বিদায়ী বছর ২০১৬ তে যেসব ঘটনা নাড়া দিয়ে গেল
এস. ইসলাম জয়: নানা ঘটনা আর উন্নয়নের ছোঁয়ায় ২০১৬ পার করছে দেশের মানুষ। আর এই পারাপারের মাঝে কারও কারও প্রত্যাশার পালে দোলা লাগলেও অনেকের লাগেনি। এ বছরের প্রথম সপ্তাহ পার হতে না হতেই হয়েছিল ভূমিকম্প। ভোররাতে তীব্র ঝাঁকুনি। আতঙ্ক চারদিকে। ছয়জনের প্রাণ গেল। সেই হলো শুরু। তারপর বছরজুড়ে কত-কী ঘটল। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু ডজন দুয়েক মানুষের প্রাণ নিয়েছে। ফসল, অবকাঠামো তছনছ করেছে। বজ্রপাতের মুহুর্মুহু গর্জনে কানে তালি লেগেছে। শতাধিক মানুষ বেঘোরে মারা পড়েছে। সড়ক পরিণত হয় মৃত্যুর ফাঁদে। বছরের ১১ মাসে তিন হাজারের বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। বছরের শুরুর দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতা। আগুনে পুড়ে ছাই সুরসাধক ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিচিহ্ন। বছরের শেষ ভাগেও আলোচনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা। বিভিন্ন সময় দেশের অন্যান্য স্থানেও সাম্প্রদায়িক হামলা চলেছে। নভেম্বরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের উপর হামলায় সবাই হতভম্ব হয়েছে। ১ জুলাই রাতে গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গিদের নৃশংসতায় স্তম্ভিত হয় বাংলাদেশ। জঙ্গিরা ২০ জন দেশি-বিদেশিকে হত্যা করে। তাৎক্ষণিক অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন পুলিশের দুজন কর্মকর্তা। গুলশান হামলার দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাজা। বছরের শেষ প্রান্তে রাজধানীর আশকোনায় আত্মঘাতী নারী জঙ্গির আবির্ভাবে নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নানামুখী সমালোচনা সত্ত্বেও বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- থামেনি। দুঃসংবাদের এই ঘনঘটার মাঝে এসএ গেমসে সোনা জিতে বাংলাদেশকে আনন্দে ভাসিয়েছেন ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত, সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা ও শ্যুটার শাকিল আহমেদ। গৌরবের সেই মুহূর্তগুলো এখনো চোখে ভাসে। নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘে দুটি অ্যাওয়ার্ড পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তথ্যপ্রযুক্তিতে অবদানের জন্য ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। শুরু থেকে ‘কাটার মাস্টার’ মেস্তাফিজুর রহমান এক বিস্ময়ের নাম। ২০১৫-১৬ মৌসুমে আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন তিনি। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার সময় বন্ধুদের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে ফারাজ আইয়াজ হোসেন বিশ্বের সামনে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এখন ফারাজই বাংলাদেশ। এই বীর তরুণের আত্মদান দেশ-বিদেশে স্বীকৃতি পেয়েছে। মাদার তেরেসা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ফারাজ আমাদের সামনে মানবিকতা, সাহস ও আদর্শ তুলে ধরে গেছেন। তার এই মূল্যবোধ ধারণ করে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। গড়তে চাই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ। হানাহানি, রক্তপাত চাই না। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি চাই। শান্তি চাই। সব প্রাণে চাই ভালবাসা।
কুষ্টিয়া শহরতলীর এক নিভৃতপল্লী ফুলবাড়িয়া গ্রাম। গ্রামীণ মেঠো পথে মিশে থাকা এই অঞ্চলের মানুষের অন্যতম পেশা কৃষিকাজ। তাই জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন সকালে মানুষগুলোকে ছুটতে হয় কর্মক্ষেত্রে। তারপরও নতুন বছর ঘিরে কিছু প্রত্যাশার ডালি সাজিয়ে রাখেন তারা। আসছে বছর ঘিরে প্রত্যাশার শেষ নেই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের। চলতি বছর যে বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে খুব একটা ভাবা হয়নি। আসছে বছর সেগুলো সবার আগে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান অনেকেরই। যার মধ্যে আছে খুলনায় একটি বিমান বন্দর, পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ, মংলা বন্দরের উন্নয়ন ও ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে রক্ষায় নানা পরিকল্পনা। ২০১৬ সালে শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সরকার। আসছে বছর সেই ধারা অব্যাহত থাকবে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। অর্থনীতির একটি বড় চালিকাশক্তি ধরা হয় উত্তরাঞ্চলকে। ২০১৭ সালে সেই শক্তিকে আরও ত্বরান্বিত করার আহ্বান করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। বিদায়ী বছরের হিসেব চুকিয়ে আসছে বছরে ধরা দিবে নতুন নতুন সাফল্যÑ এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। আশার মধ্যে মানুষের ঘরবসতি। সেই আশায় বুক বেঁধে মনে-প্রাণে একটা শান্তি ও সমৃদ্ধির বছর চাই। ২০১৭ সালকে স্বাগত জানাই। সম্পাদনা: শারমিন আজাদ