সাড়ে ৪ কোটি টাকায় দুশতাধিক ভোট অভিযোগ করেও ফল হয়নি
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: জেলা পরিষদের নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি ছিল এই রকম কথা নানাভাবেই ছড়াচ্ছিল। নির্বাচন কমিশনের কাছেও কিছু অভিযোগ এসেছে। প্রার্থীদের কেউ কেউ এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো ফল পায়নি। এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব টাকা ছড়ানোর বিষয়ে কেউ স্বীকার করেননি। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে, জেলা পরিষদের নির্বাচনে টাকা ছড়ানোর বিষয়টি এবার অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতিও দেওয়া হয়। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদকও বলেছেন, নির্বাচনে টাকার প্রভাব আছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আর তা না থাকলেও যেসব প্রার্থী টাকা ছড়িয়েছেন তাদের ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুবিধা হয়নি। বরং এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো পাত্তাই দেয়নি। এমনকি চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলেও এই ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগের একটি জেলার দুই উপজেলাতে লন্ডন প্রবাসী দুই প্রার্থী টাকা ছড়িয়েছেন বলে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন। ওই জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছাড়াও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীও ছিলেন। বিদ্রোহী দুজনই লন্ডন প্রবাসী। লন্ডনে তারা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। এছাড়াও সেখানে মার্র্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ও ওই জেলার একটি আসনের সাবেক সংসদ সদস্যও স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। সেখানে ধনাঢ্য প্রার্থীদের প্রাধান্য ছিল।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সেখানে জয়ী হবেন আর না হলে ওই স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হবেন এটাই ছিল ভোটারদের হিসাব-নিকাশ। জনগণের এই নির্বাচনে ভোট না থাকলেও তাদের হিসাব-নিকাশও সেই রকম ছিল। কিন্তু সেই হিসাবে সরকারি দলের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পরাজিত হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে সেখানে জানা গেছে, ওই জেলায় লন্ডন প্রবাসী দুজন নেতা অংশ নেন। তাদের টাকার ছড়াছড়িতে স্বতন্ত্র প্রার্থী কম ভোট পান।
জয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী পেয়েছেন ৩৫০ ভোট। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী পেয়েছেন ৩০৫ ভোট। সেখানে সরকারি দলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর ছিল। তাদের টাকা ছড়ানোর প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু ওই দুই প্রবাসীর একজন বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যানদের ভোট পাওয়ার জন্য ব্যয় করেছেন এক এক ভোটের জন্য দুই লাখ টাকা। আর মেম্বারদেরকে একটি ভোট দেওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকা করে। অভিযোগ রয়েছে, এভাবে একজন প্রার্থী এক উপজেলার ১৩৩ ভোট, আর আরেক উপজেলার ৭০টি ভোট কিনে নিয়েছেন। একজন প্রার্থী টাকা দিয়েছেন তবে টাকা দিয়েও ভোট কিনতে পারেননি। নিজের ও তার পরিবারের ভোটসহ মোট ভোট পেয়েছেন ৩০ ভোট।
ওই জেলার একজন প্রার্থী বলেন, কিছু উপজেলার চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা রয়েছেন যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নন। তাদের সামনে যখন একটি ভোটের জন্য ৫০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে তখন তারা নগদে লাভ নিয়েছেন। তিনি বলেন, লন্ডন প্রবাসী প্রার্থী সাড়ে চার কোটি টাকা খরচ করেছেন ভোট কেনার জন্য। এই জন্য তিনি পাঁচ কোটি টাকার একটি এফডিআরও ভাঙিয়েছেন ভোটের আগে। ভোটের দুদিনে এই সাড়ে চার কোটি টাকা ছড়ানো হয়। আর এতে করে ভোটের হিসাব উল্টে যায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা থাকলেও তিনি টাকায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে পরাজিত হন। আর জয়ী হন সরকারি দলের প্রার্থী।
এ ব্যাপারে ওই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নগদ টাকা দিয়ে ভোট কিনে নিয়েছেন ওই দুই প্রার্থী। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক, রিটার্নিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও জানানো হয়েছে। তাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে কিন্তু তারা বিষয়টি আমলে নেননি এবং কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ কারণে বলা যায়, টাকার বিনিময়ে দুদিন আগে ভোট ডাকাতি হয়েছে। তিনি বলেন, আমার জয়ী হওয়া না হওয়াটা বড় বিষয় না। কিন্তু যেভাবে নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি হলো এটা প্রশাসনকে অভিযোগ করে ও জানিয়েও কোনো লাভ হলো না সেটাই সমস্যা। যদি তারা অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যবস্থা নিতেন তাহলে এ ধরনের পরিস্থিতি হতো না। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে অর্থ একটি বড় অন্তরায়। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন