্দেশে ১৯৭৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ডিআইটির ক্ষুদ্র পরিসর থেকে রামপুরার বৃহত্তর পরিম-লে বাংলাদেশ টেলিভিশন কেন্দ্র স্থানান্তর হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর আমিই প্রথম বেসরকারি পর্যায়ে টেলিভিশন স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি প্রদান করি। এ পর্যন্ত ৩২টি বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল স্থাপন ও পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বেসরকারি পর্যায়ে ২৩টি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে আছে। তিনি বলেন, আমরা বেসরকারি এফএম বেতার কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১০ প্রণয়ন করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য ও বিনোদন সরবরাহ এবং দেশীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি, পিআইডি, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর, গণযোগাযোগ অধিদফতর, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, ফিল্ম সেন্সর বোর্ড, পিআইবি, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট এবং বিএফডিসি কাজ করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সম্প্রচার ব্যবস্থা এনালগ থেকে সম্পূর্ণ ডিজিটালে রূপান্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বিএফডিসি-তে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রবর্তন’ শীর্ষক প্রকল্প সমাপ্তির পথে রয়েছে। সাংবাদিকদের পেশাগত মানোন্নয়নে পিআইবিতে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স কোর্স প্রবর্তন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমের উন্নয়নে তার সরকার গৃহীত পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ইনস্টিটিউটে চলচ্চিত্রবিষয়ক প্রথম কোর্স এবং টেলিভিশন বিষয়ক প্রথম কোর্স সমাপ্ত হয়েছে। গত ৮ বছরে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ১২ হাজারেরও বেশি সাংবাদিককে বিনাখরচে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আমি নিজ উদ্যোগেই সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছি। চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সম্প্রচার সময় বাড়ানোর ফলে চট্টগ্রামের স্থানীয় সংস্কৃতির বিকাশ আরও সহজ হবে বলেন, প্রধানমন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও বাঙালি সংস্কৃতিকে ধারণ করে বাংলাদেশ টেলিভিশন কাজ করছে। বিটিভি শুধু বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে নয় জনসচেতনতার মাধ্যম হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য ৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পায়। বিজয়ের এ মাসে সংস্কার ও আধুনিকায়ন শেষে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে ৬ ঘণ্টা সম্প্রচারে যাচ্ছে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র। সম্পাদনা: আনিসুর রহমান তপন