প্রসঙ্গ : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তর মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে আগামীকাল
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্যাল স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা ও বর্তমানে যেখানে ট্রাইব্যুনালের কর্মকা- চলছে সেখানেই যাতে কর্মকা- পরিচালনা করা সম্ভব হয়, এ সংক্রান্ত আইন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ রক্ষা করা সম্ভব হবে কিনা এই ব্যাপারে নিশ্চিত নয় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়। কারণ এখানে তাদের করণীয় কিছুই নেই। তারা কেবল আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির তরফে সংযোগ রক্ষা করছে ও চিঠি লিখছেন। আন্তর্জান্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের তরফ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। সেই সময় দেওয়া হলে এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব উপরের নির্দেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে চিঠি দেন। রেজিস্ট্রিার জেনারেলের কার্যালয়ের সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠি রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে পৌঁছেছে সন্ধ্যা ছয়টার পর। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। ওই দিন অফিস সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় ও এরপর শুক্র ও শনিবার ছিল ছুটির দিন। এদিকে প্রধান বিচারপতিও ঢাকায় নেই। তিনি এখন অবস্থান করছেন মৌলভীবাজারে। তিনি সেখান থেকে রোববার ঢাকায় ফিরবেন। সোমবার অফিসে বসবেন। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলও রয়েছেন মৌলভী বাজারে। তিনিও একই দিন ফিরবেন। সোমবার অফিস বসবেন।
রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার প্রধান বিচারপতি অফিসে আসার পর আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এছাড়াও আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠিটি প্রধান বিচারপতির কাছে অফিসিয়ালি উপস্থাপন করা হবে। ওই ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, অফিস এই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন প্রধান বিচারপতি। তিনি যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত হচ্ছে ট্রাইব্যুনাল না সরানো, যেখানে আছে সেখানেই থাকবে, কর্মকা- পরিচালিত হবে, প্রধান বিচারপতি তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল আপাতত না সরানোর সুযোগ আইন মন্ত্রণালয়কে দিতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সোমবারের আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না। কারণ প্রধান বিচারপতি শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন কিনা কিংবা পুনর্বিবেচনা করে আইন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ রক্ষা করবেন কিনা সেই বিষয়ে কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।
আইন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (প্রশাসন) কাজী মুশফিক মাহবুব রবিন ২৯ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে তিনি লিখেছেন কেন ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তর করা যাবে না সেই প্রসঙ্গে। সেখানে বিভিন্ন যুক্তিও তুলে ধরেছেন।
এর আগে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তর করতে সরকারকে চিঠি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। যার জবাব দেওয়া হয় ২৯ ডিসেম্বর। তবে এর আগে এ নিয়ে আরও একবার চিঠি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সে সময়ও মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে সুপ্রিম কোর্টকে পাল্টা চিঠি দিয়েছিল। এছাড়া বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে বক্তব্যের সময়ও প্রধান বিচারপতি ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা ৫ এর সিনিয়র সহকারী সচিব কাজী মুশফিক মাহবুব রবিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, পুরাতন হাইকোর্ট ভবনটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। এ ভবনটি পূর্ব বাংলা ও আসামের প্রদেশের গভর্নর-এর সরকারি বাসভবন হিসেবে নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে এই ভবনটিকে পূর্ব পাকিস্তানের হাইকোর্টে রূপান্তর করা হয়। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘঠিত অপরাধসমূহ যেমন: যুদ্ধপরাধ, গণহত্যা, ধর্ষণ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িতদের বিচারকার্য পরিচালনা করার জন্য বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় অন্য কোথাও যৌক্তিক এবং নিরাপদ স্থান না পাওয়ায় সরকার পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করেন। উল্লেখ্য, ২০০৯ খ্রি: পর্যন্ত এ ভবনের একটি অংশে আইন কমিশন ও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অফিস হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। আইন কমিশন ও বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন ১৫, কলেজ রোড, ঢাকা ঠিকানায় স্থানান্তর করে উক্ত ভবনটিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হিসাবে ব্যবহার উপযোগী করণের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়। আরও লেখা হয়, ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্য শুরুর পর অনেক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ সুসম্পন্ন হয়। সে কারণে এই ভবনটির ঐহিত্য ও গুরুত্ব বহগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ চায় ঐতিহাসিক এ ভবনটির মর্যাদা সমুন্নত রেখে অত্র ভবনেই যুদ্ধারপরাধীদের বিচার কাজ অব্যাহত থাকুক। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ ভবন হতে অন্যত্র সরানো হলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে এবং সর্বজনগ্রাহ্য হবে না বরং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দেশবাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
আরও বলা হয়েছে, উপরোল্লিখিত সকল বিষয়ে বিবেচনা পূর্বক পুরাতন হাইকোর্ট ভবন হতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তর করে ভবনটি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অনুকূলে দখল হস্তান্তর করা সমীচীন হবে না। আরও বলা হয়েছে, এমতাবস্থায় সূত্রোক্ত পত্রের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আপনাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিচার কাজ অব্যাহত রাখা এবং বিচারের ও ভবনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করে সুপ্রিম কোর্ট আমাদের চিঠির প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করে এখন যেখানে বিচারকাজ চলছে সেই বিচার করার সুযোগ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। ঐতিহাসিক গুরুত্বের পাশাপাশি এখানে জনগণেরও মনোভাবের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী সামগ্রিক বিষয়টি বিবেচনা করেই সুপ্রিম কোর্ট তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে। এখন যেভাবে কাজ চলছে তা অব্যাহত রাখার সুযোগ দিবে ও ভবন হস্তান্তর করার জন্য আর বলবে না। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন