এমপি লিটনকে গুলি করে হত্যা
আমিনুর রহমান তাজ ও গাইবান্ধা থেকে রফিকুল ইসলাম: গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে তার নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এই ঘটনার পর লিটনের সমর্থকরা ‘বামনডাঙ্গা-নলডাঙ্গা’ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল সমাবেশ করে খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে সেøাগান দিতে থাকে। এমপির মৃত্যুর খবরে উপজেলার সব হাট-বাজার তাৎক্ষণিক বন্ধ হয়ে যায়।
এমপির স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি জানান, মাগরিব নামাজের পর অজ্ঞাত পরিচয় তিন যুবক তার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শাহাবাজ গ্রামের বাড়িতে প্রবেশ করে তার স্বামীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় তিনি বাড়ির ভেতরে টেলিভিশন দেখছিলেন। যুবকরা মোটরসাইকেলযোগে এসেছিল বলে তিনি জানান।
ঘটনার অপর প্রত্যক্ষদর্শী এমপির কর্মচারী জুয়েল বলেছে, ‘ঘাতকরা সংখ্যায় ৫ জন ছিল। তারা দুটো মোটরসাইকেল যোগে বাড়ির সামনে এসে নামে। এদের মধ্যে ৩ জন যুবক ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ারে বসা ‘স্যারকে’ লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ‘স্যার’ ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। এরপরই তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়’।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, এমপি লিটনের বাড়ির পাশে স্থানীয়রা একটি ইসলামী জলসার আয়োজন করেছিল। বাদ আসর শুরু হওয়া ওই জলসায় আশপাশের লোকজনসহ বহিরাগত লোকজনরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বলেছেন, তারা এমপির বাড়ির ভেতরে পর পর তিনটি গুলির আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন।
এমপি লিটনের শ্যালক বেদারুল আহসান জানান, সন্ধ্যায় তিন যুবক এমপি লিটনের বাড়িতে আসে। তারা তার কাছে এমপির অবস্থানের খবর জানতে চায়। একজন যুবক বাইরে রাখা স্টার্ট করা মোটরসাইকেলের সামনে দাঁড়িয়েছিল। বেদারুল আহসান বলেন, ‘এমপি সাহেব বাড়ির ভেতরে আছেন। একথা বলা মাত্রই তিন যুবক দ্রুত ঘরের ভেতরে ঢুকে তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। পরে তারা মোটরসাইকেল করে চলে যায়। তিন যুবকই মাথায় হেলমেট পরিহিত ছিল’।
এমপি লিটন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পরই রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি মারা যান। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. বিমল চন্দ্র রায় উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ‘এমপি লিটনকে বাঁচানোর চেষ্টায় তারা ব্যর্থ হয়েছেন’। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এমপির ডান হাতে দুটি এবং বুকের বাম পাশে একটি গুলি লেগেছে।
গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমি এমপি’ সাহেবের স্ত্রীর কাছ থেকে ফোন পেয়ে তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার সংবাদ পাই। কারা কি উদ্দেশ্যে এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে’।
অন্যদিকে সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আতিয়ার রহমান এমপি লিটনের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঘাতকদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। কি কারণে এমপিকে হত্যা করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ২ অক্টোবর এমপি লিটনের পিস্তলের গুলিতে আহত হয় গোপালচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শাহাদত হোসেন সৌরভ (১২)। এ ঘটনায় সৌরভের বাবা সাজু মিয়া বাদী হয়ে ৩ অক্টোবর এমপি লিটনকে একমাত্র আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।
গত ১৫ অক্টোবর গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকার উত্তরা থেকে তাকে আটক করে। ২৪ দিন জেলহাজতে থাকার পর গাইবান্ধা জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান লিটন।
এদিকে, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ২৪ দিন চিকিৎসা নিয়ে গত ২৬ অক্টোবর সৌরভ বাড়ি ফেরে। এ ঘটনার পরই আলোচিত হয়ে উঠেন এমপি লিটন।
৪৮ বছর বয়সী মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এবারই প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। তিনি একজন ডিপ্লোমা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। লিটন ‘আনন্দ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের’ পরিচালকও ছিলেন। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন